শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে সপ্তাহের প্রথম দিনেই প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে রাজধানীর কয়েকটি সড়ক। সায়েন্স ল্যাব, কাঁটাবন, শাহবাগ, নিউমার্কেট, গ্রিন রোড এবং ধানমন্ডি সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। স্কুল ফেরত শিশু ও অসুস্থ ব্যক্তিদের চলাফেরায় সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
চতুর্থ বর্ষের ফল প্রকাশসহ পাঁচ দফা দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাতটি কলেজের শতাধিক শিক্ষার্থী আজ রোববার সকাল সোয়া নয়টার দিকে রাজধানীর নিউমার্কেট ক্রসিংয়ে সড়ক অবরোধ করলে এ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়।
দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা দড়ি দিয়ে গোটা নীলক্ষেত চত্বর ঘিরে রেখেছেন। কোনো যানবাহন এবং পায়ে হাঁটা মানুষ, কেউই নীলক্ষেত এলাকা দিয়ে চলাচল করতে পারছে না। শিক্ষার্থীদের পক্ষে একজন মাইকে বিভিন্ন দাবির কথা বলছেন এবং স্লোগান দিচ্ছেন। তাঁর পাশে কয়েকজন শিক্ষার্থী তাঁদের দাবির পক্ষে লিফলেট বানিয়ে তা হাতে ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। প্রচণ্ড রোদের কারণে অনেক শিক্ষার্থী মাথায় রুমাল দিয়ে রাস্তায় বসে আছেন। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের টানানো দড়ি ভেদ করে যেন কেউ চলাচল করতে না পারে সে জন্য কয়েকজন শিক্ষার্থীকে তৎপর দেখা গেল। এভাবে পথ আটকানোর কারণে স্কুল ফেরত শিশু ও অভিভাবকদের বিপাকে পড়তে হচ্ছে।
দুই শিশুকে নিয়ে বিপাকে পড়া এক অভিভাবক বলেন, শিশুদের স্কুল থেকে নিয়ে রওনা দিয়েছেন আরও দুই ঘণ্টা আগে। রাস্তায় আটকে ছিলেন গোটা সময়। এখন নীলক্ষেত মোড় পার হতে পারছেন না। আজিমপুর যাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছে অনেক অনুরোধ করলেও তারা যেতে দেয়নি।
আজিমপুর, আসাদগেট ক্রসিং এবং সায়েন্স ল্যাব সিগন্যাল থেকে নিউমার্কেটের দিকের সড়ক বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। বিভিন্ন পথের যানবাহন একই সড়কে চলাচল করায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। দুপুরে গ্রিন রোড এলাকায় পান্থপথ থেকে প্রায় সায়েন্স ল্যাব পর্যন্ত যানজট দেখা গেছে। কলাবাগান থেকে সায়েন্স ল্যাব সড়কেও বড় ধরনের যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। নীলক্ষেতের দিকে গাড়ি চলতে না পারায় এসব গাড়ি চলতে হচ্ছে এলিফ্যান্ট রোড হয়ে। এ পথেও গাড়ির জট তৈরি হয়েছে অনেক বেশি।
এদিকে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান নীলক্ষেত মোড়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করেন। সেখানে তিনি শিক্ষার্থীদের কাছে নভেম্বর পর্যন্ত সময় চান এবং একটি কমিটি করে যত দ্রুত সম্ভব ফল প্রকাশের আশ্বাস দেন। পরে তিনি শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়ে তাদের ফেরানোর চেষ্টা করেন। যদিও শিক্ষার্থীরা তাঁর কথা না শুনে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন। এরপর উপাচার্য ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
দুপুরে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা বলেন, চতুর্থ বর্ষের স্নাতক পরীক্ষার ফল প্রকাশসহ পাঁচ দফা দাবিতে তাঁরা সকাল নয়টা থেকে নীলক্ষেতের মোড়ে অবস্থান নিয়েছেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোর চতুর্থ বর্ষের ফল গত মে মাসে প্রকাশিত হয়েছে। অথচ তাঁদের ফল এখনো প্রকাশ না হওয়ায় তাঁরা স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারছেন না। এ ছাড়া বিসিএস পরীক্ষায় আবেদন করা ছাড়া তারা কোনো নিয়োগ পরীক্ষায় আবেদন করতে পারেননি।গত বৃহস্পতিবার তাঁরা পাঁচ দফা দাবিতে শহীদ মিনারে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছিলেন। ফল প্রকাশ ছাড়া অন্য দাবির মধ্যে রয়েছে, ১ হাজার ২০০ ছাত্রের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার, একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ, তৃতীয় বর্ষের রুটিন প্রকাশ করা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজের জন্য স্বতন্ত্র ওয়েবসাইট খোলা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের নিউমার্কেট অঞ্চলের সহকারী কমিশনার আনিসউদ্দীন বাহাদুর বলেন, সকাল সোয়া নয়টার দিকে তাঁরা সড়ক অবরোধ করেন। তাঁদের বুঝিয়ে রাস্তা খালি করার চেষ্টা করা হয়েছে। আজিমপুর ও সায়েন্স ল্যাবে বিকল্প (ডাইভারশন) সড়কে যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অন্য কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা সাতটি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার ঘোষণা দেওয়া হয়। এই সাত কলেজ হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। এসব কলেজে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ১ লাখ ৬৭ হাজার ২৩৬ জন শিক্ষার্থী ও ১ হাজার ১৪৯ জন শিক্ষক রয়েছেন। পরে এসব কলেজের শিক্ষা কার্যক্রমে অব্যবস্থাপনা শুরু হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সিদ্ধান্ত সমালোচিত হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আসার পরে পরীক্ষা ও ফল প্রকাশ নিয়ে নিয়ে নানা জটিলতা তৈরি হয়। পরীক্ষার সময়সূচি (রুটিন) না দেওয়ায় গত জুলাই মাসে শিক্ষার্থীরা প্রথম দফায় আন্দোলনে নামে। গত ২০ জুলাই পরীক্ষার রুটিনসহ পাঁচ দফা দাবিতে শাহবাগে বিক্ষোভের সময় পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের ছোড়া টিয়ার শেলের আঘাতে চোখ হারান তিতুমীর কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সিদ্দিকুর রহমান। ওই বিক্ষোভের ২৩ দিনের মাথায় পরীক্ষার রুটিন দেওয়া হলেও চোখে আলো ফেরেনি সিদ্দিকুরের।