স্টিভেন স্মিথের অস্ট্রেলিয়া ‘সর্বকালের সেরা’ অস্ট্রেলিয়া দল নয়! তবে ২০০৬ সালে বাংলাদেশে আসা রিকি পন্টিংয়ের দলটিকে সর্বকালের সেরা অস্ট্রেলিয়া বলতে কারও আপত্তি থাকার কথা নয়। যে দলের সেরা পেসারই কিনা ‘ডাবল সেঞ্চুরি’ হাঁকাতে পারেন।
ব্যাটিংয়ে ম্যাথু হেইডেন, মাইক হাসি, গিলক্রিস্ট, মাইকেল ক্লার্কের সঙ্গে পন্টিং তো ছিলেনই। আর বোলিংয়ে— ব্রেট লি ও গিলেস্পির মতো পেসার। স্পিনে কিংবদন্তি শেন ওয়ার্ন ও স্টুয়ার্ট ম্যাকগিল। এই অস্ট্রেলিয়া দলে ব্যাটিংয়ে অধিনায়ক স্মিথকে বাদ দিলে আর কে থাকে? ডেভিড ওয়ার্নার তো মাঝে মধ্যে জ্বলে ওঠেন। সব শেষ আট ইনিংসে তার কোনো সেঞ্চুরি নেই। আর বাকিরা সবাই তরুণ।
বোলিংয়েও সেরা দুই বোলার— মিচেল স্টার্ক ও প্যাটিনসন নেই। স্পিনে এক নাথান লিয়ন। বাকি দুই স্পিনারই তো নতুন। স্বেপসনের এখনো অভিষেকই হয়নি। আর অ্যাস্টন আগার চার বছর পর দলে সুযোগ পেয়েছেন।
অন্যদিকে বাংলাদেশের এই দলকে এ যাবতকালের সেরা টেস্ট দলই বলা যায়। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং —তিন বিভাগেই সেরা বাংলাদেশ। তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, ইমরুল কায়েস, মুমিনুল হক —এক একজন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ব্যাটসম্যান। পেস বোলিংয়ে মুস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে তাসকিন বা শফিউলের মধ্যে থেকে একজন এবং স্পিনে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলাম।
এই সিরিজ নিয়ে তাই দারুণ আত্মবিশ্বাসী টাইগাররা। কিছুদিন আগেই প্রধান কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহে বলেছিলেন, তার লক্ষ্য সিরিজে ২-০ ব্যবধানে জয়। মুমিনুল হকও একই কথা বলেছেন। এবার বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিবও সেই ভাঙা রেকর্ড আরেকবার বাজালেন— ২-০ ব্যবধানে জয়ই চাই! বাংলাদেশের কোচ-ক্রিকেটাররা যেখানে হোয়াইটওয়াশের কথা ভাবছেন সেখানে অস্ট্রেলিয়া বলছে জমজমাট লড়াইয়ের কথা! অসি অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ বার বার বলেছেন— বাংলাদেশ বিপজ্জনক দল। টেস্ট সিরিজে এর আগে কখনো বাংলাদেশ শক্ত প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে এভাবে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলেনি। কেবল জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধেই জয়ের চিন্তা করে মাঠে নামতেন টাইগাররা। অন্যদের বিরুদ্ধে ড্র করাটাই ছিল ভালো ফল। কিন্তু এবার পরাজয়ের কথা ভাবা তো দূরের কথা, ড্র-র কথাও মনে আনছেন না ক্রিকেটাররা। লক্ষ্য একটাই জয়!
ওয়ানডের পর টেস্টেও যেন বাংলাদেশ এখন বদলে যাওয়া এক দল! টাইগাররা এখন প্রতিপক্ষের শক্তিমত্তা দেখে আর ভয় পায় না। আবার অতি আত্মবিশ্বাসে ভুগছে— এমনও নয়। টাইগাররা ভীষণ সতর্কও। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে সাকিবের কথাতেই তা বোঝা গেল, ‘সব কন্ডিশনে মানিয়ে নিতে পারে। হয়তো কষ্ট হয়, হবেও। বৃষ্টি আছে, গরম আছে। তারপরও ওরা মানিয়ে নিবে। আগেও নিয়েছে। ওদেরকে হারাতে তাই আমাদের সেরা ক্রিকেটই খেলতে হবে। কন্ডিশন বা অন্য কিছুর উপর নির্ভর করে সিরিজ শুরুর চিন্তা করাটা মনে হয় না খুব একটা ভালো হবে। আমাদের চিন্তাই থাকা উচিত যে, আমরা যাতে যে কোনো পরিস্থিতি ওদের চেয়ে ভালোভাবে মোকাবিলা করতে পারি। ’ দেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত সব শেষ সিরিজে ছিল স্পিনারদের দাপট। বাংলাদেশের স্পিনাররাই ইংল্যান্ডকে নাস্তানাবুদ বানিয়ে ছেড়েছিলেন। টাইগার-বোলাররা এতটাই দাপট দেখিয়েছেন যে দুই ম্যাচের চার ইনিংস মিলে কোনো সেঞ্চুরিই করতে পারেননি ইংলিশরা। এবারের উইকেটও স্পিন-স্বর্গ হচ্ছে! স্পিনে যে দল এগিয়ে থাকবে জয়ের সম্ভাবনাও বেশি থাকবে সে দলের। স্পিনে বাংলাদেশকেই এগিয়ে রাখছেন সাকিব, ‘অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে আমাদের স্পিন আক্রমণ ভালো। সব কন্ডিশনে বলব না। আমাদের দেশে ওদের চেয়ে আমরা ভালো। তাইজুল-মিরাজ অনেক দিন ধরে ভালো বোলিং করছে। এই সিরিজে ওরা দারুণ কিছু করবে বলেই আমরা বিশ্বাস করি। ’
প্রতিটি সিরিজের আগে মাঠের লড়াইয়ের পূর্বে চলে ‘মনস্তাত্ত্বিক লড়াই’। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে এই সিরিজেও চলছে। তবে এই লড়াইয়ে এগিয়ে রাখতে হবে বাংলাদেশকেই। কেন না অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচ কিন্তু ক্রিকেটারদের শরীরী ভাষা ও কথা শুনে মনে হচ্ছে খেলা জিম্বাবুয়ের মতো ‘ছোট’ প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে! অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের কথা শুনে মনে হয়, তারা খেলতে নামছেন র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর দলের বিরুদ্ধে!