সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের ‘ঐতিহাসিক’ রাশিয়া সফরে অস্ত্র এবং জ্বালানি নিয়ে চুক্তি করেছে দুই দেশ। গত বৃহস্পতিবার এই চুক্তি স্বাক্ষর করেন সৌদি বাদশাহ সালমান ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
এটি কোনো সৌদি রাষ্ট্রপ্রধানের প্রথম রাশিয়া সফর। সৌদি আরব ও রাশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল রপ্তানিকারক দেশ। এই সফরে তেল উৎপাদন ও রপ্তানি নিয়ে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছে দুই দেশ। বিশ্বব্যাপী তেলের দাম পড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তেল উত্তোলনের পরিমাণ হ্রাসের জন্য ওপেক চুক্তিকে আরও সম্প্রসারিত করতে আগ্রহী মস্কো ও রিয়াদ।
সৌদি অ্যারাবিয়ান মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিজ জানিয়েছে, রাশিয়া থেকে বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এবং ট্যাংক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র কিনতে প্রাথমিকভাবে চুক্তি করা হয়েছে।
রুশ দৈনিক কোমেরসান্ত-এর বরাতে ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য ইনডিপেনডেন্ট বলেছে, রাশিয়া সৌদি আরবকে সর্বাধুনিক বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এস-৪০০ সরবরাহ করবে। এ লক্ষ্যে ৩০০ কোটি ডলারের চুক্তির ব্যাপারে সমঝোতা হয়েছে। অক্টোবরের শেষ দিকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বৈঠকের পরে এ নিয়ে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। আলোচনা সফল হলে, সামনে বিমান ও হেলিকপ্টার কেনার চুক্তিও হতে পারে।
এ ছাড়া বিনিয়োগ চুক্তি হয়েছে দুই দেশের মধ্যে। ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করা হবে জ্বালানি প্রকল্প বাস্তবায়নে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ এবং ইরান ইস্যুতে মস্কো ও রিয়াদের অবস্থান ভিন্ন। সে বিষয়েও আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে। সফরে ইরান ইস্যুতে রাশিয়ার সহযোগিতা চাইবে সৌদি আরব।
মস্কোর প্রধান প্রধান সড়কে বাদশাহ সালমানকে অভ্যর্থনা জানিয়ে আরবি ও রুশ ভাষায় বিলবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। নিজ বাসভবনে ক্রেমলিনে বাদশাহ সালমানকে অভ্যর্থনা জানান পুতিন। বৈঠকে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আপনার (বাদশাহ সালমান) সফর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।’
বাদশাহ সালমান আশাবাদ ব্যক্ত করেন, বিশ্বব্যাপী তেলের বাজার স্থিতিশীল রাখতে এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য কাজ করবে দুই দেশ।
সৌদি আরব বহু বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশ। তাদের সামরিক ক্রয়ও যুক্তরাষ্ট্রনির্ভর। কিন্তু এবারই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়ার সঙ্গে সামরিক ক্রয়সংক্রান্ত চুক্তি করল সৌদি আরব। সিরিয়া সংকটে অন্যতম ভূমিকা পালনকারী দেশ রাশিয়া। এ ছাড়া তেল উৎপাদনেও বৃহৎ রাষ্ট্র। তেলের দামের ক্ষেত্রে দেশটির ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। ফলে মস্কোর সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে আগ্রহী হয়ে উঠেছে রিয়াদ।
১ হাজার ৫০০ সফরসঙ্গী
ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, রাশিয়া সফরে বাদশাহ সালমানের সঙ্গে রয়েছে দেড় হাজার সঙ্গী। সঙ্গে সোনার তৈরি চলন্ত সিঁড়ি ও বিশেষ কার্পেটও রয়েছে। উড়োজাহাজ থেকে নামার সময় তিনি ব্যবহার করেন সোনার তৈরি চলন্ত সিঁড়ি। এ সময় সিঁড়ি নষ্ট হয়ে গেলে, সিঁড়ি ভেঙেই নামতে হয় ৮১ বছর বয়সী বাদশাহকে। পরে রুশ পুলিশের গাড়িবহর তাঁকে মস্কোর ভেতরে নিয়ে যায়।
বাদশাহ সালমান যে হোটেলে আছেন, সেখানে তিনি নিজস্ব আসবাব ব্যবহার করছেন। এগুলো সৌদি আরব থেকে নিয়ে এসেছেন তিনি।