রাজস্ব-সংক্রান্ত মামলায় নিজেদের পক্ষে চূড়ান্ত রায় পাওয়ার পর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও, দ্য ওয়েস্টিন ঢাকা, রূপসী বাংলা ও র্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন বরাবর নোটিস পাঠিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গত মঙ্গলবার পাঠানো ওই নোটিসে সাত কার্যদিবসের মধ্যে রাজস্ব বাবদ সুদসহ ১০০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলোকে। অন্যথায় তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ)।
এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, ২০০৫ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ছয় বছরে পণ্য বিক্রি ও বিনোদনমূলক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের বিপরীতে নির্ধারিত সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট পরিশোধ করেনি হোটেলগুলো। মূসক নিরীক্ষা ও তদন্ত অধিদপ্তর এবং এলটিইউর কর্মকর্তাদের যৌথ নিরীক্ষায় এর প্রমাণ মিললে ২০১৫ সালে হোটেলগুলোর কাছে দাবিনামা পাঠায় এনবিআর। দাবিকৃত এ রাজস্ব পরিশোধ না করায় পরে মামলা করে সংস্থাটি। এর বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে রিট পিটিশন দায়ের করে প্রতিষ্ঠানগুলো। হাইকোর্ট সরকারের পক্ষে রায় দিলে এর বিরুদ্ধে সিভিল প্রসিডিউর (সিপি) দায়ের করে হোটেল কর্তৃপক্ষ। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ গত ১৩ জুলাই এটি খারিজ করে দেয়ায় আবারো দাবিনামা পাঠিয়েছে এনবিআর।
জানতে চাইলে এলটিইউ ভ্যাটের কমিশনার মো. মতিউর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, এনবিআরের নিরীক্ষায় ৫৪ কোটি টাকা সম্পূরক শুল্ক ফাঁকির প্রমাণ পেলেও তা পরিশোধ না করায় এটি সুদসহ ১০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। আদালতের রায়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুদসহ পরিশোধের নির্দেশ দেয়ায় সে মোতাবেক দাবিনামা জারি করা হয়েছে। এ অর্থ পরিশোধে প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাত কার্যদিবস সময় দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সাড়া না দিলে তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হবে। তবে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সময় নিলে বা কিস্তিতে পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিলে কিছুদিন সময় দেয়া হতে পারে।
এলটিইউ বলছে, মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ১৯৯১-এর অধীন জারি করা এসআরও ০০০১.১০ অনুযায়ী অভিজাত হোটেলগুলোয় বিভিন্ন ধরনের বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের জন্য ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক রয়েছে। এসব সেবার বিপরীতে বিলের ওপর এ সম্পূরক শুল্ক প্রযোজ্য হবে। কোনো প্রতিষ্ঠানে বছরে একদিন এ ধরনের অনুষ্ঠান হলেও তাদের সম্পূরক শুল্ক পরিশোধের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
এ ধরনের সেবা বাবদ এনবিআরের সবচেয়ে বেশি রাজস্ব পাওনা রয়েছে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের কাছে। ২০০৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১১-এর এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির কাছে বকেয়া পড়েছে ২০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ২০০৯ সাল থেকে বকেয়া অর্থের বিপরীতে ২ শতাংশ সুদ ও জরিমানাসহ বর্তমানে নিট বকেয়া দাঁড়িয়েছে ৪০ কোটি টাকা।
হোটেল ওয়েস্টিনের কাছে ২০০৮-০৯ সাল পর্যন্ত বকেয়া রাজস্বের পরিমাণ ৭ কোটি ১৩ লাখ ও হোটেল র্যাডিসন ব্লুর কাছে ২০০৫-০৯ পর্যন্ত সময়ে এনবিআরের পাওনা ৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। সুদসহ এ দুটি প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রায় ২৫ কোটি টাকা ভ্যাট দাবি করেছে এনবিআর। এছাড়া হোটেল রূপসী বাংলার (বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেড) কাছেও ৩৫ কোটি টাকার দাবিনামা পাঠিয়েছে রাজস্ব আহরণকারী সংস্থাটি।
জানতে চাইলে হোটেল ওয়েস্টিনের স্বত্বাধিকারী ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের কোম্পানি সেক্রেটারি মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, হোটেল-রেস্তোরাঁয় এ ধরনের অনুষ্ঠানের ওপর ২০০৮ সালের জুনে প্রথম সম্পূরক শুল্ক আরোপ করে সরকার। কিন্তু এনবিআরের পক্ষ থেকে এ রাজস্ব দাবি করা হয় ওই বছরের জানুয়ারি থেকে। এনবিআরের নির্দেশনা না পাওয়ায় আগের বিলের ওপর কোম্পানিগুলো ভ্যাট কর্তন করেনি। গ্রাহকদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় না করায় ও আগের বছরের হিসাব সম্পন্ন করে ফেলায় নতুন করে তা পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণেই সবগুলো হোটেলের পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে আপিল করা হয়েছিল।
আদালতের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি ও এনবিআরের নতুন দাবিনামার চিঠি এখনো পাননি জানিয়ে শরিফুল ইসলাম বলেন, এনবিআরের চিঠি পেলে কোম্পানির পক্ষ থেকে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।