শ্রমিকদের ২৪ আগস্টের মধ্যে উৎসব ভাতা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন শিল্প মালিকরা। যদিও সে প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেননি অনেকেই। শিল্প অধ্যুষিত প্রধান দুই অঞ্চল গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের মাত্র ২৫ শতাংশ কারখানা শ্রমিকদের উৎসব ভাতা পরিশোধ করেছে। ৭৫ শতাংশ কারখানার শ্রমিকই এখনো উৎসব ভাতা পাননি।
ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনার শিল্পাঞ্চলে সব খাত মিলিয়ে কারখানা রয়েছে সাড়ে ছয় হাজারেরও কিছু বেশি। এর মধ্যে পোশাক কারখানা রয়েছে ৩ হাজার ২৭৮টি। বাকিগুলো অন্যান্য খাতের। শিল্প পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা ও চট্টগ্রাম শিল্পাঞ্চলে উৎসব ভাতা পরিশোধকারী কারখানার হার কিছুটা বেশি হলেও তা ৬০ শতাংশের নিচে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকা অঞ্চলের ৫৬ শতাংশ কারখানা শ্রমিকদের উৎসব ভাতা দিয়েছে। আর চট্টগ্রাম অঞ্চলে উৎসব ভাতা পরিশোধ করেছে ৪৩ শতাংশ কারখানা।
জানতে চাইলে শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. নওশের আলী বণিক বার্তাকে বলেন, গাজীপুরে উৎসব ভাতা পরিশোধের হার কিছুটা কম। তবে আমাদের আওতাধীন সব এলাকা মিলিয়ে বোনাস হয়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ কারখানায়। আগামীকাল ও পরশুর মধ্যে বাকি কারখানাগুলোয়ও প্রাপ্য পরিশোধ সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি।
‘শিল্প পুলিশ-১ ঢাকা’র আওতায় রয়েছে আশুলিয়া, সাভার, ধামরাই এলাকার মোট ১ হাজার ৭৩টি কারখানা। এর সিংহভাগই বস্ত্র ও পোশাক খাতের। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত এ অঞ্চলের মোট ৬০৩টি কারখানা উৎসব ভাতা পরিশোধ করেছে। এ হিসাবে ৪৪ শতাংশ কারখানা এখনো উৎসব ভাতা পরিশোধ করেনি। এগুলোর মধ্যে কিছু কিছু কারখানা নিয়ে দুশ্চিন্তাও রয়েছে। এ অঞ্চলের এমন একটি কারখানা লিন্ডা ফ্যাশন।
‘শিল্প পুলিশ-২ গাজীপুর’-এর আওতায় রয়েছে ১ হাজার ৮০০টির বেশি কারখানা। বেতন-বোনাস নিয়ে অসন্তোষের আশঙ্কা ছিল ১৩২টি কারখানায়। এর মধ্যে ১৩টি বাদে অন্য কারখানাগুলো পোশাক খাতের। গতকাল পর্যন্ত এ এলাকায় সর্বোচ্চ ২৪ শতাংশ কারখানা উৎসব ভাতা পরিশোধ করেছে বলে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
১ হাজার ৮টি কারখানা রয়েছে ‘শিল্প পুলিশ-৩ চট্টগ্রাম’-এর আওতায়। এর মধ্যে ৬৫টিতে অসন্তোষ হতে পারে বলে ধারণা করছে শিল্প পুলিশ। এই ৬৫টি কারখানার মধ্যে ছয়টি বাদে অন্যগুলো পোশাক শিল্পের। গতকাল পর্যন্ত পোশাক ও অন্যান্য খাত মিলিয়ে এ অঞ্চলের প্রায় ৪৩ শতাংশ কারখানার শ্রমিক উৎসব ভাতা পেয়েছেন বলে জানিয়েছে শিল্প পুলিশ কর্তৃপক্ষ।
‘শিল্প পুলিশ-৪ নারায়ণগঞ্জ’-এর আওতায় রয়েছে ২ হাজার ৪৪২টি কারখানা। এ অঞ্চলে শ্রম অসন্তোষের আশঙ্কায় থাকা কারখানার সংখ্যা ৭২। এর মধ্যে ৫১টিই পোশাক খাতের। গতকাল সন্ধ্যায় এ অঞ্চলের শিল্প পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ কারখানা উৎসব ভাতা পরিশোধ করেছে বলে জানায়।
পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সূত্রমতে, মোট ৮০০টি পোশাক কারখানা কঠোর নজরদারির মধ্যে আছে। এর মধ্যে ১০-১২টি কারখানায় বেতন-বোনাস নিয়ে সমস্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বিজিএমইএ। গত এক সপ্তাহে প্রায় ৩০টি কারখানায় সমস্যা দেখা দিলে তা বিজিএমইএর হস্তক্ষেপে মীমাংসা হয়। গাজীপুরের ক্যাপ্রি ও মেহেরুন্নেসার মোট পাঁচটি ইউনিটে ঈদের আগেই শ্রমিকদের প্রাপ্য নিয়ে উদ্ভূত সমস্যা নিরসনে মালিক-শ্রমিকের মধ্যে সমঝোতা চুক্তিও হয়েছে। কত শতাংশ কারখানায় উৎসব ভাতা পরিশোধ হয়েছে, সে পরিসংখ্যান না দিলেও অধিকাংশ কারখানায় পরিশোধ হয়েছে বলে দাবি সংগঠনটির।
পোশাক শ্রমিকরা যাতে উৎসব ভাতা পান, সেজন্য সব কারখানায় কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে বলে জানান বিজিএমইএর সহসভাপতি এসএম মান্নান কচি। তিনি বলেন, যেগুলোয় সমস্যা দেখা দিচ্ছে, সেগুলোয় আমরা সমঝোতা করছি। সমস্যা আছে, এমন কারখানা মালিকদের আমরা বলেছি, যেভাবেই হোক শ্রমিকের প্রাপ্য যেন বুঝিয়ে দেয়া হয়।
শিল্প পুলিশ ও শ্রমিক প্রতিনিধিরা জানান, সব কারখানা কর্তৃপক্ষই শ্রমিকদের উৎসব ভাতা দিচ্ছে সমঝোতার ভিত্তিতে। আইনে সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা না থাকায় অধিকাংশ কারখানাই শ্রমিকদের উৎসব ভাতা হিসেবে মূল বেতনের অর্ধেক অর্থ দিয়েছে। শুধু বড় কারখানাগুলো মূল বেতনের সমপরিমাণ উৎসব ভাতা পরিশোধ করেছে। মাঝারি ও ক্ষুদ্র কারখানার কেউ ৫০, কেউ ৩০, আবার কেউ ৪০ শতাংশ হারে উৎসব ভাতা পরিশোধ করেছে।
জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, বড় কারখানার শ্রমিকরা মূল বেতনের ৮০ শতাংশ আর ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানার শ্রমিকরা পেয়েছেন ৫০ শতাংশ হারে।
তার পরও সব কারখানায় উৎসব ভাতা পরিশোধ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক ড. মো. আনোয়ার উল্ল্যাহ। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী বেতন-বোনাস পরিশোধ হচ্ছে। বোনাস নিয়ে বড় কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। অধিকাংশ কারখানা উৎসব ভাতা পরিশোধ করেছে।