রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় ভারত সরকার শরণার্থী নীতি অনুসরণ করবে বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ভি.কে.সিং। বুধবার তিরুবন্তপুরমে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের মোকাবিলা করতে শরণার্থী নীতি অনুযায়ী সরকার অগ্রসর হবে…পরিস্থিতি যখন স্বাভাবিক হয়ে আসবে তখন তাদের নিজেদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে’।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এও জানান যে, ভারতে কেউই শরণার্থী হিসাবে থাকতে রাজি নয়।এর আগে, গত ৫ সেপ্টেম্বর দেশটির স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু স্পষ্ট জানিয়ে দেন রোহিঙ্গারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী তাই ভারতে অবৈধভাবে বসবাসকারী রোহিঙ্গা মুসলিমদের চিহ্নিতকরণ করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে।
উল্লেখ্য, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সহিংসতার কারণে গত কয়েকবছর ধরেই রোহিঙ্গারা মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশ, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি দিচ্ছে। তবে গত আগস্টের শেষে নতুন করে সহিংসতা তৈরি হওয়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। ভারতে এই মুহূর্তে প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম বসবাস করছে। এর মধ্যে ১৪ হাজার রোহিঙ্গা জাতিসংঘের উদ্বাস্তু হাই কমিশন (ইউএনএইচসিআর) দ্বারা নিবন্ধিত। আর বাংলাদেশের পরিস্থিতি আরও খারাপ, জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী সর্বশেষ সহিংসতার পর সেখানে আশ্রয় নিয়েছে সাড়ে তিন লাখের বেশি রোহিঙ্গা।
এদিকে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে ভারত সরকারের কঠোর অবস্থান এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে ভারত সরকারকে কড়া সমালোচনার মধ্যেই এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসেন ভারতের শীর্ষ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। বুধবার সন্ধ্যার দিকে দিল্লির আকবর রোডে অবস্থিত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং’এর সরকারি বাসভবনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি, সড়ক পরিবহন মন্ত্রী নীতিন গড়কড়িসহ কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের সিনিয়র মন্ত্রীরা উপস্থিত ছিলেন।
যদিও একে ‘রুটিন’ বৈঠক বলেই জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা। তবে সূত্রে খবর ওই বৈঠকের একটা দীর্ঘ সময় ধরে রোহিঙ্গা উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। এও জানা গেছে যে বৈঠকে মন্ত্রীরা প্রত্যেকেই রোহিঙ্গা ইস্যুতে একটা বিষয়ে সহমত পোষণ করেছেন যে রোহিঙ্গারা অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছে অতএব আইন মেনেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ‘সরকারের পক্ষ থেকে কেউই বলেনি যে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের দেশ থেকে ছুঁড়ে ফেলা হবে। আমরা সবাই বলছি যে আইনের ভূমি অনুসরণ করা হবে তাকে সম্মান জানানো হবে’।
অন্য আরেকটি সূত্রে জানান গেছে যে, আইন শৃঙ্খলা থেকে অবকাঠামোসহ একাধিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতেও আলোচনা হয়েছে। এই বিষয়ে কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে তা পরে প্রকাশ্যে জানিয়ে দেওয়া হবে। বলা যেতে পারে এটা একটা রুটিন বৈঠক ছিল।