রাখাইন থেকে প্রাণভয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের সমাধানে মিয়ানমার সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর চলা মানবিক বিপর্যয়ের নিন্দা জানান তিনি। গুতেরেস রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযান বন্ধ ও মানবাধিকার কর্মীদের প্রবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানান।
স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের উন্মুক্ত আলোচনায় আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, শরণার্থী পরিস্থিতি সংকটের দিকে যাচ্ছে। মানবিক বিপর্যয় ঘটছে।
গুতেরেস সতর্কতা জারি করে বলেন, রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলে মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যে সহিংসতা চলছে তা কেন্দ্রেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। এতে সেখানকার আরও আড়াই লাখ মানুষের গৃহহারা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
নিরাপত্তা পরিষদের আলোচনায় গুতেরেস আরও বলেন, রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা নারী, পুরুষ ও শিশুদের কাছ থেকে ভয়াবহ বর্ণনা শুনেছে বিশ্ববাসী। সেখানে সহিংসতা এবং মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন হচ্ছে। মানুষকে গুলি করা হচ্ছে, মাটিতে পুঁতে রাখা বোমা ব্যবহার করা হচ্ছে ও যৌন সহিংসতা চলছে।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়, গুতেরেস অবিলম্বে মানবিক ত্রাণের আহ্বান জানান।
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি নিকি হেলি রাখাইনের পরিস্থিতি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত মিয়ানমারের কাছে অস্ত্র বিক্রি না করার আহ্বান জানিয়েছেন।
নিরাপত্তা পরিষদের অধিকাংশ সদস্যই মিয়ানমারে জাতিগত নিধন ও গণহত্যা বিবরণ তুলে ধরেন। তবে মিয়ানমার প্রতিনিধি এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
১৩ সেপ্টেম্বরের পর এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো রোহিঙ্গা পরিস্থিতি আলোচনা চলছে নিরাপত্তা পরিষদে। রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন বন্ধের জন্য নিরাপত্তা পরিষদের কাছে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব আশা করেছে বাংলাদেশ। তবে উন্মুক্ত আলোচনার পর ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদ সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাব দেয়নি।
রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতা নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের সাত সদস্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, সুইডেন, মিসর, কাজাখস্তান ও সেনেগাল ২৩ সেপ্টেম্বর এই আলোচনার প্রস্তাব দেয়।
মহাসচিব গুতেরেস অধিবেশনের শুরুতে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বিস্তারিত বিবরণ দেন। তিনি গণমাধ্যমে প্রকাশিত রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো নির্যাতন ও সহিংসতার খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
নিরাপত্তা পরিষদের সভায় জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন উপস্থিত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান তুলে ধরে বক্তব্য দেন। বিবিসি, এএফপি ও রয়টার্স