ঢাকায় ঢুকছে কোরবানির পশু

Slider জাতীয়
ঢাকায় ঢুকছে কোরবানির পশু

আর মাত্র ছয় দিন বাদেই পবিত্র ঈদুল আজহা। এরই মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ঢুকতে শুরু করেছে কোরবানির গরু-ছাগল।
মহাসড়কের বেহাল পরিস্থিতি আর তীব্র যানজটের আশঙ্কায় অনেক ব্যবসায়ী আগে ভাগেই গরু বোঝাই ট্রাক নিয়ে রওনা দিয়েছেন। রাজধানী ছাড়া পাশের দেশ থেকেও গরু আসছে।ওয়াকিবহালদের ধারণা, ঢাকা উত্তর দক্ষিণ সিটির অন্তত ২০টি স্থানে এবার পশুরহাট জমতে পারে। যদিও এবার গরুর তেমন দাম না পাওয়ার আশঙ্কা করছেন সাধারণ গরু খামারিরা। কারণ উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতির কারণে অনেকে পালন করা গবাদিপশু ঘরে তুলতে পারছেন না। চারণভূমি প্লাবিত হওয়ায় এবং খাবারের অভাবে অনেক গবাদিপশু মারা গেছে। তাই কোরবানির হাটের সুযোগে পালের সব গরু ন্যায্য দামে বিক্রির ব্যাপারে চিন্তায় আছেন দুর্যোগ কবলিত খামারিরা। এদিকে সাধারণ গরু বেপারিরা অভিযোগ করে বলছেন, মিয়ানমার থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে গবাদিপশু আমদানি করা হচ্ছে। ফলে নিজেদের পশুর প্রত্যাশিত দাম তারা পাবেন না। জানা গেছে, আমদানি করা গরু টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ করিডোরে দিয়ে ঢুকছে। এসব গবাদিপশু ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করা হচ্ছে। মিয়ানমারের গরু দিয়ে এরই মধ্যে টেকনাফ গোদারবিল মাদ্রাসা সংলগ্ন মাঠ, সাবরাং ইউনিয়ন কমপ্লেক্স, শাহপরীরদ্বীপের নাফ নদের বেড়িবাঁধ ও পুরাতন বাজারের বেশ কয়েকটি স্থানে পশুর হাট জমে উঠেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার গাবতলী গরুর হাটে বেশ কয়েকটি গরুর ট্রাক  ঢুকেছে। কিন্তু হাট চালুর নির্ধারিত দিন না আসায় গরুগুলো আশপাশে বেঁধে রাখা হয়েছে। একই চিত্র কমলাপুর ও মেরাদিয়া গরুর হাটেও। এ ছাড়া দনিয়া হাটে গরু তোলার জন্য রায়েরবাগে গরু নিয়ে ভিড়েছে অন্তত ৫টি ট্রাক। কমলাপুরের হাটে তোলার জন্য কুমিল্লা ও বরিশালের বেপারিরা সায়দাবাদ বাসস্ট্যান্ডের পাশে রেল লাইন ঘেঁষে আগে ভাগেই জায়গা করে নিয়েছেন। সাধারণত হাট শুরু হলেই ক্রেতা-বিক্রেতার উপচে পড়া ভিড়ে সবগুলো হাটে সৃষ্টি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ। ভিড়ের চাপে নির্ধারিত সীমানা অতিক্রম করে পার্শ্ববর্তী রাস্তা ও আবাসিক এলাকাগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে হাটগুলো। প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যেও বিন্দুমাত্র ক্লান্তির ছাপ দেখা যায় না বিক্রেতাদের চোখে-মুখে। সিটি করপোরেশনের স্থায়ী হাটের পাশে এবার ২৩টি অস্থায়ী হাট বসানোর সম্ভাবনা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

ধোলাইখাল ও কমলাপুরের ইজারাদাররা গতকাল জানান, তারা ইজারা চূড়ান্তের পর কয়েকদিন ধরে দেশের বিভিন্ন জেলায় লোক পাঠিয়ে গরুর সন্ধান করছেন। এর মধ্যে যশোর, ফরিদপুর, মাদারীপুর, কুষ্টিয়া, নাটোর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ঝিনাইদহ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, নওগাঁ, জয়পুরহাট ও দিনাজপুর জেলা থেকে বেশি গরু আসতে পারে। কিছু গরু ট্রাকে করে রওনাও দিয়েছে। তবে এগুলোর বেশিরভাগই মহাসড়কে যানজটে আটকে আছে। দুই-তিনটি ট্রাক পৌঁছেছে মাত্র। সেগুলো হাটের আশপাশে রাখা আছে। তারা আরও জানান, এবার চাহিদার তুলনায় রংপুর ও কুড়িগ্রাম অঞ্চলের ছোট-মাঝারি আকারের বেশি গরু আমদানির সম্ভাবনা রয়েছে। বন্যাকবলিত মানুষগুলো তাদের সব গবাদি পশু বিক্রি করে দিচ্ছেন। হয়তো এই হাটে ১৫-২০ হাজার টাকাতেও গরু কিনতে পারবেন ক্রেতারা।   কুষ্টিয়া থেকে কমলাপুর হাটে গরু তোলার কথা জানিয়েছেন সামসুল আলম। তিনিসহ তার আরও দুই পার্টনার আগেভাগেই জায়গা নেওয়ার জন্য ঢাকায় অবস্থান করছেন। সামসুল জানান, তিনি গতবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনে ও দেওয়ানবাগী উটের খামারের মূল ফটকের একটু দক্ষিণ পাশে ১০টি বড় গরু তুলেছিলেন। ঈদের আগের দিন প্রতিটি মোটামুটি ভালো দামে বিক্রি করেন। এবার গরুর হাটে তিনি ১৮টি গরু তুলবেন। তবে সেগুলোর দাম নির্ধারণ করেছেন ৭০ হাজারের উপরে। এর মধ্যে ৫টি গরুর দাম এক লাখ ৩০ হাজার টাকা করে। কথা হয় পাবনার গরু বেপারি মোফাজ্জল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বুধবার ঢাকায় এসে সায়েদাবাদ মেহরান আবাসিক হোটেলে উঠেছেন। ছয় মাস ধরে কোরবানি উপলক্ষে তিনি ১৬টি গরু পেলেছেন। হাট শুরু হলে তার লোকজন সেগুলো ধোলাইখাল হাটে তুলবেন। তিনি হাটে পূর্ব প্রস্তুতির জন্য আগেই এসেছেন। জানা গেছে, যথাযথ স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরই হাটগুলোতে কোরবানির গরু ঢুকতে দেওয়া হবে। গত বছরের মতো এবারও নগরীর ১১টি প্রবেশ পথে গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বিশেষ মেডিকেল টিম গঠন করবে মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। সঙ্গে থাকবে র‌্যাব পুলিশের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক জাল টাকা শনাক্তকরণের বুথ স্থাপন করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *