রোহিঙ্গাদের বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত ও বন্ধুহীন মানুষ বলা হয়। গত এক মাসের ঘটনাপ্রবাহ এই ধারণাকে সঠিক প্রমাণ করছে। নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে জাতিসংঘ ও ইউরোপ, এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদ থেকে মিয়ানমারকে আহ্বান জানানো হয়েছে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো সহিংসতা বন্ধের জন্য। জাতিসংঘ এটিকে জাতিগত নিধন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। তবুও থামছে না মিয়ানমারের সহিংসতা।
ইউরোপের মধ্যে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স সবার আগে রোহিঙ্গা নির্যাতন নিয়ে সমালোচনা করেছে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ বলেছেন, মিয়ানমারে সামরিক অভিযান বন্ধে এবং মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে কাজ করবেন তিনি। মিয়ানমারের সহিংসতাকে তিনি ‘গণহত্যা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ইউরোপের কোনো নেতার সম্ভবত এটাই সবচেয়ে কড়া সমালোচনা।
যুক্তরাজ্য মিয়ানমার শাসন করেছে ১৮২৪ সাল থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত। ব্রিটিশ সরকার জানিয়ে দিয়েছে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগ ওঠায় দেশটির সামরিক বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া স্থগিত করা হচ্ছে।
সিঙ্গাপুরের রাজারত্নাম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের গবেষক অ্যালিস্টার ডি বি কুক বলছেন, ইউরোপের অন্য দেশগুলোর উচিত যুক্তরাজ্যকে অনুসরণ করা। রোহিঙ্গাদের এখন প্রয়োজন ইউরোপের বন্ধু। তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনো প্রস্তাব এলে চীন ও রাশিয়া সেখানে ভেটো দেওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। ফলে রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদের কোনো প্রস্তাবের পরিবর্তে ইউরোপের দেশগুলোর সমন্বিত পদক্ষেপ অনেক বেশি কার্যকর হবে।
লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের ভিজিটিং ফেলো লুডোভিকা মার্চি বলেন, মিয়ানমার বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) একটি অভিন্ন অবস্থান ১৯৯৬ সাল থেকেই আছে। এর মধ্যে সেখানে অস্ত্র বিক্রির নিষেধাজ্ঞা অন্যতম। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জোট আসিয়ানের সঙ্গে ইইউর সুসম্পর্ক আছে। পরিস্থিতি উত্তরণে এই সম্পর্ক নিয়ামক হতে পারে। তিনি বলেন, আসিয়ান বরাবরই মিয়ানমারের স্বার্থ রক্ষা করে চলেছে। তবে দেশটির সরকারের ওপর চাপ তৈরির ক্ষমতা এই জোটের আছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোহিঙ্গাদের এই ধরনের ‘বন্ধুহীন’ অবস্থায় যদি ইউরোপের দেশগুলো এবং অন্যরা এগিয়ে না আসে, তবে সেই সুযোগ নিতে পারে খারাপ কোনো গোষ্ঠী।
রাজারত্নাম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের আরেক গবেষক রেমি মাহজাম বলেন, নিজের ক্ষমতা ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত হাতিয়ার আছে ইউরোপের। তবে এই জোট পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে দেরি করে ফেলছে। তিনি বলেন, আল-কায়েদা ইতিমধ্যে রোহিঙ্গা ইস্যুকে পুঁজি করে নতুন যোদ্ধা সংগ্রহের চেষ্টায় নেমেছে।