পুরো বিশ্ব এখন সেলফি টার্মটির সঙ্গে পরিচিত। আর পর্যটন শিল্পের বিকাশে এবার সেই সেলফিকেই হাতিয়ার বানাল কলকাতা।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার তাদের বিমানবন্দর ও রেল স্টেশনে গড়ে তুলেছে অভিনব সেলফি জোন।যেখানে বিমানে ওঠার আগের সেলফি জানিয়ে দেবে আপনি কোথায়। ছবির ‘ব্যাকড্রপ’ বুঝিয়ে দেবে আপনার মনোভাব। ফুটে উঠবে টয়ট্রেনের অচেনা ছবি থেকে শুরু করে ‘ভালবাসি বাংলা’ ক্যাপশনও। ফেসবুকের বন্ধুরা জেনে যাবেন, বাংলা নিয়ে আপনার ভালবাসা, গর্ব কতখানি।
ভারতের কলকাতায় দমদম ও বাগডোগরা বিমানবন্দরে ‘সেলফি জোন’ তৈরি করেছে তারা। খুব শিগগিরই এমনই সেলফি জোন চালু হচ্ছে রাজ্যটির হাওড়া, শিয়ালদহ, শান্তিনিকেতন ও কলকাতা স্টেশন ছাড়াও দুর্গাপুরের অন্ডাল বিমানবন্দরেও।
সেলফি জোনের পাশাপাশি বিমানবন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ রেলস্টেশনে ‘হেল্প ডেস্ক’ পরিষেবাও চালু করছে রাজ্য পর্যটন দপ্তর। যখন কেউ কলকাতা ছেড়ে যাবেন তখন সেলফির ছবিতে ফুটে উঠবে জীবনানন্দের সৃষ্টি– “আবার আসিব ফিরে/ধানসিড়িটির তীরে/এই বাংলায়..। ” যখন কেউ আবার কলকাতা বিমানবন্দরে পা রাখবেন তখন তাঁকে স্বাগত জানাবে গানে গানে রাজ্য সরকারের ট্যাগ লাইন– ‘এসো এসো আমার ঘরে এসো/এই বাংলায়। ’
তবে দিন কয়েক আগে থেকে বাগডোগরায় জ্বলজ্বল করছে বাংলা ও ইংরাজি দুই ভাষায় একটি স্লোগান। ঘন নীল আকাশের বুকে রুপোলি রেখায় কাঞ্চনজঙ্ঘার অপূর্ব অবয়ব তুলে ধরে ক্যাপশন লেখা, ‘ভালবাসি বাংলা’ আর ‘উই লাভ বেঙ্গল’। তাৎপর্যপূর্ণ হল পাহাড় নিয়ে গত তিনমাস ধরে যাঁরা বাংলা বিরোধী হুঁশিয়ারি দিচ্ছিলেন তাঁদের বিরুদ্ধে রাজ্যবাসীর নীরব-জেহাদ এবার পর্যটন দপ্তরের এই আবেগদীপ্ত প্রচারে ফুটে উঠেছে।
খুশি মনে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি দেওয়া এই জোনে ছবি তোলার ঢল নেমেছে বাগডোগরায়। মাত্র কয়েকদিনেই সোশ্যাল মিডিয়ায় হাজার হাজার পোস্ট বলছে, উত্তরবঙ্গের কয়েক হাজার মানুষ এই সেলফি জোনে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে অকুণ্ঠ সমর্থন করেছেন। রাজ্য সরকারের এমন অভিনব উদ্যোগ নিয়ে স্বয়ং পর্যটন রাষ্ট্রমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন বলেছেন, “বৈচিত্রময় বাংলাকে সোশ্যাল মিডিয়া মারফত গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার এমন সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি মুখ্যমন্ত্রী। তাই কালচারাল-টুরিজম, হেরিটেজ-টুরিজম শীর্ষক ক্যাপশনে রাজ্য সরকার সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে বিমানবন্দর ও রেলস্টেশন হাজির করছে। ”
এতদিন কলকাতা ছাড়ার আগে দমদম বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনালে কফিশপ বা কাচের দেওয়ালের পাশে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলতেন যাত্রীরা। মাথার উপরে বাংলা লেখা কলকাতা, বাংলা লেখা হরফে অনেকেই মোহিত হন। কিন্তু ফেসবুকে ট্যাগ লাইনে ‘নেতাজি সুভাষ বিমানবন্দর’ থেকে পরবর্তী গন্তব্যের ঠিকানা লিখতেন সবাই। মাঝে একটা ‘লাল ডট’ বিমানের রুট। কিন্তু এই প্রথম সোশ্যাল মিডিয়ায় বাংলার পর্যটনকে তুলে ধরার অভিনব ও বিরল সুযোগ নিলেন পর্যটন রাষ্ট্রমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন। মুখ্যমন্ত্রীর সম্মতিতে দমদম ও বাগডোগরা বিমানবন্দরে সেলফি জোন তৈরি করালেন তিনি। ছৌনাচের মাঝের শিল্পীর মুখে নিজের অবয়ব রেখে ছবি তোলার সুযোগ এনে দিয়েছে পর্যটন দপ্তরের এই সেলফি জোন।