মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিম–অধ্যুষিত গ্রামগুলো গতকাল শুক্রবারও আগুন দিয়ে পোড়ানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ভিডিও ও স্যাটেলাইট ছবির ভিত্তিতে জানিয়েছে, গ্রামের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। উড়তে দেখা গেছে ধোঁয়ার কুণ্ডলী।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ক্রাইসিস রেসপন্স বিভাগের (দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা) পরিচালক তিরানা হাসান বলেন, সু চি গত মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেছেন, ৫ সেপ্টেম্বরের পর থেকে মিয়ানমারে আর কোনো সেনা অভিযান হয়নি। কিন্তু এসব তথ্য–প্রমাণ তাঁর দাবিকে প্রশ্নের মুখে ফেলে।
রাখাইন রাজ্যের ভেতর থেকে সম্প্রতি ধারণ করা নতুন তিনটি ভিডিও ও স্যাটেলাইট ছবির ভিত্তিতে তিরানা হাসান আরও বলেন, ‘মিয়ানমারে সেনা অভিযান শুরুর প্রায় তিন সপ্তাহ পরও আমরা দেখছি, রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি ও গ্রাম পোড়ানো হচ্ছে। ভয়ে রোহিঙ্গারা এলাকা ছেড়ে পালাচ্ছে। অভিযানে রোহিঙ্গাদের শুধু গ্রাম থেকে তাড়ানোই হচ্ছে না, তারা যাতে আর ফিরতে না পারে, সে জন্য ঘরবাড়ি পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হচ্ছে।’
রাখাইনের উত্তরাঞ্চলের স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী এবং স্থানীয় উগ্রবাদী জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়িতে আগুন দিচ্ছে।
তিরানা হাসান বলেন, মিয়ানমারের জাতিগত নির্মূল নিয়ে আর সন্দেহের অবকাশ নেই। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
গত বৃহস্পতিবার রাখাইনের হাপর ওয়াট চুয়াং নামে গ্রামের কাছে ধারণ করা ভিডিও এসেছে অ্যামনেস্টির কাছে। তাতে দেখা গেছে, গ্রামের কৃষিজমি, ঘরবাড়ি ও গাছপালা আগুনে পুড়ছে। স্থানীয় এক বাসিন্দা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে জানান, মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) এবং নজরদারি দলের সদস্যরা গতকাল শুক্রবার বিকেলের দিকে বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিসংযোগ করে। একই দিন কিছু সময় পরে আবার অগ্নিসংযোগ করা হয় গ্রামের বিভিন্ন এলাকায়।
ওই গ্রাম থেকে পাওয়া স্যাটেলাইট ছবিগুলো অ্যামনেস্টি ১৬ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পর্যালোচনা করে। সর্বশেষ ২২ সেপ্টেম্বরেও ওই গ্রাম থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। ওই দিনের ছবিতে দেখা গেছে, কয়েক দিন আগেও গ্রামে যেসব স্থাপনা ছিল, সেগুলোও আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
বুথিডং এলাকায় নাগা ইয়ান্ট চুয়াং গ্রামের বাইরে ধারণ করা আরও দুটি ভিডিওর ভিত্তিতে অ্যামনেস্টি বলছে, গতকাল বিকেলেও সেখানে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। রাখাইন রাজ্যের একটি সূত্র অ্যামনেস্টিকে জানিয়েছে, গতকাল স্থানীয় সময় বেলা দেড়টা থেকে দুইটা পর্যন্ত এসব অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
আগুন লাগানোর তথ্য, স্যাটেলাইট ছবি, ভিডিও, প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্য বিশ্লেষণ করে অ্যামনেস্টি বলছে, রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলে একের পর এক অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে।
২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযান শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ৪ লাখ ২৯ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে বলে জানিয়েছে অ্যামনেস্টি। সংস্থাটি বলছে, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ চলছে।