কিশোরগঞ্জের নিকলীতে অনুষ্ঠিত হয়েছে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা।
বুধবার বিকালে উপজেলার সোয়াইজনী নদীতে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় ১০ টি বাইচের নৌকা অংশ নেয়।
নিকলী নতুন বাজার বণিক সমিতি এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।মাঝি মাল্লাদের বাদ্য বাজনা আর গানের তালে তালে নৌকা এগিয়ে যেতে থাকে গন্তব্যে। সাথে দর্শকদের করতালি আর চিৎকার চেচামেচি মুখরিত করে রাখে পরিবেশ। কয়েকশ’ বছর ধরে নিকলীতে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন। বর্তমানে এটি এলাকার সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। ছেলে, বুড়ো থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী নারীদেরও উপচে পড়া ভিড় হয় উৎসবে।
নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতাকে ঘিরে পুরো নিকলী মেতেছিল উৎসবের আমেজে। শুধু নিকলী নয়, আশপাশের বিভিন্ন উপজেলা থেকেও হাজারো দর্শনার্থীর ভিড় নামে উৎসবে। ঐতিহ্যের এ ধারা প্রতি বছর অব্যাহত রাখার সংকল্প ব্যক্ত করেছেন আয়োজকরা। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী তিনটি দলকে পুরস্কার প্রদান করা হয়। প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছে গোবিন্দপুর আলী হোসেন মেম্বারের দল, দ্বিতীয় নিকলী সদরের কারার শাহরিয়ার আহমেদ তুলিপের দল এবং তৃতীয় হয়েছে গুড়ুইয়ের তোতা মিয়ার দল। নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কারার শাহরিয়ার আহমেদ তুলিপের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কারার সাইফুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহানা নাসরিন।
কথিত আছে, প্রায় পাঁচশ বছর আগে মনসা দেবী মানবীরূপে আবির্ভূত হয়ে নিকলীর গোবিন্দপুরে চন্দ্রনাথ গোস্বামীর আখড়ার ঘাটে জল আনতে যায়। এ সময় ঘাটের অপর দুই পাড়ে মাছ ধরতে ছিল দুই জেলে। মানবীরূপে মনসা দেবীকে দেখে তারা মুগ্ধ হয়ে যায়। পরে দুইজনই প্রেম নিবেদন করে মনসা দেবীকে। কিন্তু দুইজনকে তো আর একসাথে গ্রহণ করা যায় না। তাই দেবী তাদেরকে চন্দ্রনাথ গোস্বামীর আখড়া থেকে পাশের লাল গোস্বামীর আখড়া পর্যন্ত নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা করতে বলেন। যে কথা সেই কাজ। ভাদ্রের ১ তারিখ তারা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে দুইজন একই সাথে তীরে গিয়ে ভিড়েন। সেই থেকে চলে আসছে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা। বর্তমানে এটি এলাকার প্রধান সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।