চলতি দফায় মিয়ানমার থেকে তিন লাখের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসতে পারে। রাখাইন প্রদেশে সহিংসতা অব্যাহত থাকায় জাতিসংঘ কর্মকর্তারা গতকাল এ আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন। শরণার্থী রোহিঙ্গাদের খাদ্য, ওষুধ ও আশ্রয় জোগাতে বৈশ্বিক সংস্থাটি তহবিলস্বল্পতার মুখোমুখি হতে পারে বলেও তারা সতর্কতা বার্তা উচ্চারণ করেছেন। খবর রয়টার্স।
জাতিসংঘ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগস্টের শেষ সপ্তাহে মিয়ানমারে সহিংসতা শুরুর পর থেকে দুই সপ্তাহে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় ১ লাখ ৬৪ হাজার মানুষ বাংলাদেশে এসেছে। এ নিয়ে গত অক্টোবরের পর থেকে বাংলাদেশে আসা শরণার্থীর সংখ্যা আড়াই লাখ ছাড়িয়ে গেছে।
বাংলাদেশে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) মুখপাত্র দীপায়ন ভট্টাচার্য বলেছেন, মিয়ানমারে এবারের সহিংসতা শুরুর পর জাতিসংঘ কর্মকর্তারা ১ লাখ ২০ হাজার শরণার্থী আসবে বলে অনুমান করেছিলেন। এরই মধ্যে শরণার্থী সংখ্যা ওই অনুমানকে ছাড়িয়ে গেছে। এজন্য সম্ভাব্য শরণার্থীর অনুমিত সংখ্যাটি তিন লাখে উন্নীত করা হয়েছে।
জাতিসংঘ সংস্থাটির এ কর্মকর্তা আরো বলেন, অপুষ্টিতে ভোগা শরণার্থীরা নৌকায় চড়ে আসছে। পাশাপাশি সীমান্তের অসংখ্য পয়েন্ট পাড়ি দিয়েও তারা আসছে। অনেকে এক মাস ধরে ঠিকমতো খেতে পায়নি। অভুক্ত, আতঙ্কিত, আহত শরণার্থীর ঢল এরই মধ্যে সাহায্য সংস্থা ও স্থানীয় অধিবাসীদের সক্ষমতায় চাপ ফেলেছে। শরণার্থীদের সুপেয় পানি, পুষ্টি ও খাদ্য জোগাতে সংস্থাগুলো হিমশিম খাচ্ছে।
কক্সবাজারে পুরনো শরণার্থী শিবিরগুলোয় আগে থেকে প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে।
নতুন আসা শরণার্থীদের কেউ কেউ তাদের পাশে আশ্রয় নিয়েছে। অন্যরা বিভিন্ন মসজিদ, স্কুল, রাস্তার পাশে ও ফসলি জমিতে প্লাস্টিকের ছাউনি পেতে মাথা গোঁজার চেষ্টা করছে।
শরণার্থী শিবিরে আশ্রয়প্রাপ্ত রোহিঙ্গাদের ত্রাণ জোগাতে ডব্লিউএফপি ১ কোটি ১৩ লাখ ডলার তহবিল চেয়ে আবেদন জানিয়েছে। জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টেফান ডুজারিক বুধবার নিউইয়র্কে এ কথা জানান।
এদিকে চলতি দফায় সম্ভাব্য তিন লাখ শরণার্থীকে চার মাসের জন্য হাই-এনার্জি বিস্কুট ও ন্যূনতম প্রয়োজনীয় চাল জোগাতে সংস্থাটির অতিরিক্ত ১ কোটি ৩৩ লাখ ডলার তহবিল প্রয়োজন বলে মুখপাত্র দীপায়ন ভট্টাচার্য জানিয়েছেন। জরুরি ভিত্তিতে তহবিল সংকট মেটাতে তিনি দাতাদের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, দাতারা এগিয়ে না এলে আমরা হয়তো খাদ্যের জন্য শরণার্থীদের নিজেদের মধ্যেই মারামারি করতে দেখব। হয়তো অপরাধের হার বাড়বে; নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতাও বাড়বে।