সেক্ষেত্রে দুইটি সাজা একসঙ্গে খাটা যাবে না অর্থাৎ রাম রহিমকে মোট ২০ বছর জেল সাজা ভোগ করতে হবে। একইসঙ্গে দুইটি মামলাতেই ১৫ লাখ রুপি করে মোট ৩০ লাখ রুপি জরিমানা করা হয়েছে তাঁকে। পাশাপাশি ধর্ষিতা দুই নারী শিষ্যাকেই আরও বাড়তি ১৪ লাখ রুপি করে তুলে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে রাম রহিমকে।
রাম রহিম সিং’এর আইনজীবী এস.কে.নরওয়ানা জানান ‘দুইটি আলাদা আলাদা মামলায় বিচারক রাম রহিমকে ১০ বছর করে বিশ বছরের জেল জরিমানা করেছে এবং ১৫ লাখ করে দুই নির্যাতিতাকে মোট ৩০ লাখ রুপি জরিমানা দিতে বলেছে এবং একটি সাজা শেষের পর আরেকটি সাজা শুরু হবে বলেও জানান তিনি। যদিও এই রায়ের বিরোধিতা করে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হবে বলে জানিয়েছেন রাম রহিমের আইনজীবী।
সোমবার দুপুর সাড়ে তিনটা নাগাদ রাম রহিমের সাজা ঘোষনা করে আদালতের বিচারক জগদীপ সিং লোহানি। নিরাপত্তাজনিত কারণেই পাঁচকুলার বদলে রোহতাক থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে সুনারিয়া জেলা সংশোধনাগারে বসানো হয় বিশেষ সিবিআই আদালত। এই জেলেই বন্দি রয়েছেন গুরমিত। পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের নির্দেশে সেই জেলের ভিতরেই অস্থায়ী এজলাস তৈরি করে সেখানেই গুরমিতের সাজা ঘোষনা হয়।
দুপুর আড়াইটা নাগাদ শুরু হয়ে সাজা ঘোষনার প্রক্রিয়া। বিচারক দুই পক্ষকেই ১০ মিনিট করে বলার সময় দেন। সেসময়ই অস্থায়ী এজলাসে উপস্থিত বিচারকের সামনে নাটকীয় ভঙ্গিমায় সাদা পাঞ্জাবী ও পাজামা পরিহিত রাম রাম রহিম হাত জোড় করে জানান ‘আমি ভুল হয়ে গেছে, ক্ষমা করে দিন’। নিজেকে একজন সমাজসেবী হিসাবে দাবি করে তিনি আরও জানান ‘আমি লোকের ভালোর জন্যই কাজ করেছি’।
রাম রহিমের আইনজীবীও আদালতের কাছে আর্জি জানায় রাম রহিম সিং একজন সমাজসেবী, তিনি সমাজের কল্যাণে নানা কাজ করেছেন, তাই কম শাস্তি দেওয়া হোক। দুই পক্ষের বক্তব্য শুনে বেলা সাড়ে তিনটা নাগাদ রাম রহিমের সাজা ঘোষনা করা হয়। রাম রহিমকে কারাগারের মধ্যে বিশেষ মর্যাদা না দিয়ে অন্য সাধারণ আসামীর মতো আচরণ করার কথাও বলে আদালত।
এদিকে সাজা ঘোষনার পরই অস্থায়ী আদালতেই আরেক দফা নাটক শুরু করেন রাম রহিম। আদালতের এই রায়কে প্রথমে মানতে রাজি হন নি তিনি। ওই রায়ের প্রতিবাদে অস্থায়ী আদালতের বাইরেই বসে পড়ে কাঁদতে থাকেন রাম রহিম। শরীর খারাপ লাগছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
এরপরই অ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসককে ডেকে পাঠানো হয়। নিরাপত্তারক্ষীদের সাথেও অসহযোগিতা করেন তিনি। এর পর একপ্রকার জোর করেই টেনে হিঁচড়ে তাকে বাইরে বের করা হয়। পরে মেডিকেল চেকআপ করে চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
এরপরই জেলের পোশাক পরে তাকে কারাগারে ভিতর নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে সাজা ঘোষনার কিছু আগেই হরিয়ানার সিরসায় দুইটি বাসে অগ্নিসংযোগ ঘটায় রাম রহিমের ভক্তরা। এমনকি সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের কেও হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
এর আগে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে হেলিকপ্টারে করে মামলার বিচারক জগদীপ সিংহ’কে রোহতাক জেলে নিয়ে আসা হয়। এজন্য জেলের ভিতরেই বানানো হয় অস্থায়ী হেলিপ্যাড। এজলাস বসাতে গেলে যত কর্মীর প্রয়োজন তাদেরও ঠিক একইভাবে হেলিকপ্টারে করে উড়িয়ে আনা হয়।
গত শুক্রবারই হরিয়ানার পাঁচকুলা সিবিআই’এর বিশেষ আদালত ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্ত রাম রহিমকে ভারতীয় দন্ডবিধির ৩৭৬ (ধর্ষণ), ৫০৬ (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র) এবং ৫০৯ (নারীর শালীনতাকে অপমানিত ও কুৎসিত অঙ্গভঙ্গি করা) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করার পরই হরিয়ানা, পাঞ্জাব, দিল্লি সহ একাধিক জায়গায় তান্ডব চালায় গুরমিতের ভক্তরা। সহিংসতায় নিহত হয় ৩৮ জন, আহত হয় অন্ততপক্ষে ২৫০ জন। অগ্নিসংযোগ ঘটনানো হয় বাস, ট্রেন, রেলওয়ে স্টেশন, সরকারি ভবন, সংবাদমাধ্যমের ওবি ভ্যান’এও।
ওই ঘটনায় দেশজুড়ে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে কেন্দ্রের মোদি সরকার এবং হরিয়ানার বিজেপি শাসিত মনোহর লাল খাট্টুর সরকার। এমনকি পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টও সরকারের এই উদাসীনতা নিয়ে তিরস্কার করে।
স্বাভাবিকভাবেই সাজা ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আর যাতে কোন অপ্রতীকির ঘটনা না ঘটে সেদিকে লক্ষ্য রেখে সোমবার হরিয়ানা ও পাঞ্জাব জুড়ে নিরপত্তা আটসাটো করা হয়। সুনারিয়া জেল চত্তর কার্যত দুর্গে পরিণত করা হয়। গোটা জেল চত্তরকে ঘিরে ছিল ২৩০০ সেনা। সঙ্গে ছিল দাঙ্গা মোকাবিলা বাহিনীও’। তবে শুধু জেল চত্তরই নয় আশপাশের এলাকাও কার্যত নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছিল। জেলে প্রবেশের প্রতিটি পথেও কড়া নজরদারি চালানো হয়। অশান্তি ঠেকাতে বন্ধ রাখা হয় ইন্টারনেট পরিসেবাও। বন্ধ রাখা হয় হরিয়ানার স্কুল,কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সহ সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।