এক সময়ে মিয়ানমার পরিচিত ছিল বার্মা নামে। সেই মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সীমান্তে এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। গত দুই সপ্তাহে কমপক্ষে এক লাখ ২০ হাজার মানুষ মিয়ানমার থেকে পালিয়েছে বলে মনে করা হয়। এসব শরণার্থী হলেন রোহিঙ্গা, তাদের বেশির ভাগই মুসলিম সম্প্রদায়ের। ২০১৩ সালে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে এদেরকে বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত সংখ্যালঘু হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এখন সেখানে যা ঘটছে তাকে ব্যাপকভাবে বর্ণনা করা হচ্ছে জাতি নির্মূলকরণ হিসেবে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দেশটির উত্তর-পশ্চিমে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে নির্মম অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এই অভিযান স্থানীয় সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে পরিচালিত হচ্ছে এবং সেক্ষেত্রে মারাত্মকভাবে আইন লঙ্ঘন হচ্ছে বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে, রোহিঙ্গা বিরোধী সহিংসতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে বেশির ভাগ মানুষ পালিয়ে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হয়েছে। মিয়ানমারের প্রকৃত নেত্রী, শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অং সান সুচি প্রকৃতপক্ষে জোর গলায় এসবের বিরুদ্ধে নিন্দা জানান নি।
উল্টো তিনি কাঁধ ঝাঁকালেন। তিনি যে মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ করেন সেখান থেকে রোহিঙ্গা বিরোধী প্রচারণাই জোরালো করা হলো। সংঘাত কবলিত এলাকায় সফর বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অবিচার ও মানবিক দুর্ভোগের বিরুদ্ধে তার অতীতের অর্জন দিয়ে বর্তমানের অবস্থানকে বিচার করা যায় না। তার এ অবস্থান হতাশাজনক।
যে সেনাবাহিনী এখন নৃশংস হত্যাকা-, গণধর্ষণ, পাশবিকতা চালাচ্ছে সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে সেই একই সেনাবাহিনী তাকে জোর করে কয়েক দশকেরও বেশি সময় গৃহবন্ধি করে রেখেছিল। তিনি এখন যে সরকারের নেতৃত্বে রয়েছেন সেখানেও সেই সেনাবাহিনী।
এ কথা সত্য যে, জেনারেলরা রাষ্ট্রের বিভিন্ন অংশ নিজেদের কব্জায় নিয়ে নিয়েছে। এখন সরকার চালাতে তাদেরকে প্রয়োজন সুচির। বাস্তব রাজনীতির আরেকটি রহস্য এটাই। এখানেই রাজনৈতিক ক্ষমতার কাছে নৈতিক কর্তৃত্বের বোঝাপড়া। নোবেল পুরস্কার পাওয়া অন্যরা এতে আতঙ্কিত। তাদের অনেকেই তাকে প্রকাশ্যে এসে নিন্দা জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
সম্প্রতি (কানাডার) প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে অটোয়াতে সাক্ষাত হয়েছে অং সান সুচির। সেখানে রোহিঙ্গা ইস্যুতে তার ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন ট্রুডো। তবে এক্ষেত্রে আরো বড়ো কিছু প্রয়োজন। সম্ভবত জুনে মিয়ানমারের বিভিন্ন প্রকল্পে ৩ কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে চেয়েছে কানাডা। এর থেকে মিসেস অং সান সুচিকে তার ২০১২ সালের নোবেল গ্রহণের বক্তব্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া যায়। তিনি বলেছিলেন- ‘বিভিন্ন জাতি ও বিশ্বাসের মানুষের দেশ হলো বার্মা। এ দেশটির ভবিষ্যত গড়ে তোলা যেতে পারে ঐক্যবদ্ধ সত্যিকার উদ্যোমের মাধ্যমে।
মিয়ানমারে এখন প্রয়োজন অং সান সুচিকে তার কণ্ঠ নতুন করে আবিস্কারের।