ফার্গুসন সংকটে বিপাকে ওবামা

সারাবিশ্ব

image_156139.obama-5যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের ফার্গুসন শহরে যে ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে তার আঁচ লাগছে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার গদিতে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হিসেবে বারাক ওবামার নির্বচন দেশের বিপজ্জনক বর্ণ-বিভাজন ঘুচাতে একটি প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে বলে আশার সঞ্চার করেছিল। কিন্তু ফার্গুসনের সেন্ট লুইস শহরতলিতে বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যকার সংঘর্ষের ঘটনায় ওবামার সতর্ক অবস্থান প্রমাণ করেছে যে বর্ণের ইস্যু যখন সংকট বাড়িয়ে তোলে তখন ওবামা অতি সাবধানে পা ফেলেন। ওবামার আমলেই নিরস্ত্র কৃষ্ণাঙ্গ তরুণকে গুলি করে হত্যার পর অভিযোগ থেকে শ্বেতাঙ্গ পুলিশের অব্যাহতি ভালো চোখে দেখছে না দেশটির কালো মানুষেরা। এ ঘটনা বর্ণবৈষম্যের পুরনো ক্ষতকেই যেন জাগিয়ে তুলেছে। পুরো বিষয়টি নিয়ে বেশ অস্বস্তি ও সংকটে পড়েছেন ওবামা। তার প্রতি কৃষ্ণাঙ্গদের আস্থায় স্পষ্টত চিড় ধরছে। এটি বোঝার পরও সাদা-কালো-বাদামি সব মানুষের প্রেসিডেন্ট হিসেবেই নিজের অবস্থান ধরে রাখতে সচেষ্ট তিনি।
৯ আগস্ট ১৮ বছরের কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ মাইকেল ব্রাউন পুলিশের গুলিতে নিহত হন। নিরস্ত্র ব্রাউনকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে প্রতিবাদ শুরু হয় তখনই । এরপর এ ঘটনায় গ্র্যান্ড জুরি শ্বেতাঙ্গ পুলিশ সদস্য ব্রাউনের হত্যাকারী ড্যারেন উইলসনকে অভিযুক্ত না করার সিদ্ধান্ত নিলে সোমবার রাতে ফার্গুসনে ব্যাপক সহিংসতা শুরু হয়। বোস্টন, নিউ ইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস, ডালাস, আটলান্টা অঙ্গরাজ্যসহ অন্যান্য নগরেও ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভ। দেশজুড়ে গণবিক্ষোভ দেখা দেয়। পরিস্থিতি সামালাত আধা-সামরিক বাহিনীর দুই হাজারেরও বেশি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানান মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের গভর্নর জে নিক্সন। ফার্গুসন শহরের সেন্ট লুইস শহরতলি থেকে চার শতাধিক বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়। অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেয়ে এবিসি নিউজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে পুলিশ সদস্য ড্যারেন উইলসন বলেছেন, ‘আমি জানি, আমি ঠিক কাজ করেছি।’ তার এমন বক্তব্য কৃষ্ণাঙ্গদের ক্ষোভের আগুনে যেনো আরও ইন্ধন জুগিয়েছে।
সোমবার গ্র্যান্ড জুরির সিদ্ধান্তের ফার্গুসনে লুপপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন ওবামা। তিনি বলেন, এ ধরনের কাজ যারা করেছে, তারা অপরাধী। তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে। ওবামার এ কথা ক্ষুব্ধ করেছে কৃষ্ণাঙ্গদের। ওবামার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে কৃষ্ণাঙ্গদের অবদানের কথা সবার জানা। নানা বৈষম্যের শিকার মার্কিন কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠী ভেবেছিল, ওবামা তাদের কষ্ট বুঝতে পারবেন। তাদের উন্নয়নে কাজ করবেন। কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডের পর ওবামার প্রতি তাদের এ আস্থা যেনো খানিকটা হ্রাস পেয়েছে। বর্ণবাদ উসকে উঠতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকে ওবামা এখন পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করছেন। তিনি কোনো পক্ষে না গিয়ে নিজেকে সবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে সামনে রাখতে চাইছেন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। এমন পরিস্থিতিতে ওবামার এই কৌশল কতটা ফল দেবে, সেটাই দেখার বিষয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *