রাঙামাটির বিধ্বস্ত পাহাড়ে ফের গড়ে উঠছে জনবসতি। যে পাহাড় কেড়ে নিয়েছিল ১২০টি প্রাণ, কেড়ে নিয়েছিল ঘর-বাড়ি, ভিটে মাটি, আত্মীয় স্বজন, পবিরাব পরিজন।
সে পাহাড়ে আবারও ঝুঁকিতে নির্মাণ করা হচ্ছে নতুন ঘর-বাড়ি। পাহাড়ের পাদদেশে মনে শঙ্কা নিয়ে কেউ কেউ মেরামত করছে বসত ঘর।
কারণ উপায় নেয়, প্রয়োজন এক টুরো মাথা গুজার ঠাঁই। পাহাড় ধসের পর যেসব মানুষ স্বজন হারিয়ে বেঁচে ছিল-তারাও এখন গৃহহীন। বন্ধ হয়ে গেছে সরকারী আশ্রয় কেন্দ্রগুলোও। তাই উপয় খুঁজে না পেয়ে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অনেকেই বিধ্বস্ত পাহাড়ে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে বাড়ি-ঘর নির্মাণে। তবে পাহাড় এখনো শান্ত হয়নি। কারণ থামেনি বৃষ্টি। তাই দেখা দিয়েছে নতুন করে পাহাড় ধসের শঙ্কা।
গত ৭ সেপ্টম্বর রাঙামাটি শেষ ৬টি আশ্রয় কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে এখনো আশ্রয় কেন্দ্র ছাড়েনি বেশ কয়েকটি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার। সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া পুর্নবাসনের আশ্বাসও এখন অনেকটা অনিশ্চিত।
রাঙামাটির আশ্রয় কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে- এখনো দু’টি আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছে- ২৪টি পরিবার। শিশুসহ আছেন ৪৮জন নারী-পুরুষ। তবে নেয় সরকারি ব্যবস্থাপনার খাবার সরবারহ। তাই নিজেদের উদ্যোগে কেউ কেউ মাটির চুলা তৈরি করে কোন রকম রান্না করে খাচ্ছেন। কিন্তু সরকারি সুযোগ-সুবিধা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে দেখা দিয়েছে নানা সংকট। মিলছেনা খাবার পানিও। তাই তীব্র পানির সংকট দেখা দিয়েছে আশ্রীতদের মধ্যে।
এ ব্যাপারে হিরু বড়ুয়া নামে একজন আশ্রিত জানান, আমাদের কাছে যা খাবার মজুদ ছিল তাও শেষ পর্যায়ে। এরপর আমরা কি খাব জানি না। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যেসব ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া হয়েছিল তা খুবই সামান্য। আশ্রয় কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়ার কারণে সরকারিভাবে এখন খাবারও মিলছে না।
অন্যদিকে রাঙামাটি আশ্রয় কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেওয়ার আগে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ২ বান্ডিল টিন ও ৬ হাজার টাকা। আর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে মাত্র ১ হাজার টাকা ও ৩০ কেজি চাল দেওয়া হয়। কিন্তু তারপরও আশ্রয় কেন্দ্র ছাড়তে না পাড়ার কারণ জানালেন- একই আশ্রয় কেন্দ্রের আশ্রিত মঙ্গলা দেবি চাকমা। তিনি বলেন-জেলা প্রশাসনের পক্ষ যে চাল দেওয়া হয়েছিল তা রাখার পর্যন্ত কোন পাত্র নেই আমাদের। যে টিন দিয়েছিল তা দিয়ে আমরা করবো কি? কারণ আমাদের তো জায়গা নেয়। যে পাহাড়ে ঘর ছিল, এখন সেখানে ঘর নির্মাণ করা নিষেধ। তাছাড়া আমাদের টাকাও নেই যে ঘর ভাড়া নিব। এ আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে দিলে যাবো কোথায়? এমন প্রশ্ন আশ্রয় কেন্দ্রর আশ্রিত লিপি চাকমা, কুনেন্দ বালা চাকমা, নবীন কুমার, রুবি বড়ুয়াসহ আরও অনেকের। তাদের চোখে মুখে নেমে এসেছে অন্ধকারের কালো ছাপ। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে সন্তাদের পড়া-লেখাও।
রাঙামাটি জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা বিশ্বনাথ মজুমদার জানান, জেলা প্রশাসনের ত্রাণ বিতরণ এখনো চলছে। এর মধ্যে আমরা তালিকা অনুযায়ী পাহাড় ধসে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ৪৪২ জনকে ১ হাজার টাকা, ৩০ কেজি চাল দেওয়া হয়েছে। আর সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ২৫৫জনকে ৩০ কেজি চাল, ২ বান্ডিল টিন ও ৬ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সব ক্ষতিগ্রস্তদের কিছু খাদ্য সামগ্রীও দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের সমান্বয়ে পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের আরও ৫হাজার টাকা করে দিবে ইউএনডিপি। আমরা বলতে পারি পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের যথেষ্ট ত্রাণ সামগ্রি দেওয়া হয়েছে। তাই এখনো যারা আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছে তারা ত্রাণ সামাগ্রী পাওয়ার পর চলে যাবে।
এদিকে, রাঙামাটি সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে কেউ কেউ আত্মীয় স্বজন ও ভাড়া বাসায় গিয়ে উঠলেও অনেকে ফিরে গেছে বিধ্বস্ত ভিটামাটিতে। পাহাড়ে শুরু করেছে ফের ঘর-বাড়ি নির্মাণ কাজ। শহরের পাহাড় ধসে বিধ্বস্ত সেই শিমুলতলী, রূপনগর, রাঙাপানি ও বেতার কেন্দ্র এলাকায় গিয়ে দেখা যায় সে দৃশ্য। জেলা প্রশাসন থেকে দেওয়া সে টিন দিয়ে মেরামত করছে ভাঙ্গা ঘর। আবার কেউ কেউ পাহাড়ের নিচে ও পাহাড় ঘেষে নতুন করে নির্মাণ করছে বসতঘর।
এ বিষয়ে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান বলেন, পাহাড় ধসের ঘটনার আগে যে সব এলাকায় মানুষের ঘর-বাড়ি ছিল আগে সেখানে নতুন করে ঘর নির্মাণ করা নিষেধ করা হয়েছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের দল ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো দেখবেন। বিশষজ্ঞরা মতামত দিবেন, তারপর সরকার বিবেচনা করবে সে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ঘর তোলার মত উপযুক্ত কি না। এর আগে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বসতঘর নির্মাণ করা যাবেনা। তাছাড়া যে সব এলাকায় ঘর নির্মাণ করলে ঘর আবার ভেঙ্গে যাবে সেসব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় আমরা কাউকে ঠেলে দিতে পারিনা। তার চেয়ে যেখানে থাকলে তারা নিরাপদে থাকবে, আমরা চেষ্টা করবো সেখানে রাখতে।