মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে শুরু হওয়া সংঘর্ষ চালু রয়েছে এখনো। সন্দেহভাজন রোহিঙ্গা জঙ্গি ও মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে গতকাল বিকালেও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এর আগে শুক্রবার প্রথম দিনের সহিংসতায় প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়ায় ৮৯।
রাখাইন প্রদেশের উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের দিকে আসতে শুরু করেছে রোহিঙ্গারা। এর প্রেক্ষাপটে দেশটির দূতকে ডেকে প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ। মিয়ানমারের নাগরিকরা যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে, সে বিষয়ে তাদের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
বার্তা সংস্থা এএফপির খবর অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টা নাগাদ রাখাইনের কয়েকটি সেনা ও পুলিশ চৌকিতে একযোগে হামলার মধ্য দিয়ে মিয়ানমারে চলমান জাতিগত সহিংসতা আবারো চরমে রূপ নেয়। আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) নামে একটি সংগঠনের নেতৃত্বে কয়েকশ সন্দেহভাজন রোহিঙ্গা জঙ্গি এ আক্রমণে অংশ নেয়। গত বছরের অক্টোবরেও এ ধরনের একটি হামলা চালিয়েছিল এআরএসএ। সে সময় এ হামলার জের ধরে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর ব্যাপক দমন-নিপীড়ন চালানো শুরু করে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী। ওই সময় মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যমে ভয়াবহ মানবিক সংকট সৃষ্টির অভিযোগ ওঠে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে। নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পেতে দেশটিতে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের বড় একটি অংশ পালিয়ে এসে অবস্থান নেয় প্রতিবেশী বাংলাদেশে।
মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর ও কার্যকরী নেতা অং সান সু চির দপ্তর জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে শুরু হওয়া সংঘাতে তিন সরকারি গ্রাম কর্মকর্তা প্রাণ হারিয়েছেন। ওইদিন সংঘর্ষ শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মিয়ানমারের রাখাইনে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী শহর মংডুর বাসিন্দারা পালিয়ে যেতে শুরু করে।
২০১২ সাল থেকে রাখাইনে জাতিগত সহিংসতার কেন্দ্রে রয়েছে মংডু শহর। বর্তমানে এখানকার বৌদ্ধ অধিবাসীরা ছুরি-লাঠিসহ সশস্ত্র অবস্থায় চলাচল করছে বলে জানা গেছে।
অং সান সু চির দপ্তর জানায়, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত থেকে শুক্রবার সারা দিনে নিহত ৮৯ জনের মধ্যে ৭৭ জনই সন্দেহভাজন রোহিঙ্গা জঙ্গি। অন্যদিকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে প্রাণহানি ঘটেছে ১২ জনের।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে কয়েকশ রোহিঙ্গা জঙ্গি বন্দুক ও ঘরে বানানো বোমা নিয়ে পুলিশ চৌকিতে হামলা করে। এরপর থেকে দিনব্যাপী সংঘর্ষের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে রাথেডং শহর।
কয়েক সপ্তাহ ধরে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর প্রচুর সেনা এনে মোতায়েন রাখা হয়েছে শহরটিতে। ওই সময়ের পর থেকেই এ অঞ্চলটিতে বেশকিছু রহস্যজনক হত্যাকাণ্ড, সেনাবাহিনীর গ্রাম ঘিরে রাখাসহ নানা ধরনের দমন-নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে মিয়ানমার সরকার এআরএসএকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছে। দেশটির কর্তৃপক্ষের দাবি, বিদেশে প্রশিক্ষণ পাওয়া জিহাদিদের নিয়ে গড়ে উঠেছে সংগঠনটি। তবে সংগঠনটির নেটওয়ার্ক আসলে কতটা বিস্তারিত, সে বিষয়ে এখনো কোনো ধারণা দিতে পারেনি নেপিদো।
২০১৬ সালের অক্টোবরের হামলার জের ধরে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর যে দমন-নিপীড়ন কার্যক্রম শুরু হয়, তা থেকে রেহাই পেতে ওই সময় ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।
মিয়ানমার দূতকে ডেকে ঢাকার প্রতিবাদ: রাখাইন প্রদেশে নতুন করে সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, আবারো মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা আসার বিষয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। মিয়ানমারের কোনো নাগরিক যাতে এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে না আসতে পারে, দেশটির দূতের কাছে সেটি তুলে ধরা হয়েছে। সেই সঙ্গে মিয়ানমারের সন্ত্রাসীগোষ্ঠীকে বাঙালি অখ্যায়িত করায় আমরা তাতে আপত্তি জানিয়েছি।
এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী পুলিশের ওপর হামলার পর ২৫ আগস্ট থেকে নতুন করে রাখাইন রাজ্যে সহিংস পরিস্থিতির বিষয়টি বাংলাদেশের নজরে এসেছে। মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানায় বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে এ সহিংসতায় নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় বাংলাদেশ উদ্বেগও প্রকাশ করেছে।