খুচরাতেও চালের দাম কমছে

Radio অর্থ ও বাণিজ্য

9e2657be333a967b3bf73f7d789da732-59c70b447c748

পাইকারির পর খুচরা বাজারেও চালের দাম কমতে শুরু করেছে। কিন্তু পাইকারিতে যে হারে কমেছে, খুচরা বাজারে দাম এখনো সেই হারে কমেনি। গত তিন দিনে পাইকারিতে মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি প্রায় ৫ টাকা কমেছে, খুচরায় কমেছে মাত্র ২ টাকা। সরু মিনিকেটে প্রায় ৩ টাকা কমলেও খুচরায় কমেছে ১ টাকা।

এই পরিস্থিতিতে সাধারণ ভোক্তারা দাম কমার তেমন সুফল পাচ্ছেন না। এর কারণ হিসেবে খুচরা ব্যবসায়ীদের যুক্তি, দাম কমার আগে তাঁরা অনেক চাল কিনে রেখেছিলেন। এ কারণে পাইকারি বাজারের মতো খুচরায় দাম ততটা কমেনি।

রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বর সেকশনের কাঁচাবাজার, কচুক্ষেত বাজার, কারওয়ান বাজার ও তেজগাঁও কলমিলতা বাজারের খুচরা দোকানে গতকাল শনিবার মোটা চাল কেজিপ্রতি ৪৮-৫০, মিনিকেট চাল মানভেদে ৬৩-৬৫ ও মাঝারি বিআর-২৮ চাল ৫৫-৫৭ টাকা দরে বিক্রি হয়। অবশ্য বেশি পরিমাণে বা ৫০ কেজির এক বস্তা কিনলে দাম আরও কিছু কমে পাওয়া যাচ্ছে।

মিরপুর-১ নম্বর সেকশনের সিটি করপোরেশন কাঁচাবাজারের পরশ জেনারেল স্টোরে গতকাল প্রতি কেজি ভালো মানের মিনিকেট চাল ৬৪ টাকা দরে বিক্রি হয়, যা আগের চেয়ে ১ টাকা কম। এ ছাড়া মোটা স্বর্ণা চাল কেজিতে ২ টাকা কমিয়ে ৫০ টাকায় বিক্রি করছিলেন ওই দোকানের বিক্রেতা। তিনি বলেন, পাইকারি বাজারে দাম কমলেও সেই চাল এখনো কেনা হয়নি। আগের চালই দাম কিছুটা কমিয়ে বেচতে হচ্ছে।

এই দোকান থেকে পাইকারি বাজারের দূরত্ব কয়েক শ ফুট। পাইকারি দোকান মোহাম্মদীয়া খাদ্য ভান্ডারের ব্যবস্থাপক সালাউদ্দিন লিটন বলেন, দাম কমে যাওয়ায় এখন কেনা-বেচা তিন ভাগের এক ভাগে নেমেছে। দাম যখন বাড়ছিল তখন খুচরা বিক্রেতাদের অনেকে বেশি পরিমাণে কিনে বাড়তি মুনাফা করতে চেয়েছিলেন।

খুচরা পর্যায়ে পাইকারি বাজারের সঙ্গে মিলিয়ে না কমার কারণ জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের খুলনা রাইস এজেন্সির মালিক মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, খুচরা পর্যায়ে যে চাল আছে, তা কেনা বেশি দামে। এর ফলে দাম কমতে কয়েক দিন লাগবে।

ঈদুল আজহার পরে পাইকারি বাজারে মোটা, মাঝারি ও সরু চালের দাম কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা বেড়ে গিয়েছিল। এ পরিস্থিতিতে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ও খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম গত মঙ্গলবার চালকলমালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এতে চালের দাম কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা কমানোর ঘোষণা দেন চালকলমালিকেরা। অন্যদিকে ভারতীয় আমদানি করা চালের দামও কমে যায়।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, খুচরা বাজারে গতকাল মাঝারি চালের দাম কেজিপ্রতি ১ থেকে ২ টাকা ও মোটা চাল কেজিপ্রতি ২ টাকা কমেছে।

কুষ্টিয়ার মোকামে দাম কমেছে

আমাদের কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, গতকাল জেলার খাজানগরে মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৫৮ টাকা দরে। বিআর ২৮ ও কাজললতা বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৫৪ টাকায়। গত সপ্তাহের তুলনায় মিনিকেট কেজিপ্রতি ৩ ও অন্য চাল ২ টাকা কমে বিক্রি হয়েছে। একই সময়ে খাজানগর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে পৌরবাজারে মানভেদে মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৬১ থেকে ৬৩ টাকায়।

পৌরবাজারের নিউ শাপলা ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপক আলামিন জানান, আগে বেশি দামে চাল কেনা হয়েছিল। সেগুলোই এখনো আছে। এ জন্য দাম একই আছে।

বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির কুষ্টিয়া জেলার সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন  বলেন, ‘মন্ত্রীদের কাছে দেওয়া কথা রেখে চালকলমালিকেরা সব ধরনের চালের দাম কেজিপ্রতি ২ টাকা করে কমিয়েছেন। এখন ব্যবসায়ীরা কমালে জনগণ সুবিধা পাবে।’

নওগাঁর মোকামেও দাম কমেছে

আমাদের নওগাঁ প্রতিনিধি জানান, জেলার চালের সবচেয়ে বড় মোকাম পার-নওগাঁ ও খাস-নওগাঁ বাজার এবং মহাদেবপুর উপজেলা সদর বাজারে গতকাল মোটা জাতের স্বর্ণা, গুটি স্বর্ণা ও পারিজা চাল কেজিপ্রতি ৪৪ থেকে ৪৭ টাকা দরে বিক্রি হয়, যা গত সপ্তাহের তুলনায় ৩ থেকে ৬ টাকা কম। এ ছাড়া সরু মিনিকেট চাল প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৬২ টাকা দরে বিক্রি হয়, যা আগের চেয়ে ৪ টাকা কম।

সিরাজগঞ্জে ধানের দাম কমেছে

আমাদের সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার হাটবাজারে ধানের দাম কমতে শুরু করেছে। গতকাল উপজেলার চান্দাইকোনা ইউনিয়নের চান্দাইকোনা হাটে ধানের দাম মণপ্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে।

এ হাটে গতকাল মিনিকেট চালের ধান মণপ্রতি ১ হাজার ২৫০ টাকায় বিক্রি হয়। বিভিন্ন জাতের মাঝারি ধান ১ হাজার ৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা ও মোটা ধান ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকায় বিক্রি করেন বিক্রেতারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *