মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওরে প্রতিবছরই কমবেশি ইলিশ ধরা পড়ে। কিন্তু এবার এই রুপালি মাছ তুলনামূলক বেশি ঝিলিক মারছে জেলেদের জালে। যদিও তা ঝাঁকে ঝাঁকে নয়। হাওরপারের বাজারগুলোয় এই ইলিশের দেখা মিলছে।
জানতে চাইলে বড়লেখার জ্যেষ্ঠ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সঞ্জয় ব্যানার্জি গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, এবার হাকালুকিতে জেলেদের জালে ইলিশ মাছ ধরা পড়ার পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। তবে এসব ইলিশের আকৃতি বড় নয়। উপজেলার কানুনগো বাজারে হাকালুকির ইলিশ বেশি দেখা যাচ্ছে।
উপজেলা মৎস্য বিভাগ ও স্থানীয় মৎস্যজীবী সূত্রে জানা গেছে, বহুকাল ধরেই হাকালুকি হাওরে ইলিশ পাওয়া যায়। এগুলোর ওজন হয় ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম। মাঝখানে ১৫ থেকে ২০ বছর হাকালুকিতে ইলিশের উপস্থিতি প্রায় শূন্যে নেমে গিয়েছিল। নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের ব্যাপক ব্যবহার, হাওর ভরাটসহ নানা কারণে অনুকূল পরিবেশ না থাকায় এ অবস্থা হয়। তবে পাঁচ থেকে সাত বছর ধরে আবার এ হাওরে ইলিশের উপস্থিতি লক্ষ করা যাচ্ছে। প্রতিবছরই বর্ষাকালে জেলেদের জালে দু-চারটি ইলিশ ধরা পড়ত। কিন্তু এবার হাওরের ফেঞ্চুগঞ্জ এলাকার কুশিয়ারা নদী-সংলগ্ন এলাকা এবং হাওরের গভীর অংশে অন্যান্য বছরের তুলনায় ইলিশ বেশি ধরা পড়ছে। বিশেষ করে রাতের বেলায় জেলেদের জালে অন্যান্য মাছের সঙ্গে রুপালি ঝিলিক দিয়ে উঠে আসছে ইলিশ। এ ইলিশের ওজন ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম। মাঝেমধ্যে ৮০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ওজনের ইলিশও উঠছে। বড়লেখা, জুড়ী, কুলাউড়া, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জসহ হাওরপারের ছোট-বড় বিভিন্ন বাজারে এই ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। বড়লেখা উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নের হাওরপারের কানুনগো বাজারে খুচরা মাছ বিক্রেতাদের ইলিশ দিয়ে ডালা সাজিয়ে বসতে দেখা যায়।
তালিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বিদ্যুৎ কান্তি দাস গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক দিন ধরে হাটে ইলিশ আসার পরিমাণ বেড়েছে। প্রায় প্রতিবার জাল টানলেই এক-দুটি ইলিশ মিলছে বলে স্থানীয় জেলেরা জানান।
কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল ইউনিয়নের সাদিপুর গ্রামের মৎস্যজীবী বটলাই মিয়া (৩৫) গত রোববার বলেন, অন্য বছরের তুলনায় তাঁরা এবার বেশি ইলিশ পাচ্ছেন। বিশেষ করে হাওরের গভীর এলাকায় বেশির ভাগ ইলিশ ধরা পড়ছে। দিনের বেলায়ও জালে ইলিশ উঠছে। অনেক দিন ধরে বন্যা হয়েছে। হাওরে এখন প্রচুর পানি। এ কারণেই ইলিশ বেশি পাওয়া যাচ্ছে বলে মনে করেন বটলাই।
গত এপ্রিল মাসের অকালবন্যায় হাকালুকি হাওরে প্রচুর মাছ মারা যায়। তখন ঝাঁকে ঝাঁকে আইড়, বোয়াল, রুই, কাতলা, কালবাউস, সরপুঁটি, পাবদা, গনিয়া, ঘুলশা, টেংরা, পুঁটি, রানিসহ নানা জাতের মাছ মরে পানিতে ভেসে ওঠে। এতে দুশ্চিন্তায় ছিলেন স্থানীয় মৎস্যজীবী ও মৎস্য কর্মকর্তারা।
কুলাউড়া উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মো. সুলতান মাহমুদ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, এবার হাকালুকিতে পানি বেশি। কুশিয়ারা নদীর সঙ্গে এ হাওরের সংযোগ রয়েছে। কুশিয়ারা নদী দিয়ে ইলিশ হাওরে ঢুকছে। এ ছাড়া এবার ইলিশের উৎপাদনের স্থানগুলোতেও ইলিশের আধিক্য আছে। বন্যায় হাকালুকিতে মাছ মারা যাওয়ার বিষয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘মাছ মারা গিয়ে যে ক্ষতি হয়েছিল, সেটা কাটিয়ে ওঠা গেছে। কারণ, প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় মাছের পোনা উৎপাদন বেশি হয়েছে। এ কারণে এবার হাওরে অন্যান্য মাছের উৎপাদনও অনেক ভালো হয়েছে।