প্রিয়জনের ভালোবাসায় সিক্ত আবদুল জব্বার

Slider জাতীয় বিনোদন ও মিডিয়া

f597714cc15fda8c21b831cd20349a78-59a7f676443e7

ঢাকা: অবিরাম বৃষ্টি ঝরছে। এরই মাঝে অগণিত মানুষ আসছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। কেউ মাথার ওপর ছাতা ধরেছেন, কেউ দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে ভিজে অপেক্ষা করছেন প্রিয় মানুষটিকে শেষবার দেখার জন্য। বৃষ্টি আর চোখের পানিতে একাকার হলো কারও কারও মুখ। বৃষ্টির পানি জমে একাকার চারদিক, এমনকি প্যান্ডেলের নিচেও পানি জমে গেছে। শিল্পী আবদুল জব্বারের প্রতি শেষবার শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষের কাছে এতটুকু বাধা হলো না বৃষ্টি। ফুলে ফুলে ভরে উঠল ‘ওরে নীল দরিয়া’র গায়কের কফিন।

একদিন আগে গতকাল বুধবার সকাল ৯টা ১০ মিনিটে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম এই শব্দসৈনিককে আজ বৃহস্পতিবার সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা জানান কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। রাষ্ট্রীয় বিধি অনুযায়ী, ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয় গার্ড অব অনার। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে তাঁর জানাজা হয়। সেখান থেকে নেওয়া হয় মিরপুরে, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্ধারিত কবরস্থানে।

গতকাল রাতে শিল্পীর নিথর দেহ ছিল বারডেম হাসপাতালের হিমঘরে। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার সকালে প্রথমে নেওয়া হয় বাংলাদেশ বেতার। সেখানে তাঁর প্রথম জানাজা হয়। ইতিমধ্যে বৃষ্টিও শুরু হয় রাজধানীতে। বৃষ্টিভেজা রাজপথ দিয়ে শিল্পী মরদেহ বহনকারী গাড়িটি বেলা সোয়া ১১টায় শহীদ মিনারে পৌঁছায়। তার আগেই সেখানে শব্দযন্ত্রে বারবার বাজছিল শিল্পীর গাওয়া কালজয়ী গানটি, সালাম সালাম হাজার সালাম…।
শহীদ মিনারের সামনে শিরীষগাছের নিচে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কালো ব্যানারের নিচে রাখা হয় সাদা কাপড়ে মোড়া শিল্পীর মরদেহ। সার বেঁধে সেখানে আসছিলেন শিল্পীর বন্ধু, কর্মজীবনের সঙ্গী, অগণিত ভক্তরা।

কে ছিলেন না এ কাতারে! শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনকে খুব কম দেখা যায় এমন আয়োজনে। মাঝে নিজেও ভুগেছেন বড় রোগে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে তিনিও হাজির শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তাঁর মুখ্যসচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ব্যক্তিগত পর্যায়ে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে শব্দসৈনিক সৈয়দ হাসান ইমাম, আশরাফুল আলম, শাহীন সামাদ, নমিতা ঘোষ, কল্যাণী ঘোষ, ইন্দ্রমোহন রাজবংশী, বুলবুল মহলানবীশ, মনোরঞ্জন ঘোষাল, সংসদ সদস্য কবি কাজী রোজী, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরউল্লাহ চৌধুরী, সংগীতশিল্পী কুদ্দুছ বয়াতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বিভিন্ন সংগঠন-প্রতিষ্ঠানের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করে জাসদ, জাসদ ছাত্রলীগ, ছাত্রলীগ, ওয়ার্কার্স পার্টি, ছাত্রমৈত্রী, সাম্যবাদী দল, গণতন্ত্রী পার্টি, ন্যাপ, ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল, বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, জাতীয় গণগ্রন্থাগার, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ, রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী সংস্থা, উদীচী।
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানো শেষে যখন শিল্পীর মরদেহ নেওয়া হচ্ছিল, তখন সমবেত সবাই গাইছিল, সালাম সালাম হাজার সালাম…। অন্য রকম আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয় এ সময়, কাঁদছিলেন অনেকেই।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সবার শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে তাঁর দ্বিতীয় জানাজা শেষে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের কবরের জন্য নির্ধারিত স্থানে সমাহিত করার প্রক্রিয়া চলছে এ প্রতিবেদন লেখার সময়।
‘সালাম সালাম হাজার সালাম’, ‘ও রে নীল দরিয়া’, ‘তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়’, ‘একবুক জ্বালা নিয়ে বন্ধু তুমি’, ‘পিচঢালা এই পথটারে ভালোবেসেছি’, ‘বন্ধু তুমি শত্রু তুমি’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় ও কালজয়ী গানের শিল্পী আবদুল জব্বার ১৯৩৮ সালের ৭ নভেম্বর কুষ্টিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৮ সাল থেকে নিয়মিত শিল্পী হিসেবে বেতারে গাইতে শুরু করেন। সংগীতে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার আবদুল জব্বারকে ‘একুশে পদক’ এবং ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’-এ ভূষিত করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *