দলে দলে আসছে রোহিঙ্গা

Slider সারাবিশ্ব

1-274

 

 

 

 

 

খাইন রাজ্যে সাম্প্রতিক সহিংতার ঘটনায় বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকানো যাচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ছে। গতকাল বুধবার সকালেও নাফনদী হয়ে শাহপরীর দ্বীপে ভেসে আসা চার রোহিঙ্গার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে দুই শিশু, দুই নারী রয়েছে। রাতেই মিয়ানমার থেকে তারা নৌকা নিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করে। এ সময় নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। বুধবার সকাল ১০টা পর্যন্ত সাগর ও নাফনদী দিয়ে টেকনাফ-সেন্টমার্টিনে অনুপ্রবেশকালে ১৫৫ জনকে আটক করা হয়। এর মধ্যে বিজিবি ৭৫ ও কোস্টগার্ড ৮০ জনকে আটক করে।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নতুন করে সহিংতার পর সেখান থেকে পালিয়ে প্রায় ১৮ হাজার রোহিঙ্গা নর-নারী ও শিশু বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে বলে ধারণা করছে শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)। তারা বলছে, নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের জিরো পয়েন্টে এখনো শত শত রোহিঙ্গা খোলা আকাশের নিয়ে রয়েছে। মিয়ানমারে সহিংসতা অব্যাহত থাকায় এখনো রোহিঙ্গারা পালিয়ে আসছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানান, বিজিবি ও কোস্টগার্ড সদস্যরা মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল ১০টা পর্যন্ত সাগর ও নাফনদী পার হয়ে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন হয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকালে ১৫৫ জন রোহিঙ্গাকে আটক করেছে। আটক ১৫৫ জন রোহিঙ্গাকে খাবার, পানি, ওষুধ ও অন্যান্য মানবিক সহযোগিতা দিয়ে নিজ নিজ সীমান্ত দিয়ে যে কোনো সময় মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে।

টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল এসএম আরিফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকালে ৭৫ জন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। তাদের ফেরত পাঠানো প্রক্রিয়া চলছে।

গতকাল বুধবার সকালে নৌকাডুবির ঘটনায় শাহপরীর দ্বীপ পশ্চিমপাড়া সাগরের তীরে ভেসে আসা চার রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা।

টেকনাফ সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান নুর হোসেন বলেন, মঙ্গলবার রাতে যে কোনো সময়ে নৌকাটি ঢেউয়ের কবলে পড়ে ডুবে যায় বলে ধারণা করা হচ্ছে। সকালে খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজন শাহপরীর দ্বীপ দক্ষিণপাড়া ও মাঝেরপাড়া সৈকত থেকে চারজনের লাশ উদ্ধার করেন বিজিবির মাধ্যমে। ডুবে যাওয়া নৌকাটির অংশ বিশেষ সৈকতের বালুতে আটকে আছে।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকাটিতে অন্তত ১৫ থেকে ২০ জন লোক থাকতে পারে। অন্যদের ভাগ্যে কি ঘটেছে এখন কিছুই বলা যাচ্ছে না। অবৈধভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময়ে এ ঘটনা ঘটেছে। এদিকে সীমান্ত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে- বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের প্রায় সর্বত্র দিয়ে রাখাইন রাজ্য থেকে দলে দলে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটেই চলছে। দায়িত্বশীল লোকজন ও স্থানীয় লোকজনের সামনে দিয়ে বিনা বাধায় এসব রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ করছে। সাথে ছোট খাট জিনিসপত্রের পাশাপাশি গবাদি পশুও নিয়ে আসছে। এ ধরনের গবাদিপশু ছিনতাই করে পাচারকালে ১৩৪টি গরুসহ আটজন পাচারকারীকে বিজিবি আটক করেছে। রোাহিঙ্গা অনুপ্রবেশে স্থানীয় দায়িত্বশীলদের শৈথিল্যতায় দালালরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এ যেন কারো পৌষ মাস, আবার কারো সর্বনাশ।

বুধবার সকাল থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত পাহাড়ি সীমান্তের আমতলী, গর্জন বনিয়া, ফাত্রাঝিরিসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ সীমান্ত দিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সকলে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের উত্তর মংডু এলাকার ফকিরাবাজার থানার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। ফকিরা বাজার, লেমচি মির্জা আলীপাড়া, ধুমবাই, বাদলা, রেইক্কা পাড়াসহ বিভিন্ন গ্রামের আগত রোহিঙ্গারা জানান শুক্রবার সকাল থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রতিদিন কয়েক দফা করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড পুলিশ বিজিপি ও স্থানীয় মগ রাখাইনরা যৌথভাবে রোহিঙ্গা মুসলিম পাড়ায় হামলা চালাচ্ছে। এদের আসতে দেখলে স্থানীয় পাড়া গ্রামের রোহিঙ্গারা নারী-শিশুদের নিয়ে পার্শ্ববর্তী জঙ্গল ও পাহাড়ে উঠে আশ্রয় নেয়। এ সময় তারা ঘরবাড়ি তল্লাশি করে যাদের পাচ্ছে তাদের বেদম মারধর করছে, কিরিচ ও চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হতা হত করছে। মিলিটারিরা হয় গুলি করছে নয়ত বেয়নট দিয়ে খুঁচিয়ে গুরুতর আহত করছে।

সেনাবাহিনী ও রাখাইন মগদের অত্যাচারের ভয়ে লোকজন পালিয়ে যাওয়ার সুযোগে তারা রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি তল্লাশি করে মূল্যবান সহায় সম্পদ লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে হাঁস মুরগি, গবাদিপশু লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। এর পরও যেভাবে পারছে কিছু গবাদিপশু সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। দীর্ঘপথ হেঁটে আসার সময় স্থানীয় লোকজন এসব গবাদি পশু কেনার নামে ছিনিয়ে নিচ্ছে। অচেনা-আজানা পরদেশে কাউকে কিছু বলার কোনো সুযোগ না থাকায় নিজ দেশে সব কিছু হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েও অনেক রোহিঙ্গা নিরাপদ হচ্ছে না ও নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত ২৪ আগস্ট রাতে রাখাইন রাজ্যে একসঙ্গে ২৪টি পুলিশ ক্যাম্প ও একটি সেনা নিবাসে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে।

এরপর ‘সন্ত্রাসীদের’ সঙ্গে দেশটির নিরাপত্তাকর্মীদের সংঘর্ষে প্রায় একশ’ জন নিহত হন। এর মধ্যে ১২ নিরাপত্তাকর্মী ও বাকিদের ‘সন্ত্রাসী’ বলে দাবি করেছে মিয়ানমার সরকার।

জাতিগত দ্বন্দ্বের জেরে গত কয়েক দশকে ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গা এদেশে আশ্রয় নিয়েছে বলে দাবি সরকারের। তাদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে আসছে বাংলাদেশ। তবে এখনো প্রত্যাশিত সাড়া দেয়নি মিয়ানমার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *