পুলিশ বাহিনীতে সচিব পদমর্যাদার (গ্রেড-১) অতিরিক্ত আইজিপির পদ হবে ২০টি ও অতিরিক্ত আইজিপির (গ্রেড-২) পদ হবে ৪০টি। অতিরিক্ত আইজিপির মোট পদ হবে ৬০টি। ডিআইজির পদ ১০০টি ও এসপির পদ হবে ৩৮০টি। বাহিনীর মোট সদস্যসংখ্যা হবে আড়াই লাখের বেশি।
এই মহাপরিকল্পনার কথাই পুলিশ সদর দপ্তর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র থেকে সেটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। নীতিনির্ধারণী মহল থেকে সবুজ সংকেত পেলেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথ খুলবে বলে মনে করা হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র ও অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, কিছুদিন পরপর পুলিশের তরফ থেকে বিভিন্ন পদ সৃষ্টির বিষয়ে প্রস্তাব যায় অর্থ মন্ত্রণালয়ে। এ পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বছরখানেক আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়ে পুলিশ কত পদ চায় তা জানতে চাওয়া হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেই চিঠি পাঠায় পুলিশ সদর দপ্তরে। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে গত মাসের শেষের দিকে তাদের মহাপরিকল্পনার কথা জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এটি পুলিশের প্রস্তাব নয়। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো চিঠির জবাব। পুলিশ মহাপরিকল্পনার কথা জানিয়েছে।
এ বিষয়ে আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কাগজপত্র না দেখে কিছু বলা যাচ্ছে না।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পুলিশ) আখতার হোসেন ভূঁইয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পুলিশ সদর দপ্তর একটি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা পাঠিয়েছে। সেটা আমরা বিচার-বিশ্লেষণ করব। সম্ভাব্যতা যাচাই করে যতগুলো পদ প্রয়োজন ততগুলোর জন্য প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বর্ধিত লোকবল ৫০ হাজারের বেশি হওয়ার সম্ভাবনা আপাতত নেই।’
এক লাখ ১২ হাজার পুলিশ নিয়োগের মহাপরিকল্পনা
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, বর্তমানে পুলিশে সিনিয়র সচিব ও সচিব পদমর্যাদায় (গ্রেড-১) রয়েছেন তিনজন। আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার সিনিয়র সচিবের পদমর্যাদায় রয়েছেন। পুলিশের পরিকল্পনা অনুযায়ী, সচিব (গ্রেড-১) পদমর্যাদার পদে ২০ জন রাখার কথা বলা হয়েছে।
ঊর্ধ্বতন এক পুলিশ কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানান, বর্তমানে পুলিশবাহিনীতে অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) হিসেবে রয়েছেন ৯ জন। এই পদের সংখ্যা ৪০ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ডিআইজি রয়েছেন ৫২ জন; এ পদের সংখ্যা বাড়িয়ে ১০০ এবং অতিরিক্ত ডিআইজির পদের সংখ্যা ৭৭ থেকে বাড়িয়ে ১৫০ জন করার পরিকল্পনার কথা জানানো হয়েছে। বর্তমানে এসপি পদ রয়েছে ২৭০টি। সেটি বাড়িয়ে ৩৮০ জন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
এদিকে গত সপ্তাহে পুলিশবাহিনীতে ১২১টি ক্যাডার পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে তিনটি ডিআইজি, ১৩টি এসপি, ৩৭টি অতিরিক্ত এসপি ও ৬৮টি এএসপির পদ। এসব পদ পুলিশ সদর দপ্তরে সংরক্ষিত থাকবে।
পুলিশ সূত্র জানায়, বিভিন্ন সময় পুলিশ কর্মকর্তারা মিশনে চলে যাওয়ায় সমস্যায় পড়তে হয়। এ সমস্যার সমাধানের জন্য গত বছর সংরক্ষিত পদ সৃষ্টির প্রস্তাব পাঠানো হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। পরে সে প্রস্তাব জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে যায়। গত সপ্তাহে সেটি অনুমোদন করেছে সরকার। এখন মিশনে যাওয়ার কারণে কোনো সমস্যা হবে না।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে পুলিশবাহিনীতে আইজিপি পদমর্যাদার (গ্রেড-১) রয়েছেন তিনজন; অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) রয়েছেন ৯ জন; ডিআইজি ৫২, অতিরিক্ত ডিআইজি ৭৭, সুপারিনটেনডেন্ট অব পুলিশ (এসপি) ২৭০, অতিরিক্ত এসপি ৫৬৭, সিনিয়র এএসপি ২৭১, এএসপি ১,০৮৪, ইনস্পেক্টর ৪,০১৫, সাব-ইনস্পেক্টর ১৫,২৯৭, সার্জেন্ট ১,৭৬৪, সহকারী সাব-ইনস্পেক্টর (এএসআই) ১৭,৫০৪, নায়েক ৬,৫৬৪ ও কনস্টেবল রয়েছেন ১,০৮,৩২০ জন। সব মিলিয়ে পুলিশবাহিনীতে রয়েছেন এক লাখ ৫৫ হাজার ৭৯৭ জন কর্মকর্তা ও সদস্য।
পুলিশ সদর দপ্তর গ্রেড-১ থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত এক লাখ ১২ হাজার ৬২টি পদ সৃষ্টির নতুন পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে পুলিশবাহিনীর সদস্যসংখ্যা দাঁড়াবে দুই লাখ ৬৭ হাজার ৮৫৯ জন। তখন প্রতি ৫৯৭ জনে একজন করে পুলিশ পাওয়া যাবে।
সূত্র জানায়, জাপানে ২৫০ জন সাধারণ মানুষের বিপরীতে একজন পুলিশ রয়েছে। থাইল্যান্ডে ২৬০ জনে একজন ও মালয়েশিয়ায় ২৭০ জনে একজন পুলিশ রয়েছে। ভারতে প্রতি ৭৩০ জনে একজন পুলিশ রয়েছে।
ঊর্ধ্বতন এক পুলিশ কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যদি সেই টার্গেট পূরণ করা যায় তাহলে পুলিশি সেবা আরো বাড়ানো যাবে।’ সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ৫০ হাজার পুলিশ নিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। ওই সিদ্ধান্তের আলোকে ২০ হাজারের বেশি পুলিশ নিয়োগের প্রস্তাব পুলিশ সদর দপ্তর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এরই মধ্যে এক লাখ ১২ হাজার পুলিশের পদ সৃষ্টির নতুন পরিকল্পনার কথা জানাল পুলিশ সদর দপ্তর।
ঊর্ধ্বতন এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, এক লাখ ১২ হাজার পুলিশের মধ্যে সিদ্ধান্ত হওয়া ৫০ হাজার পুলিশ অন্তর্ভুক্ত থাকছে।
সূত্র জানায়, গত সরকারের আমলে পাঁচ বছরে পুলিশবাহিনীর জন্য ক্যাডার পদ সৃষ্টি করা হয়েছে ৬৬২টি। নন-ক্যাডার পদ করা হয়েছে ৩০ হাজার ৯০৬টি। মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) পদকে সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় উন্নীত করা হয়েছে। অতিরিক্ত আইজিপির দুটি পদকে গ্রেড-১-এ উন্নীত করা হয়েছে। এ সময়ে গঠন করা হয়েছে শিল্পাঞ্চল পুলিশ, খাগড়াছড়ি এপিবিএন বিশেষায়িত ট্রেনিং সেন্টার, রংপুর আরআরএফ, এসপিবিএন-১ ও ২, স্বতন্ত্র তদন্ত ইউনিট পিবিআই, ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌপুলিশ ও র্যাবের নতুন দুটি ব্যাটালিয়ন।
এ ছাড়া নতুন থানা করা হয়েছে ২৫টি। পুলিশ তদন্তকেন্দ্র করা হয়েছে ৬৫টি। বিভিন্ন ইউনিটের জন্য গাড়ি দেওয়া হয়েছে পাঁচ হাজার ৫০০টি। পুলিশের ইনস্পেক্টর পদকে দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে প্রথম শ্রেণিতে; সার্জেন্ট, টিএসআই ও এসআই পদকে তৃতীয় শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়েছে। সারা দেশে থানার জনবল সমন্বয় করা হয়েছে। বর্তমানে জেলা পর্যায়ে সাধারণ থানায় ৪৩ জন, গুরুত্বপূর্ণ থানায় ৫৯ জন এবং বিশেষ থানায় ৭৪ জন জনবলের মঞ্জুরি রয়েছে। ট্রাফিক পুলিশ, ডিএমপি, সিএমপি, কেএমপি, সারদা পুলিশ একাডেমি, পুলিশ হাসপাতাল, এসবি, সিআইডি, ট্রাফিক ড্রাইভিং স্কুল, এপিবিএন, পুলিশ অধিদপ্তর ও পুলিশ স্টাফ কলেজের সাংগঠনিক কাঠামোর সংস্কার করা হয়েছে।
– See more at: http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2014/11/26/155528#sthash.NCKzYvIi.dpuf