ময়মনসিংহের গৌরীপুরে চুরির অভিযোগে কিশোর মো. সাগরকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার প্রধান আসামি আক্কাস আলী প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
র্যাব-১৪ ভৈরব ক্যাম্প সূত্র জানায়, ওই ক্যাম্পের সদস্যরা বৃহস্পতিবার রাতে কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে আক্কাসকে গ্রেপ্তার করেন। এরপর তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আক্কাস জানান, তাঁর হ্যাচারির নাম গাউছিয়া হ্যাচারি। মালিক তিনি একা নন। তাঁর ভাইসহ আরও কয়েকজন প্রতিষ্ঠানটির মালিক।
আক্কাস র্যাবকে বলেন, তিনি শুনতে পান পানি তোলার মোটর চোর ধরা পড়েছে। তিনি চোর সন্দেহে আটক করা সাগরকে হ্যাচারির সাইনবোর্ডের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখার নির্দেশ দেন। তাঁর নির্দেশে সাগরকে খুঁটির সঙ্গে বাঁধা হয়। পরে আক্কাস এসে কাঠ দিয়ে সাগরকে পেটাতে থাকেন। কিছুক্ষণ পর তাঁর ভাই জুয়েল এসে নির্যাতনে অংশ নেন। এ সময় আক্কাস নির্যাতন থেকে বিরত ছিলেন।
আক্কাস বলেন, কিছু সময়ের ব্যবধানে আসেন কাইয়ুম, হাসু, সোহেল এবং সাত্তারসহ আরও চার ব্যক্তি। ওই চারজন আক্কাসের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। তাঁরাও পালা করে নির্যাতন চালান। খবর পাওয়ার স্থানীয় বেশ কয়েকজন ঘটনাস্থলে আসেন। তাঁদের কেউ কেউ নির্যাতন না করতে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। তবে সে অনুরোধে কেউ সাড়া দেননি। মুঠোফোনে কয়েকজন নির্যাতনের ভিডিও করেন। যাঁরা ভিডিও করছিলেন, তাঁদের কেউই নির্যাতন থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করেননি। নির্যাতনের একপর্যায়ে সাগর জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তখন তারা সাগরকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেন। হাসপাতালে নেওয়ার পথে সাগরের মৃত্যু হয়েছে বুঝতে পেরে লাশটি ফেলে পালিয়ে যান তাঁরা।
র্যাব-১৪ ভৈরব ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মেজর শেখ নাজমুল আরেফিন আজ শুক্রবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, চুরির অভিযোগে নির্যাতন করে সাগরকে হত্যার ঘটনাটি গণমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ার পর সারা দেশের মানুষের দৃষ্টি কাড়ে। র্যাবও হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে অভিযানে নামে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব নিশ্চিত হয়, আত্মগোপনের উদ্দেশ্যে আক্কাস ভৈরব হয়ে সিলেটে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এর ভিত্তিতে র্যাব-১৪ ময়মনসিংহ ও ভৈরব কার্যালয়ের সদস্যরা বৃহস্পতিবার ভৈরবে যৌথ তল্লাশি ক্যাম্প চালু করেন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে শম্ভুপুর রেলক্রসিং এলাকায় আক্কাস দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় র্যাব তাঁকে আটক করে।