শিশু-কিশোরদের শাস্তির আগে ভাবুন

Slider গ্রাম বাংলা

91f32e255750be4d1f7a58b3b9c1eab6-59925c973f5e3

 

 

 

 

পিরোজপুর সদর উপজেলার তেজদাসকাঠি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খুব কড়া মানুষ। অল্প বয়সী মেয়েদের প্রেম-ভালোবাসা করাটাকে তিনি একদম ভালো চোখে দেখেন না। আর এই মেয়েরা যদি তার স্কুলের শিক্ষার্থী হয়, তাহলে তো কথাই নেই। তাদের তো শাস্তি পেতেই হবে। আর তিনি তা দিয়েছেনও। প্রেম করার অপরাধে তিনি স্কুলের চার ছাত্রীকে ছাড়পত্র বা টিসি দেন। কিন্তু এ শাস্তি মেনে নিতে পারেনি সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ময়ূরী আক্তার। অপমানে ও লজ্জায় গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে সে।
গত রোববার প্রথম আলোসহ দেশের বিভিন্ন পত্রিকায় ময়ূরী আক্তারের আত্মহত্যার খবরটি ছাপা হয়। খবরটি পড়ে মনটা বেদনায় ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। ভাবি, এ কেমন প্রধান শিক্ষক তিনি? কোনো ছাত্র বা ছাত্রী প্রেম করলে তাকে স্কুল থেকে বের করে দিতে হবে? দেশের কোন আইনে এটা লেখা আছে? স্কুলের শৃঙ্খলাভঙ্গ এবং পরীক্ষায় বারবার অকৃতকার্য হওয়া ছাড়া আর অন্য কোনো কারণে স্কুল থেকে টিসি দেওয়ার নিয়ম নেই। তাহলে এই প্রধান শিক্ষক কোন বিবেচনায় এই চার ছাত্রীকে টিসি দিলেন? তাঁর এই সিদ্ধান্তের ফলে যে একজনের প্রাণটাই চলে গেল। এই মৃত্যুর দায় কি তিনি নেবেন?
একই রকম কাণ্ড ঘটান রাজধানীর গণভবন সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকা। সহপাঠিনীর সঙ্গে প্রেম করার অপরাধে অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রকে তিনি স্কুল থেকে বহিষ্কার করেন। তাঁর দৃষ্টিতে প্রেম করা অমার্জনীয় অপরাধ। এ জন্য শাস্তি পেতেই হবে। আর শাস্তি হচ্ছে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া। কোনো রকম নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এবং কারও সঙ্গে কোনো আলোচনা না করে এই প্রধান শিক্ষিকা তাঁর একক সিদ্ধান্তে ওই ছাত্রকে টিসি দেন।
আমাদের সৌভাগ্য যে ওই ছাত্র ময়ূরী আক্তারের মতো আত্মহত্যা করেনি। কিন্তু এ ধরনের শাস্তিতে শিক্ষার্থীরা যে মানসিক আঘাত পায়, যে লজ্জা পায়, তার পরিণতি মারাত্মক হতে পারে। এতে তাদের শিক্ষাজীবন ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।
এগুলো নাহয় স্কুলের ঘটনা। কলেজ পর্যায়ে যখন এ ধরনের ঘটনা ঘটে, এর চেয়ে অদ্ভুত আর কী হতে পারে। গত বছরের একটা ঘটনার কথা উল্লেখ করতে চাই। ঢাকা কমার্স কলেজের এক ছাত্র একই কলেজের এক ছাত্রীকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিল। এ প্রস্তাবে সাড়া দেয় মেয়েটি। আর এ দৃশ্য ভিডিওবন্দী করে আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী। পরে সে ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি কলেজ কর্তৃপক্ষ ভালোভাবে নিতে পারেনি। তারা এ জন্য দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও নয়জনের ভর্তি বাতিল করে। পরে অবশ্য ভর্তি বাতিল হওয়া নয়জন আবার ভর্তির সুযোগ পায়। কিন্তু বহিষ্কৃত দুই শিক্ষার্থীকে আর ফিরিয়ে নেওয়া হয়নি। কিন্তু কথা হচ্ছে, কেন এ রকম শাস্তি! এমন না যে ঘটনাটা কলেজ ক্যাম্পাসে ঘটেছে।
এ ধরনের শাস্তি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ দেশে কি প্রেম করা নিষিদ্ধ? নাকি কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীরা প্রেম করে না?
স্কুল-কলেজে বিশেষ করে ছেলে ও মেয়েরা একসঙ্গে পড়ে, এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রেম-ভালোবাসা হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। যেসব ছেলেমেয়ে এভাবে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে, স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের কাউন্সেলিং করতে পারে। তাদের বোঝাতে পারে যে এত কম বয়সে এভাবে প্রেম করা ঠিক নয়। এতে তাদের পড়ালেখা ব্যাহত হতে পারে। স্কুল কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে তাদের অভিভাবকদের ডেকে সতর্ক করতে পারে। স্কুল-কলেজের দায়িত্ব এতটুকুই। এর বেশি নয়। এটা শিক্ষকদের বুঝতে হবে এবং সেভাবেই পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা চাই না কতিপয় শিক্ষকের হঠকারী, অবিবেচনাপ্রসূত ও অমানবিক সিদ্ধান্তের কারণে আর কোনো শিক্ষার্থীর প্রাণ চলে যাক, চাই না কোনো শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন নষ্ট হোক। আমরা শিক্ষকদের কাছ থেকে দায়িত্বশীল আচরণ আশা করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *