ঢাকা: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই জামানায় সন্তানের ছবি তুলে পোস্ট করতে ভালোবাসেন মা–বাবা। ব্যতিক্রম নয় ইন্দোনেশিয়ার মা–বাবারাও। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি পোস্ট করে সন্তানদের কী পরিমাণ যৌন নিপীড়নের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, সে সম্পর্কে বেশির ভাগ মা–বাবাই সচেতন নন। সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ায় ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা সে বিষয়টিকেই সামনে নিয়ে এসেছে।
বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, আর দশটা মায়ের মতো ইন্দোনেশিয়ার রিসরোনা সিমোরংকির নামের এক মা তাঁর দুই সন্তানের সুন্দর আর মজার সব ছবি ফেসবুকে পোস্ট করতেন। কিন্তু এর মাধ্যমে যে তিনি যৌন নিপীড়কদের হাতে সন্তানদের ছবি-তথ্য তুলে দিচ্ছেন, তা জানতেন না। একটি ব্লগের লেখা পড়ে প্রথম তিনি বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পারেন। জানতে পারেন ফেসবুক গ্রুপের নামটিও (সংগত কারণেই সে নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না)। ওই গ্রুপে বিকৃত মানসিকতার যৌন নিপীড়কেরা শিশুদের ছবি-ভিডিও আপত্তিকরভাবে প্রকাশ করে। এ ছাড়া কতভাবে আশপাশের শিশুদের যৌন হয়রানি করা যায়, যেসব নিয়ে বিকৃত সব আলোচনা ও পোস্ট থাকে সেখানে।
রিসরোনা সিমোরংকির সন্তান লালন-পালনসহ নানা বিষয় শেয়ার করার জন্য মায়েদের একটি ফেসবুক গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি ওই গ্রুপে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। তাঁর ভাষায়, ‘বিষয়টি নিয়ে আলোচনার পর আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, তথ্য-প্রমাণ জোগাড়ের জন্য আমরা ওই গ্রুপে ঢোকার চেষ্টা করব। আমরা যুক্ত হওয়ার জন্য রিকোয়েস্ট পাঠাতে থাকলাম। আমাকেসহ কয়েকজনকে যুক্ত করে করল ওরা। আমি মাত্র চার ঘণ্টা ওই গ্রুপে ছিলাম। সে এক বীভৎস ব্যাপার। সেখানে যেসব ছবি, ভিডিও আর আলোচনা চলে, সেগুলো কোনো মানুষের কাজ হতে পারে না।’
রিসরোনা সিমোরংকির বলেন, ‘ওই গ্রুপে শিশুদের সঙ্গে কীভাবে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে, কী বলে ভয় দেখালে নিপীড়নের শিকার হওয়ার পর শিশুরা বাড়ি গিয়ে মা–বাবাকে কিছু বলবে না—এমন বিষয়সহ ভয়ংকর সব আলোচনা। একজন নিজের ভাগনিকে কীভাবে যৌন নিপীড়ন করেছে, সে অভিজ্ঞতার রসাল বর্ণনা দিয়েছেন।’ রিসরোনার বন্ধু মিশেল বলেন, ‘আমরা তথ্য-প্রমাণের জন্য সব স্ক্রিনশট দিয়ে রাখলাম। ওই গ্রুপ যাঁরা চালান, তাঁদের সঙ্গে কথোপকথন, তাঁদের প্রোফাইল ও ফোন নম্বর সংগ্রহ করলাম। এরপর পুলিশকে জানালাম। আর গ্রুপের ব্যাপারে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করলাম।’
অভিযোগ পেয়ে পুলিশ সন্দেহভাজন পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে। ফেসবুকের একজন মুখপাত্র বিবিসিকে জানান, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আর মায়েদের এমন সাহসী পদক্ষেপের খবর প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশংসার বন্যা বইছে। সবাই ‘মাতৃশক্তি’র জয়গান গাইছে।
জাকার্তা পুলিশের মুখপাত্র আরগো ইউওনো বলেন, ওই যৌন নিপীড়ক গ্রুপে সাত হাজারের বেশি সদস্য আছে। সেখানে শিশুদের চার শর মতো আপত্তিকর ভিডিও ও এক শর বেশি ছবি ছিল। চক্রটির সঙ্গে আন্তর্জাতিক কোনো যোগসূত্র আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। কারণ, গ্রেপ্তার এক সন্দেহভাজন ১১টি দেশের ১১টি এমন গ্রুপের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যুক্ত ছিলেন। এর মাধ্যমে ওই ব্যক্তি পর্নোগ্রাফি আদান-প্রদান করতেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।