মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নতুন করে দেশটির সামরিক বাহিনীর অভিযান শুরুর পর ইতিমধ্যে মৃত্যুভয়ে সেখান থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে অন্তত ৯০ হাজার রোহিঙ্গা। উদ্ভূত প্রেক্ষাপটে মিয়ানমারের ‘গণতন্ত্রকামী নেত্রী ও মানবাধিকারের চ্যাম্পিয়ন’ বলে পরিচিত অং সান সু চির সমালোচনায় সরব হয়েছে বিশ্ব। দেশে দেশে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ থেকে শান্তিতে এই নোবেলজয়ীর পুরস্কার ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি তোলা হয়েছে।
গত ২৫ আগস্ট ২০টি তল্লাশিচৌকিতে হামলার ঘটনায় আবার শুরু হয় সহিংসতা। দুটি হামলার জন্যই উগ্রপন্থী রোহিঙ্গাদের দায়ী করা হয়।
এদিকে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের ওপর সম্প্রতি শুরু হওয়া নির্যাতনের বিষয়ে মুখ খোলেননি। প্রসঙ্গত, পশ্চিমা দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে সু চি ছিলেন একবিংশ শতাব্দীর গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতীক। তাঁকে এমন একটি স্থানে অধিষ্ঠিত করা হয়, যেখানে খুব কম মানুষই ঠাঁই পান।
মিয়ানমারের মানবাধিকার বিষয়ে জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংঘি এ সপ্তাহের শুরুর দিকে বলেন, হাজারো রোহিঙ্গা মানবাধিকার লঙ্ঘনের মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে আছেন। গত সোমবার ভারতের গণমাধ্যমে ইয়াংঘিকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি ‘সম্ভবত সবচেয়ে খারাপ’।
এদিকে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে সংযত আচরণ করার আহ্বান জানিয়েছেন। এক বিবৃতিতে এক মুখপাত্র তা জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর চলা নির্যাতন-নিপীড়নকে ‘গণহত্যা’র সঙ্গে তুলনা করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। তিনি বলেন, চলতি মাসের শেষে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে এই ইস্যুটি তিনি তুলবেন।
সোমবার মালদ্বীপ মিয়ানমারের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা জানায়। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নৃশংসতার প্রতিক্রিয়ায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ এক টুইট বার্তায় বলেন, মিয়ানমারের জাতিগত নির্মূল অভিযান বন্ধ করতে চাইলে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
এর আগে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান বন্ধ করতে দেশটির প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে সোমবার রাশিয়ার চেচনিয়াতেও হয় একটি বিক্ষোভ সমাবেশ।