খুব দূরুত্বে কথা গুলো বলে চলে যাওয়া সময় থেমে আবার বললো “ আর হা আরেকটা কথা ট্রথব্রস দিয়ে ঠোঁট ঘষতে হয় না। ফ্রিজের উপরে মাখন আছে। দিনের বেলাই সামান্য মাখন হাতে নিয়ে ঠোঁটে লাগাতে পারো, এতে ঠোঁট থাকবে মসৃণ- মোলায়েম। সব চেয়ে জরুরি অখাদ্য না খাওয়া ওকে। গেলাম, সব সেরে লাইট বন্ধ করে নিও। স্বপ্নের মত অনিশা এসে সব বলে চলে গেলো। দ্বীপ মনযোগী শ্রোতার মত শুনলো। ছোট বোনোর এত টিপস শুনে লজ্জাও পাচ্ছিলো। দ্বীপ অনেক দিন পড় দুপুরে খাবার বাসায় এসে খাচ্ছে। খাবার শেষ করে অনিশাকে বললোঃ তুই আজ কলেজে জাসনি কেন? – আব্বু ভাবিকে নিয়ে আসতেছে তাই। – ত ফোন দিছিলি? কত দুর তারা? – তিস্তা ট্রেন আজকে লেট। ট্রেন ময়মসিংহ রেলস্টেশন ছাড়িয়েছে কিছু সময় আগে। দ্বীপের ফোন আসলো। ঐ পাশ থেকে দলের সেকেটারি বললঃ বস পাটি অফিসে কখন আসবেন? – আজ আর আসবো না। – কেন বস, আপনি অসুস্থ? – না সুস্থ। – ত? – আজ এ সুস্থতা উপভোগ করবো। মিছিল মিটিং সব আজ তোমরা সামলিয়ে নিও। দ্বীপ বার বার বেচিংয়ের নতুন আয়নায় ঠোঁট দেখছে। ভিতরে কেমন জানি তৃপ্তিময় লজ্জা খেলা করছে। দুই মাসে কি সুন্দর মসৃণ-মোলায়েম গোলাপি ঠোঁট ফিরে পেলাম। অখাদ্য ছেড়েছি, বোনেন কথায় ঠোঁটচর্চা করেছি, তা সুন্দর হবেই না কেন? নিজের ঠোঁটের নিজের মনকে প্রশংসা করতে দেখে হেসে দিলো। এ ঠোঁট হাসিটাও কি সুন্দর পরিবর্তন করে দিয়েছে। সিগারেট যেমন ঠোঁট নষ্ট করে দিছিলো তেমনি হাসির সৌন্দর্যকেও নষ্ট করেছিলো। পাখি ডেকে উঠলো, না কলিংবেল বেজে উঠলো। দরজার খুলার শব্দের সাথে অনিশার ভাবি ভাবি চিৎকার শব্দ। অপেক্ষা….. অনিশার আহ্লাদ খুনসুটি মিটিয়ে দ্বীপের বউ অদ্রি তাদের রুমে প্রবেশ করলো। দ্বীপ দাড়িয়ে। অদ্বীও দাড়ীয়ে। নিরব দুইজন। অদ্রির চোখ থেমে গেলো দ্বীপের ঠোঁটে। দ্বীপের ঠোঁট আর অদ্রির ঠোঁটের মাঝে একটি কাল্পনিক রেখা তৈরি হলো। ক্রমেই রেখার দূরুত্ব কমে আসছে। হাটাহাটি পা পা করে দ্বীপের পার উপর পা রেখে দাড়ালো অদ্রি। আলিঙ্গনে চার হাত পেঁচিয়ে গেলো দু’টি দেহ। অধরে অধর হারিয়ে গেলো। কিছু ক্ষন অনেক ক্ষন। হটাৎ অদ্রি বললো “এই সাবধান” দ্বীপ লিপকিস থামিয়ে দিলো প্রাচীন আশঙ্কায়। অদ্রি আলত করে আগুল দিয়ে দ্বীপের গোলাপি ঠোঁটে ঘাষা দিয়ে বললো। “ এটি আসলতো? লিপস্টিক দেওনিতো? নেতাদের আবার বিশ্বাস নেই।” হা হা হা মুখরিত হলো রুম হাসির ছন্দে। আবার ঠোঁটে ঠোঁটে সংযোগে থেমে গেলো হাসি। কিছু ক্ষন অনেক ক্ষন।।
লিপ কিস ———————– অক্ষর
লিপ কিস
———————– অক্ষর
দ্বীপ সাহেব, তরুণ নেতা। মনে হয় খুব মন দিয়ে দাঁত মাজতেছে, অনেক সময় ধরে। পিছন থেকে দেখলে তাই মনে হবে। কিন্তু যে দাঁত মাজতেছে না। সুঠাম দেহের পৃষ্ঠ দিয়ে পুরা পৃথিবীটাকে আড়াল করে রাখছে। যেন কেউ পিছন থেকে দেখতে না পায়, সে কি করে। প্রতিদিন লুকিয়ে এ কাজ শুরু করেছেন। তার এ কাজ টুকুর রাজস্বাক্ষি রুমের বেচিংয়ের ছোট আয়নাটা! কিন্তু তার এ ধারনাটা ভুল, কারণ সে কি করে এ খবর আয়নাটি ছাড়াও তার ছোট বোনও রাখে! না আমি আর পারছি না। আমি তাকে চাই না। কিছুতেই চাই না। মরে গেলেও চাই না। তাকে চাই না আমি, এমনকি কাউকে চাই না আমার এই বঞ্চিত জীবনে। আমি বরং একা থাকতে চাই। আমার সাথে, নিজের সাথেই কাটিয়ে দিতে চাই সম্মুখের বাকিটা জীবন। কেনই বা চাইবো আমার এ ব্যথ জীবনে। এক বার ঠকেছি আর কোন সাহসে কামনা করব? চারদিকে যেমন ঠকবাজদের রাজত্ব।
জীবনসঙ্গীকে ধোঁকা দেয়া আর প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখার যে অসভ্য প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে আস্থা রাখব কোন মানুষটার ওপর? লালন করা এক যোগের এমন চিন্তাকে ভুলে মা বাবার অনুরোধে বিয়ে করতে রাজি হলাম; যদি মনের মতো কাউকে জীবনে পাই। বিয়ের পড় খুব পাগলামি করব। প্রথমে তাকে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ কাঁদব, প্রাণ ভরে কাঁদব। তারপর নিজেকে হালকা করে নিয়ে মেতে উঠব সেই সব আদিখ্যেতার যেসব আনন্দকে এড়িয়ে গিয়েছিলাম অতীতে। বউয়ে সাথে প্রেম করব, ঝগড়া, অভিমান, আদিখ্যেতা করব। নিজেকে এতদিন যতটা সংযত রেখেছিলাম ঠিক ততোটাই বেপরোয়া হয়ে উঠবো নিজের ঘরে চারদেয়ালের মাঝে। বউয়ের সাথে অদ্ভুত সব পাগলামীতে মেতে উঠবো। যা হয়তো কোনো সিরিয়াস সম্পর্কের মধ্যে পড়ে না। তবু এমনি করবো। এভাবেই শোধ করে নেবো নিজের অতীত বঞ্চনার সমস্ত পাওনা। সুযোগ পেলেই জড়িয়ে ধরে লিপ কিসের রোমাঞ্চে হাড়িয়ে যাবো। কিন্তু বিয়ের পর আমার জীবনে এসব কি হচ্ছে। তিন মাসে একটি লিপ কিস করতে পারলাম না বউকে। না আর না সিগারেটে পুড়া এ সিদ্ধ ঠোঁটকে ঠিক করতেই হবে। প্রেমে ব্যার্থতায় যেমন সিগারাট শুরু করছিলাম তেমনি বউয়ের প্রেমের জন্য ছাড়তেও পারবো। দ্বীপ টুথব্রাশে আরো একটু পেস্ট লাগিয়ে ঠোঁট ঘষামাজায় মনোনিবেশ করলো। আলতো ভাবে জল ছিটিয়ে ঠোঁটের ফেনা ধোয়ে নিলো। আয়নায় দেখে- না একটুও উন্নতি হয়ি। মসৃণ নির্মল ফরসা মুখে ঠোঁট জুড়া খুবি অপরিচিত মনে হয়। এ মুখে মলিন ঠোঁট সত্যি খুবি বেমানান। কিন্তু এক যোগের তামাকের নিকটিনের পুড়া ঠোঁট কি আর কয়েক দিনের যত্নে ঠিক হয়? কিন্তু সময়তো কম। দুই মাস পর পরিক্ষা শেষ হলেই বউ শশুর বাড়ি থেকে ফিরবে। বুভুক্ষা অধর দেখে আবার বলবে “ সাবধান, পুড়া কালো ঠোঁট যেন আমার ঠোঁটে না লাগে” দেত, তার এক কথাই রোমাঞ্চিত সময় থেমে যায়। আলিঙ্গনে আগুন লাগে! ভিতরটা নিরাশে পুড়ে যায়। বুকটা যদি পাথর হতো তখন টাস করে ফেটে যেতো। আমার বিপ্লবী কন্ঠে মঞ্চ কাপে। আমি অভিমান করলে বিশ্বরোড় থেমে জায়। রেগে গেলে হরতালে জালাও পুড়াও প্রতিধ্বনিতে সহর আতঙ্কিত হয়। আর সে আমি বউকে একটি লিপ কিস করতে পারলাম না! দ্বীপ রেগে ঠোঁটে দিলো এক থাপ্পুর। এ যে অবলা বেচিংরে আয়নায় তার প্রতিমূর্তিকে আঘাত করলো। একটি টাস শব্দে ঝরঝরিয়ে পড়তে লাগলো আয়না টুকরো। টুকরো গুলো পায়ে পড়ার ভয়ে পিছালো দ্বীপ। ধাক্কা খেলো ছোট বোনের সাথে। আরেকটি টাস শব্দ। বোন অনিশার হাতের চা কাপটি পড়ে গিয়ে কয়েক টুকরো! – অনিশা, তুই কখন এ রুমে আসলি? – আসিনিতো, মাত্র আসতেছি… দ্বীপ রেগে বলো “আসতে হবে না, বাগ। এখন থেকে সকালে চা আমার লাগবে না। বোন যাওয়ার টাইমে বলোঃ এসব ঘষামাজা করে কাজ হবে না; অখাদ্য খাওয়া বাদ দেস। ঠোঁটে কালো ছোপ এমনেই ঝকঝকে হয়ে হারানো ঐতিয্য ফিরে পাবে।
সকাল থেকেই বিরক্তিকর অনুভূতিতে মনটা খারাপ। বারান্দায় চেয়ারে গিয়ে বসে ভাবছে এখন একটি সিগারেট টানতে পারলে ভালো লাগতো। না আর অখাদ্য না। বোনের কথাটা ভাবতেই হেসে দিলো। সিগারেটের প্রেমে পড়েছিলাম, আসমানীর প্রেমে আহত হয়ে। সময়টা ক্লাশ ৯ম। কথা দিলো পাশে থাকবে সারা জীবন, ভালোবাসলে তোমাকেই বাসবো প্রমিস। কমল মনে প্রনয় স্বপ্ন দেখিয়ে। অন্যের প্রেমে পড়লো। তখন নিজেকেই বিনাশ করে দিতে মন চাইতো। সে থেকেই সিগারেটের আশ্রয় নিলাম, আজ ১২ বছর। বারান্দায় রেলিং এ সিগারেটের ট্রেটি দেখে আবার সিগারেটর নেশা চাড়া দিয়ে উঠলো। কানে প্রতিধ্বনি হতে লাগলো “সাবধান, পুড়া কালো ঠোঁট যেন আমার ঠোঁটে না লাগে”
রাত ১১টা, দ্বীপ পাটি অফিস থেকে ফিরে ক্লান্ত শরীর বিছানাই এলিয়ে দিলো। দু’টি বাটি হাতে অনিশা দ্বীপের রুমে প্রবেশ করলো। দ্বীপ তাকিয়ে দেখে চোখবুজে বলল- আমি এখন কিছু খাবো না। খেয়ে আসছি, তরা খেয়ে নেস। লাইটা অফ করে চলে যা। – খেতে হবে নেতাজী, ব্যবহার করতে হবে! আমি খাবার নিয়ে আসিনি ভাই। – ত কি? – গিসারিন এবং লেবুর রস মিশিয়ে নিয়ে আসছি। এটা কিছু সময় ঠোঁটে লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলবি। আর ঘুমানোর সময় এই ছোট বাটির এগুলো ঠোঁটে লাগিয়ে ঘুমাবি। এখানে দুধের সর এবং আর্মন্ড তেলমিশ্রিত আছে। এমন টিটমেন নিয়মিত চলবে ওকে? মাঝে মাঝে মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে আঙুল দিয়ে ম্যাসাজ করে লাগাবি এবং শসার রস সঙ্গে সামান্য লেবুর রস মিশিয়ে লাগালেও খুব তাড়াতাড়ি তর ঠোঁটে কালচে ছোপ চলে যাবে। কাল তকে বেটে দিবো দুধের সঙ্গে গোলাপের পাপড়ি এতে ঠোঁটের মসৃণতা বেড়ে যাবে।