নন-স্টপ আসছে রোহিঙ্গারা। বাণের পানির মতো আসছে তারা। মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে পৌঁছেছে এক লাখ ৪৬ হাজার রোহিঙ্গা। তারা ক্ষুধার্ত, ভয়ার্ত। তাদেরকে নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে এইড এজেন্সি বা ত্রাণ বিষয়ক সংস্থাগুলো। অথচ মিয়ানমারের নেত্রী ভুল প্রচারণা বলে আখ্যায়িত করে এ সঙ্কটের বিষয়কে প্রত্যাখ্যান করেছেন। বার্তা সংস্থা এপি’র এক প্রতিবেদনে এভাবেই রোহিঙ্গা সঙ্কটকে তুলে ধরা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের জন্য নির্ধারিত শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে পরিস্থিতি বেসামাল হয়ে উঠেছে। এরপরও রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ফুলে ফেঁপে বাড়ার প্রেক্ষিতে আরো কমপক্ষে একটি শরণার্থী শিবির খোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ। বর্তামনে অস্থায়ী বাসস্থানে (মেকশিফট সেটেলমেন্ট) অথবা দু’দেশের মধ্যবর্তী নো-ম্যানসল্যান্ডে যে হাজার হাজার মানুষ অবস্থান করছে তাদেরকে খাদ্য ও আশ্রয়ের জন্য বৈদেশিক সহায়তা বাবদ এক কোটি ৮০ লাখ ডলার দিতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম)। জাতিসংঘের এজেন্সিগুলো বলছে, তারা নতুন আসা শরণার্থীদের মাঝে খাদ্য বিতরণ করেছে। এর মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগই নারী ও শিশু। বাংলাদেশের আশ্রয়ে আছে এখন পর্যন্ত এক লাখের মতো শরণার্থী। তাদের সঙ্গে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন শরণার্থী। ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস-এর বাংলাদেশ মিশনের নেতা পাভলো কোলোভোস এক বিবৃতিতে বলেছেন, বহু বছরের মধ্যে আমরা এত ভয়াবহ কোনো ঘটনা দেখতে পাই নি। আমাদের টিমের সদস্যরা দেখতে পাচ্ছেন নিঃস্ব ও ভয়াবহভাবে মানসিক আঘাতপ্রাপ্ত রোহিঙ্গারা বাণের পানির মতো আসছেন। সহিংসতায় আহত তাদের অনেকের জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। অনেকের ক্ষতে সংক্রমণ রয়েছে মারাত্মক আকারে অথবা অনেক মা সন্তান জন্ম দেয়ার নানা জটিলতায় ভুগছেন। মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনী গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিচ্ছে, হত্যা করছে সাধারণ মানুষকে। এ জন্য এত বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন। ফলে পরিষ্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে না, এখন মিয়ানমারে আর কি পরিমাণ রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন। সর্বশেষ এই সহিংসতার আগে সাহায্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছিলেন। তবে সহিংসতার পর ওই এলাকায় ত্রাণ সাহায্য দানকারী সংস্থাগুলোকে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক অ্যান্থনি লেকের কথায় সে কথারই প্রতিধ্বনি। তিনি বলেছেন, এর আগে বুথিডাং ও মংডুতে আমরা ২৮ হাজার শিশুকে মানসিক চিকিৎসা দিয়েছিলাম। ৪ হাজারের বেশি শিশুকে অপুষ্টির কারণে চিকিৎসা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এবার তাদের কাছে পৌঁছতে পারছি না আমরা। পরিষ্কার পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশনের কাজ আমাদেরকে স্থগিত করতে হয়েছে। ওদিকে তুরস্ক বলেছে, তাদের ত্রাণ বিষয়ক কর্মকর্তাদেরকে রাখাইনে প্রবেশ করতে দিতে সম্মত হয়েছে মিয়ানমার। তারা রাখাইনে খাদ্য ও বিভিন্ন পণ্য ত্রাণ হিসেবে দিতে চায়। বৃহস্পতিবার কক্সবাজারের একটি শরণার্থী শিবির পরিদর্শনের কথা রয়েছে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলুর। মিয়ানমারের নৃশংসতার ফলে অনেক রোহিঙ্গা এখনও তাদের গ্রামের কাছাকাছি কোনো জঙ্গলে পালিয়ে আছেন অথবা বঙ্গোপসাগরে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের আশা তাদেরকে উদ্ধার করা হবে। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশটির শীর্ষ নিরাপত্তা উপদেষ্টা অং সান সুচির বিরুদ্ধে যখন আন্তর্জাতিক সমালোচনার ঝড় উঠেছে তখন তিনি বুধবার নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ নিয়েছেন। বলেছেন, তারা ‘টেরোরিস্ট’দের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছেন। এক্ষেত্রে ভুল প্রচারণা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা থাউং তুন। তবে অং সান সুচির এমন মন্তব্যকে ‘অবিবেচকের’ জবাব হিসেবে আখ্যায়িত করেছে মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন অ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল। রোহিঙ্গাদের অবস্থাকে মানবাধিকার ও মানবিকতার এক ভয়াবহ বিপর্যয় হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তিরানা হাসান। তিনি অ্যামনেস্টির ক্রাইসিস রেসপন্স বিষয়ক পরিচালক।