রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ প্রবীণ ব্যক্তিদের দেশের সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে ঘোষণা দিয়ে তাদের মর্যাদা ও নিরাপত্তা এবং খাদ্য, বস্ত্র ও চিকিৎসাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি আজ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে বলেন, সমাজ ও রাষ্ট্রে অবদান রাখার জন্য শ্রদ্ধা প্রদর্শনে আমি সমাজের সকল প্রবীণদের দেশের সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে ঘোষণা করছি। দেশের প্রবীণদের সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে ঘোষণা দিতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। রাষ্ট্রপতি বলেন, চিকিৎসা বিজ্ঞানের অসাধারণ অগ্রগতি আয়ু বৃদ্ধিতে সহায়ক হওয়ায় সমাজে প্রবীণদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বলেন, দেশে প্রবীণদের সংখ্যা এক কোটি ৩০ লাখ এবং এই সংখ্যা ২০২৫ সাল নাগাদ দাঁড়াবে এক কোটি ৮০ লাখ ও ২০৫০ সাল নাগাদ দাঁড়াবে চার কোটিতে।
এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে প্রবীণ লোকদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশে পৌঁছাবে, এটি ভবিষ্যতে দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যসেবার জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে। প্রবীণদের পরিবার ও সমাজের পাশাপাশি রাষ্ট্রের মূলধারায় রাখার প্রতি জোর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, হাসপাতাল, ব্যাংক, অফিস ও আদালতসহ সকল নাগরিক সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রবীণদের অগ্রাধিকার দিতে সমাজের দায়বদ্ধতা রয়েছে। সমাজে ও রাষ্ট্রে প্রবীণদের অবদানের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রবীণরা সমাজের মর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তি এবং তারা তাদের জীবনের সোনালী দিনগুলোতে পরিবার, সমাজ ও দেশ গঠনে কাজ করেছেন। তবে এখন প্রবীণদের শ্রদ্ধা-ভালোবাসা কমছে এবং তারা এখন তাদের নিজেদের পরিবার কর্তৃত্ব ও মর্যাদা হারাচ্ছেন। তিনি বলেন, আর্থিক সংকট ও চিকিৎসা সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে বঞ্চিত হওয়ার কারণে প্রবীণ ব্যক্তিরা সামাজিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রবীণদের কল্যাণে সরকার অনেকগুলো কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। ১৯৯৭-৯৮ সাল থেকে বয়স্ক ভাতা চালু করা হয়েছে এবং এ ধরনের ভাতাপ্রাপ্তদের সংখ্যা বেড়ে ৪ লাখ থেকে ২৭ লাখ ২২ হাজারে দাঁড়িয়েছে এবং ভাতা ১০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রবীণ ব্যক্তিদের কল্যাণে মন্ত্রিসভা দি ন্যাশনাল পলিসি অন এলডারলি ২০১৩ অনুমোদন করেছে জেনে আমি এখানে এসেছি। সরকার অবশ্য ‘ফিডিং অ্যান্ড লজিং টু প্যারেন্টস অ্যাক্ট, ২০১৩ প্রণয়ন করেছে এবং এই আইনের আওতায় সন্তানরা তাদের পিতামাতা খাবার ও বাসস্থান নিশ্চিত করতে বাধ্য।
প্রবীণদের পুনর্বাসনে প্রবীণ হিতৈষী সংঘ সেন্টার, রিটায়ার গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন ও রিসোর্স ইন্ট্রিগেশন সেন্টারের মত বেশ কয়েকটি সংস্থা প্রবীণদের কল্যাণে কাজ করছে জেনে রাষ্ট্রপতি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। রাষ্ট্রপতি সরকারি ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কর্মসূচির অধীনে দেশের প্রবীণদের কল্যাণে কার্যক্রম গ্রহণের আহ্বান জানান।