পলায়নরত রোহিঙ্গাদের গুলি করছে মিয়ানমার সেনারা

Slider সারাবিশ্ব
পলায়নরত রোহিঙ্গাদের গুলি করছে মিয়ানমার সেনারা

বাংলাদেশের ঘুমঘুম সীমান্তের কাছাকাছি এলাকা থেকে মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা পলায়নরত শত শত রোহিঙ্গাদের উপর এক ডজনের বেশি মর্টার সেল নিক্ষেপের পাশাপাশি এবং মেশিন গানের গুলি বর্ষণ করছে। বার্তা সংস্থা এএফপি তাদের এক প্রতিবেদকের বরাত দিয়ে জানিয়েছে। খবর আল জাজিরা।

শনিবার (২৬ আগস্ট) বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) স্টেশন প্রধান মানজারুল হাসান খান গুলি চালানো বিষয়টি নিশ্চিত করে সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরাকে জানান, জিরো লাইনের কাছাকাছি পাহাড়ে অবস্থান নেয়া বেসামরিক লোকজন বিশেষ করে নারী শিশুদের উপর গুলি চালানো হয়েছে। মূলত মেশিন গান ব্যবহার করে গুলি চালালেও মাঝে মাঝে মর্টার সেল ব্যবহার করতে দেখা গেছে। মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনী বিজিবির সাথে কোন ধরনের আলোচনা করেনি।

ইউরোপিয়ান রোহিঙ্গা কাউন্সিলের কর্মকর্তা আনিতা সেহাগ আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, তাদের সংগঠন গুলি চালানোর বিষয়টি খতিয়ে দেখবে। যদি এ ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায় তবে তাদের কাছে থাকা এ সংক্রান্ত ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করা হবে।

আনিতা আরো বলেন, বার্মিজ সেনা এবং রাখাইন চরমপন্থীরা মিলে ছুরি, তলোয়ার, চাপাতি এবং বন্ধুক নিয়ে নিরপরাধ রোহিঙ্গা বেসামরিক লোকেদের উপর হামলা চালাচ্ছে।

রোহিঙ্গাদের রাজ্য রাখাইনে নতুন করে অস্থিরতা দেখা দেয়ায় সহিংসতা থেকে বাঁচতে পালিয়ে আসা হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশ সীমান্তে আটকা পড়েছে।

শনিবার (২৬ আগস্ট) বিকালে কক্সবাজারে একটি রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে মোহাম্মদ নূর নামের একজন রোহিঙ্গা নেতা বার্তা সংস্থা এপিকে জানিয়েছে, তিনি শুনেছেন প্রায় ১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য সীমান্তে জড়ো হয়েছে। তবে এ সংখ্যার সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

রয়টার্স বলছে, বাংলাদেশের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে রিফিউজিদের প্রবেশের ব্যাপারে কঠোর মনোভাব দেখালেও শেষ পর্যন্ত তারা রিফিউজিদেরকে দেশটিতে প্রবেশ করতে দেয়। ফলস্বরুপ এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে। গত বছর অক্টোবরেই বাংলাদেশে ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে।

ঘটনাস্থলে থাকা এএফপির একজন প্রতিবেদক জানিয়েছেন, শনিবার সকালে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর টহল শিথিল থাকায় একশর বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে যাদের কেউ কেউ সাতার কেটে নাফ নদী পার হয়েছে।

এদিকে শনিবার সকালে মিয়ানমারে গুলিবিদ্ধ হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করা দুই রোহিঙ্গার একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এদিন রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে দুই পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময়ের শব্দ শোনা গেছে।

গত শুক্রবার (২৫ আগস্ট) মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী এবং রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের মধ্যে সংগঠিত সংঘাতে এখন পর্যন্ত ৯২ জন নিহত হয়েছে যাদের মধ্যে ১২ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য রয়েছে। সাম্প্রতিক এ উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দু রাথিং ডং শহর। কয়েক সপ্তাহ আগে এখানে বিপুল সংখ্যায় মিয়ানমার সেনা সমাগম ঘটানো হয়। অভিযোগ আছে বিদ্রোহ দমনের নামে পার্বত্য এ অঞ্চলে বেছে বেছে হত্যা ও নিপীড়ন চালানো হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে শুক্রবার ওই হামলার ঘটনা ঘটে।

দি আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) নামের একটি গ্রুপ এক টুইট পোষ্টে এই হামলার দায় স্বীকার করলেও হতাহতের বা হামলায় কত জন অংশগ্রহণ করেছে সে সর্ম্পকে কিছু জানায়নি। এআরএসএ তাদের পোষ্টে মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণের অভিযোগ এনে হামলাকে ‘আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ’ বলে অভিহিত করেছে।

পর্যবেক্ষকদের মতে, এই হামলা একদিকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে গত বছরের দমন অভিযানের চেয়ে আরো বেশি আগ্রাসী অভিযান করতে উস্কানি ‍দিতে পারে আর অন্যদিকে রাখাইনে মুসলিম এবং বৌদ্ধদের মাঝে জাতিগত দাঙ্গার সূচনা করতে পারে।

রোহিঙ্গাদেরকে মিয়ানমারে নাগরিকত্ব দেয়া হয় না। দেশটির সরকার মনে করে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে মিয়ানমারে এসছে। যদিও এ অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের উপস্থিতির ইতিহাস শত বছরের পুরনো। রোহিঙ্গাদের বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত সংখ্যালঘু বলে মনে করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *