এখনো অব্যাহত রয়েছে রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞ।মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া বোমায় প্রকম্পিত হচ্ছে রাখাইন রাজ্যের মুসলিম রোহিঙ্গা পল্লীগুলো। আপনজন হারিয়ে নিজের জীবন বাঁচাতে শত শত শিশু, নারী-পুরুষ ১৫-২০ ঘণ্টা পায়ে হেঁটে আশ্রয় নিতে চেয়েছিল তুমব্র ও ঘুমধুম সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে। কিন্তু এখানেও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ’র (বিজিবি) বাঁধা। অবশেষে নিরুপায় হয়ে শত শত রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে জিরো পয়েন্টে খোলা আকাশের নিচে।
মঙ্গলবার সকালে তুমব্রু কোনা পাড়া আম বাগানে আশ্রয় নেয়া মংডু ফকিরবাজার এলাকার আবুল কালামের বড় ছেলে শফি উল্ল্যাহ জানান, সোমবার বিকাল থেকে সারা রাত প্রায় ১৫ ঘণ্টা পায়ে হেঁটে পাহাড়ী পথে কিছুক্ষন আগে এখানে পোঁছান। তিনি আক্ষেপ করে বলেন ‘আসতে চাইনি, চার দিন ধরে কয়েকশ’ গ্রামবাসীর সঙ্গে মিয়ানমারের আর্মি, পুলিশ ও বিজিপির লড়াই হয়েছে। তাদেরকে আমরা গ্রামে ঢুকতে দেইনি। লাঠিসোটা নিয়ে যতটুকু সম্ভব প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলাম। শেষ পর্যন্ত তাদের সঙ্গে আর পারিনি। ’
তিনি বলেন, ‘রবিবার দুপুরের আগে কয়েকটি হেলিকপ্টার এসে আমাদের গ্রামে সাতটি বড় বড় বোমা বিস্ফোরন ঘটায়। বোমার বিকট শব্দে কেপে উঠে পুরো এলাকা, সঙ্গে সঙ্গে পুরো এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। এসময় গ্রামবাসী লাঠিসোটা নিয়ে বের হলেও কোনো কাজ হয়নি। কারণ বোমা বিস্ফোরণ ঘটানোর পাশাপাশি হেলিকপ্টার থেকে আমাদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়েছে। এতে কয়েকজন গ্রামবাসী মারা যাওয়ার পর আমরা ভয়ে পাহাড়ি পথে বাংলাদেশে চলে আসি।
তুমব্র সীমান্তের জিরো পয়েন্টে আশ্রয় নেয়া আয়েশা বিবি, মাবিয়া খাতুন, আবু শরিফ ও মোস্তফা জানান, মিয়ানমারের আর্মি ও রাখাইন (মগ) যুবকরা সন্ত্রাস দমনের নামে আমাদের পাড়াতে এবং ঘর বাড়িতে হামলা চালাচ্ছে। তারা তল্লাশী চালিয়ে নারীদের ধর্ষণ করছে এবং পুরুষদের হত্যা করছে। আমাদের বাড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগ করে পুঁড়িয়ে লণ্ডভণ্ড করেছে। আমরা ভয়ে এখানে পালিয়ে এসেছি।
তারা আরো জানান, আমরা এখনো ওপার থেকে থেমে থেমে গুলি ও বোমার আওয়াজ শোনতে পাচ্ছি। একই সময়ে মিয়ানমারের ভেতরে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। এখান থেকে ওপারে গ্রামগুলিতে আগুন ও ব্যাপক পরিসরে ধোঁয়া দেখা যায়। ধারণা করা হচ্ছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যাযজ্ঞ এবং জ্বালাও-পোড়াও অব্যাহত রেখেছে।
এসময় তারা কান্নাকাটি করে বলেন, মিয়ানমার আর্মির বন্দুকের গুলি থেকে বাঁচতে আমরা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে এসেছি কিন্তু তাতে বিজিবি ঢুকতে দিচ্ছেনা। আমরা বাধ্য হয়ে জিরো পয়েন্টে আশ্রয় নিয়েছি। দুধের মাসুম বাচ্চাদের নিয়ে খোলা আকাশের নিচে পানির পিপাসায় এবং ক্ষুধার যন্ত্রণায় কলিজা ফেটে যাচ্ছে। এভাবে আর ২/১ দিন থাকলে সবাই মারা যাব।
জানা যায়, মিয়ানমার আর্মির গুলিতে আহত অনেকে বাংলাদেশে এসেছেন। এদের মধ্যে কমপক্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান মুসা ও এয়াকুব। বাংলাদেশে আসার পথে মারা গেছেন হাফেজ হারুন। গুলিবৃদ্ধ অবস্থায় বাংলাদেশে আসার পথে আরও দু’জন নিহত হন। আহত কমপক্ষে একশ’জন বাংলাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এদের মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৪ জন, কক্সবাজারের বিভিন্ন হাসপাতালে ৩৩ জন এবং ডুলাহাজরা হাসাপাতালে ভর্তি হয়েছে তিনজন।