ফেসবুকে একটি মন্তব্য দিয়ে বিপদে পড়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা। তাঁকে বিভাগ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গঠন করা হয়েছে কমিটি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই কর্মকর্তার নাম সিফাতুল হক শিবলি। ২০১৫ সালে যোগদান করা শিবলি ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-২-এ কর্মরত ছিলেন। এ নিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সিফাতুল হক মন্তব্যটি দিয়েছিলেন ‘দ্য ফ্যামিলি অব বাংলাদেশ ব্যাংক’ নামে ফেসবুকের একটি ক্লোজ গ্রুপে। এ গ্রুপে সবার প্রবেশের সুযোগ নেই, শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দিষ্ট কর্মকর্তারাই এর সদস্য।
১৩ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোর বাণিজ্য পাতায় ‘কর্মকর্তাদের পরিদর্শন ক্ষমতায় লাগাম টানল কেন্দ্রীয় ব্যাংক’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে উল্লেখ ছিল, কোনো ঋণকে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করতে বা ঋণের ব্যবহার সরেজমিনে দেখতে হলে ডেপুটি গভর্নরের (ডিজি) অনুমোদন নিতে হবে। এর মাধ্যমে পরিদর্শন কর্মকর্তাদের ক্ষমতা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ওই দিনই সিফাতুল হক শিবলি ‘দ্য ফ্যামিলি অব বাংলাদেশ ব্যাংক’ নামে ফেসবুকের একটি গ্রুপে মজা করে লেখেন, ‘ডিজি মহোদয় আপনি অনুমতি দিলে একটি লোন (ঋণ) ক্লাসিফায়েড (খেলাপি) করতে চাই। গ্রাহকের নাম ঠিকানা বলো। স্যার গ্রাহক তো মেলা টাকার মালিক। ক্লাসিফায়েড করার আগে গ্রাহককে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলো’।
একই দিন অপর মন্তব্য তিনি লেখেন, এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশ ব্যাংক শেষ হয়ে যাবে।
এরপর গতকাল বুধবার তাঁকে ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-২ থেকে তাৎক্ষণিক বদলি করে মানবসম্পদ বিভাগে যুক্ত করা হয়। এ ঘটনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, ফেসবুকের ওই গ্রুপে নিজেরা বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করে থাকেন। গ্রুপের সদস্য শুধু ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা। কীভাবে ব্যাংকের পরিস্থিতি উন্নয়ন করা যায়, সুযোগ-সুবিধা—এসব নিয়ে আলোচনা হয়। সবাই মনের ভাব প্রকাশ করে থাকে। এ গ্রুপের মন্তব্য নিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়াটা কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত হতে পারে না। তাহলে সবাই নিশ্চুপ হয়ে পড়বে।
ওই কর্মকর্তাকে বদলি করেই ক্ষান্ত হয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। আজ তাঁকে অভিযোগনামা (চার্জশিট) দেওয়া হয়। এ জন্য ব্যাংকের অফ সাইট সুপারভিশন বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে কমিটি করেছে। ওই কর্মকর্তাকে ২ অক্টোবরের মধ্যে তাঁর কাছে অভিযোগের বিষয়ে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগগুলোর দায়িত্বে রয়েছেন ডেপুটি গভর্নর এস এম মনিরুজ্জামান। এ ছাড়া অফ সাইট সুপারভিশন বিভাগের দায়িত্বেও তিনি। তাঁরই নির্দেশে এসব সিদ্ধান্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংক কর্মকর্তারা। দেশের বাইরে থাকায় তাঁর মন্তব্য পাওয়া যায়নি।