২০১৭ সালের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন জাপানী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ উপন্যাসিক ও ছোটগল্পকার কাজুরো ইশিগুরো। সুইডিশ একাডেমি তাঁর প্রশংসায় বলেছে, ‘জোরালো আবেগীয় শক্তির’ প্রকাশ ঘটে তাঁর উপন্যাসে, যেখানে ‘দুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের কাল্পনিক অনুভূতির তলার হাহাকার’ প্রকাশিত হয়।
ইশিগুরো ব্রিটিশ উপন্যাসিক, চিত্রনাট্যকার এবং ছোটগল্পকার। জাপানের নাগাশাকি শহরে তাঁর জন্ম, ১৯৫৪ সালে। তাঁর বয়স যখন পাঁচ তখন পরিবারের সঙ্গে ইংল্যান্ডে আসেন। ইংরেজিভাষী জগতের অন্যতম নন্দিত লেখক তিনি। চারবার খ্যাতিমান ম্যান বুকার পুরস্কার অর্জন করেছিলেন তাঁর চারটি উপন্যাসের জন্য। দ্য টাইমস ম্যাগাজিন তাঁকে ১৯৪৫ সালের পরের শ্রেষ্ঠ ৫০ জন ব্রিটিশ লেখকদের তালিকায় ৩২তম বলে সম্মান জানিয়েছিল। তাঁর শেষ উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় ২০১৫ সালে, ‘দ্য ব্যুরিড জায়ান্ট’ (সমাহিত দানব) নামে। তবে নোবেল সাহিত্য পুরস্কার কোনো একটি সাহিত্যকর্মের জন্য নয়, লেখকের সামগ্রিক সাহিত্যকীর্তির জন্য দেওয়া হয়ে থাকে। ১১৪ বছর আগে প্রবর্তিত স্যার আলফ্রেড নোবেলের নামে দেওয়া এই পুরস্কারের প্রবক্তা আলফ্রেড নোবেলের ভাষায়, ইশিগুরো মানবজাতিকে গভীর নৈতিক অবস্থানের দিকে প্রভাবিত করেন।
ইশিগুরোর নোবেল পুরস্কার বিজয় বিশ্বসাহিত্য পাঠকদের কাছে এক চমক। সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা হতাশ করে থাকবে জাপানি লেখক হারুকি মোরাকামি, কিংবা কেনীয় লেখক ন্গুগি ওয়া থিয়াং কিংবা চেকোস্লাভাকিয়ান লেখক মিলান কুন্ডেরার কিংবা আরেক ব্রিটিশ সাহিত্যিক মার্গারেট অ্যাটউডের ভক্তদের। বরাবরের মতো ব্রিটিশ উপন্যাসিক সালমান রুশদি এবারেও তাঁর কাঙ্ক্ষিত পুরস্কারটি পেলেন না।
গত বছরে মার্কিন গীতিকার বব ডিলানের এই পুরস্কার পাওয়ায় যে বিতর্ক ও বিস্ময় ছিল, একজন ব্রিটিশ সাহিত্যিককে পুরস্কৃত করে নোবেল একাডেমি পুরস্কারটিকে আবার সনাতন সাহিত্য ঘরানায় ফিরিয়ে নিয়ে এল।
কাজুরো ইশিগুরোর উপন্যাসে ফিরে ফিরে আসে অতীত। যেমন তাঁর দ্য রিমেইনস অব দ্য ডে অথবা নেভার লেট মি গো সুইস একাডেমির ভাষায় ‘খুবই পরিমিত প্রকাশভঙ্গি, যা-ই ঘটুক কাহিনিতে লেখকের ভাষা থাকে নির্বিকার’। এই পুরস্কার ইশিগুরোকে সিমাস হানি, টনি মরিসন, মো ইয়ান, পাবলো নেরুদা, গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কুয়েজদের সারিতে উঠিয়ে আনলো।
ইশিগুরোর উপন্যাসের একটা বৈশিষ্ট্য হলো তা কোনো সমাধানে পৌঁছায় না। তাঁর চরিত্ররা অতীতে যে সমস্যা-সংঘাতে পড়ে, তা অমীমাংসিতই থেকে যায়। বিষণ্নতায় শেষ হয় তাঁর কাহিনি।