মিয়ানমারের নির্যাতনে প্রাণভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারী-পুরুষেরা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নিয়েছেন। এতে কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে (সী বিচ) স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করলেও উখিয়া ও টেকনাফে নিরাপত্তাজনিত শঙ্কায় ভাটা পড়েছে পর্যটন ব্যবসায়।
এমনকি এবারের ঈদ মৌসুমেও এখানে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের তেমন দেখা পাওয়া যায়নি।পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান, মিয়ানমারে সহিংসতার কারণে সীমান্তে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ায় এই বছর ঈদে পর্যটকের উপস্থিতি খুব কম।
উখিয়ার উপকূলীয় সমুদ্র সৈকত ইনানী, কানা রাজার গুহা, বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত স্থান চেনছুরি, পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড়ী জনপথের কুমির প্রজনন কেন্দ্র, প্রাকৃতিক বৃক্ষ অবলোকনসহ টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, জেটি, ন্যাচারাল পার্ক, সেন্টমার্টিন দ্বীপে ভ্রমণ করতে প্রতি বছর ঈদের সময় দেশি-বিদেশি পর্যটককেরা ভিড় করতে থাকেন। আগাম বুকিং হয়ে যায় উখিয়া-টেকনাফের হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউজগুলো। এমনকি কোথাও তিল পরিমাণ জায়গা থাকে না পর্যটক ছাড়া। কিন্তু এবারের ঈদুল আযহায় কক্সবাজার বিচে কিছু পর্যটকের সমাগম হলেও উখিয়া-টেকনাফে সেই সংখ্যা ছিল খুবই সামান্য।
উখিয়ার ইনানী বিচ (সৈকত) ইজারাদার মো. ছৈয়দ হোসেন বলেন, প্রতি ঈদের মৌসুমে আমাদের বেশ আয় হয়ে থাকে। এবছর গত বছরের অর্ধেক আয়ও করতে পারিনি। মিয়ানমারের সহিংসতা পরিস্থিতির কারণে পর্যটকেরা উখিয়া-টেকনাফ সফর বাতিল করেছেন।
সেন্টমার্টিন ট্রাভেল এজেন্সি নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক জসিম উদ্দিন বলেন, মিয়ানমারে নানা নির্যাতনের কারণে সীমান্ত এলাকার আইনশৃংখলা পরিস্থিতি ভালো না থাকায় এবারের ঈদে পর্যটক ছিল খুবই কম। যেহেতু দেশি-বিদেশি পর্যটকেরা কক্সবাজার আসলে উখিয়া ও টেকনাফ ভ্রমণ করেই থাকেন। সেখানে এবার তেমনটা লক্ষ্য করা যায়নি।
এ ব্যাপারে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল খায়ের অভয় দিয়ে বলেন, মিয়ানমারের ঘটনায় সীমান্তে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লেও পর্যটকসহ দেশি-বিদেশি লোকজনের নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে মিয়ানমারের অভ্যান্তরে। তাই ভয়ের কোনো কারণ নেই।
উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সরওয়ার জাহান চৌধুরী বলেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বেপরোয়া নির্যাতনের ফলে লাখ লাখ রোহিঙ্গা স্থল ও নৌ-পথ দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। আর মিয়ানমারে সেনা বাহিনীর সদস্যরা সে দেশ থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলিমদের বাড়ি ঘরে আগুন, নারী-পুরুষ ও শিশু হত্যা অব্যাহত রাখায় সীমান্ত এলাকায় তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে পর্যটকরা নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এই ঈদে কক্সবাজার সফর বাতিল করেছেন।
তিনি আরও বলেন, উখিয়া-টেকনাফ সড়কের দু’পাশে রোহিঙ্গারা অবস্থান নেওয়ায় ১ ঘণ্টার রাস্তা ৩ ঘণ্টা লাগছে।
উখিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্র আবছার উদ্দিন জানান, সড়কে রোহিঙ্গাদের ভিড় থাকায় কলেজে যাওয়া-আসা বন্ধ করে দিয়েছেন অনেক শিক্ষার্থী। কারণ মাত্র আধা ঘণ্টার দূরত্বের বিদ্যালয়ে পৌঁছাতে ২ ঘণ্টার বেশি সময় লাগছে।
উল্লেখ্য, মিয়ানমারে সশস্ত্র রোহিঙ্গারা ২৪টি পুলিশ পোস্টে সমন্বিত হামলা চালানোর পাশাপাশি একটি সেনাঘাঁটিতে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে এ পর্যন্ত ৪ শতাধিক রোহিঙ্গা ও ১২ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য মারা যান। এরপর থেকে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম, তুমব্রু ও উখিয়া পালংখালী, আঞ্জুমানপাড়া, রহমতের বিল, ধামনখালী এলাকা দিয়ে প্রবেশ করে ২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা উখিয়ার কুতুপালং,বালুখালী ও থাইংখালীতে আশ্রয় নিয়েছে।