=
দেশে প্রতি বছর বৈধ পথে প্রায় তিন কোটি হ্যান্ডসেট আমদানি হয়। এর বাইরে আরো প্রায় অর্ধকোটি হ্যান্ডসেট আসে অবৈধ পথে। প্রতি বছর হ্যান্ডসেট আমদানিতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। এটি রোধ করতে দেশেই হ্যান্ডসেট সংযোজন ও উৎপাদন কারখানার অনুমোদন দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এরই মধ্যে এ ধরনের কারখানার অনুমোদন প্রদানের জন্য একটি খসড়া নির্দেশনা তৈরি করেছে কমিশন।
নির্দেশনা অনুযায়ী, ক্যাটাগরি ‘এ’ ও ক্যাটাগরি ‘বি’— এ দুই শ্রেণীতে হ্যান্ডসেট সংযোজন, উৎপাদন ও বাজারজাতের সনদ দেবে বিটিআরসি। ‘এ’ শ্রেণীর সনদ নিতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব টেস্টিং ল্যাব থাকতে হবে। এ সনদের জন্য ফি ধরা হয়েছে ১০ থেকে ৫০ লাখ টাকা। আর নবায়ন ফি ৫ লাখ টাকা। ‘বি’ শ্রেণীর সনদের জন্য ফি হবে ৫ থেকে ২০ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে নবায়ন ফি ২ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। এ শ্রেণীর প্রতিষ্ঠানের জন্য টেস্টিং ল্যাব স্থাপনের বাধ্যবাধকতা নেই। তবে হ্যান্ডসেটের মান যাচাইয়ে বিটিআরসি অনুমোদিত টেস্টিং ল্যাবের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে হবে তাদের। চুক্তিতে হ্যান্ডসেটের মান নিয়ন্ত্রণের জন্য টেস্টিং ল্যাবের চার্জ ও সময়সীমা উল্লেখ থাকবে।
হ্যান্ডসেট ব্যবহারকারীদের বিক্রয়োত্তর সেবা নিশ্চিত করতে দেশের প্রত্যেক জেলায় ন্যূনতম একটি সার্ভিস সেন্টার স্থাপন করতে হবে। এছাড়া ঢাকায় ন্যূনতম চারটি, চট্টগ্রামে তিনটি ও বিভাগীয় শহরগুলোয় দুটি করে সার্ভিস সেন্টার স্থাপনের বাধ্যবাধকতা থাকছে নির্দেশনায়।
নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছে, ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে কারখানার ই-বর্জ্য সংগ্রহ স্থান নির্দিষ্ট করতে হবে।
রিসাইক্লিং করার আগ পর্যন্ত এসব বর্জ্য পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী সংরক্ষণ করতে হবে। ই-বর্জ্য রিসাইক্লিংয়ের জন্য বিটিআরসির কাছে বছরে ন্যূনতম একবার আবেদন করতে হবে। এছাড়া ই-বর্জ্যের পরিমাণ ও রিসাইক্লিংয়ের তথ্য প্রতি ছয় মাস পরপর কমিশনকে জানাবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্থানীয়ভাবে সেলফোন হ্যান্ডসেট সংযোজন ও উৎপাদনের উদ্যোগ নেয়া হলে প্রতি বছর বৈদেশিক মুদ্রার একটি অংশ দেশের বাইরে চলে যাওয়া ঠেকানো সম্ভব। পাশাপাশি দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ ও দক্ষ জনবল তৈরি হবে। এছাড়া সুলভমূল্যে সেলফোন হ্যান্ডসেটপ্রাপ্তির সুযোগ পাওয়া যাবে, যাতে টেলিঘনত্ব বৃদ্ধি পাবে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যাও এতে বাড়বে। এমনকি এ শিল্প স্থাপনের ফলে ভবিষ্যতে সেলফোন হ্যান্ডসেট রফতানিরও সুযোগ সৃষ্টি হবে।
জানা গেছে, এরই মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠান দেশে হ্যান্ডসেট সংযোজন ও উৎপাদন কারখানা স্থাপনের অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি হ্যান্ডসেট আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছে কমিশন। এর ভিত্তিতে নির্দেশিকাটি তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
বিটিআরসির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে বলেন, স্থানীয়ভাবে হ্যান্ডসেট সংযোজন ও উৎপাদন উত্সাহিত করার লক্ষ্যে এ নির্দেশনার খসড়া তৈরি করা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে হ্যান্ডসেট সংযোজন ও উৎপাদনের মাধ্যমে দেশে হ্যান্ডসেটের আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা সম্ভব।
দেশে গত ১০ বছরে সেলফোন হ্যান্ডসেটের আমদানি কয়েক গুণ বেড়েছে। ২০০৬ সালে দেশে হ্যান্ডসেট আমদানি হয় ৪২ লাখ। গত বছর হ্যান্ডসেট আমদানি হয়েছে ২ কোটি ৭০ হাজারের বেশি। বর্তমানে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার বাজার রয়েছে এ খাতটির।
মূলত ২০০৫ সালের পর থেকেই দেশে সেলফোনের গ্রাহক সংখ্যায় উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি ঘটে। এর আগে সেলফোন অপারেটরদের গ্রাহক সংখ্যা কোটিরও নিচে ছিল। ২০০৭ সালে তিন কোটি, ২০০৮ সালে চার কোটি, ২০০৯ সালে পাঁচ কোটি, ২০১০ সালে ছয় কোটি, ২০১১ সালে আট কোটি, ২০১২ সালে নয় কোটি ও ২০১৩ সালে ১১ কোটির অংক ছুঁয়েছে সেলফোনের গ্রাহক সংখ্যা।
বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমপিআইএ) হিসাব অনুযায়ী, ২০১৬ সালে বিক্রি হওয়া তিন কোটি ইউনিট সেলফোন হ্যান্ডসেটের মধ্যে স্মার্টফোন বিক্রি হয়েছে ৮০ লাখের বেশি। এ হিসাবে গত বছর বিক্রি হওয়া ফোনের মধ্যে স্মার্টফোনের বাজার হিস্যার পরিমাণ ২৬ থেকে ২৭ শতাংশ। আগের বছর দেশের বাজারে ৬০ লাখ স্মার্টফোন বিক্রি হয়েছিল।
উল্লেখ্য, হ্যান্ডসেট আমদানিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে অনাপত্তিপত্র সংগ্রহ করতে হয় তালিকাভুক্ত আমদানিকারকদের। বিটিআরসির স্পেকট্রাম ম্যানেজমেন্ট (এসএম) বিভাগ থেকে এ অনাপত্তিপত্র দেয়া হয়।