নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে ৩৩ শতাংশ রাজস্ব প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে চেয়েছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। শেষ মুহূর্তে তা স্থগিত হওয়ায় লক্ষ্য অর্জনে বিকল্প পথ খুঁজছে রাজস্ব আহরণকারী সংস্থাটি। এর অংশ হিসেবে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ টাস্কফোর্সের মাধ্যমে স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধির বাইরে ২২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ করতে চায় এনবিআর।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, টাস্কফোর্স গঠনে এরই মধ্যে সংস্থাটির শুল্ক নিরীক্ষা ও আধুনিকায়ন এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিভাগের সদস্য খন্দকার আমিনুর রহমানকে প্রধান করে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। দ্রুত এ কমিটিকে টাস্কফোর্সের কাঠামো ও কাজের পরিধি উপস্থাপন করতে বলেছে এনবিআর। পরবর্তীতে কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে এর জনবল ও কার্যক্রম নির্ধারণ করা হবে।
টাস্কফোর্স কমিটির আহ্বায়ক খন্দকার আমিনুর রহমান বলেন, টাস্কফোর্সের মূল কাজ হবে ভ্যাট ফাঁকি বন্ধ করে রাজস্ব আহরণ বাড়ানো। করদাতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে সরকারের প্রাপ্ত রাজস্ব আহরণে এ টাস্কফোর্স কাজ করবে।
মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ১৯৯১-এর ২২ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ টাস্কফোর্স গঠন করা হচ্ছে। আইনের ২২ ধারার ২ উপধারায় ভ্যাট কর্মকর্তাদের ক্ষমতা প্রয়োগের কথা বলা আছে।
জানা গেছে, এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় টাস্কফোর্সের বাইরেও নিরীক্ষা ও গোয়েন্দা অধিদপ্তর এবং মাঠপর্যায়ের সব কমিশনারেটে পৃথক টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। পাশাপাশি কাস্টমস ও মূসক বিভাগের দক্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে টাস্কফোর্সের জন্য একটি কেন্দ্রীয় রিজার্ভ ফোর্স থাকবে। দেশের যেকোনো স্থানের যেকোনো প্রতিষ্ঠানে রাজস্ব ফাঁকি অনুসন্ধান করতে পারবে এ ফোর্স।
টাস্কফোর্সের কার্যক্রম শুরু হলে কর ফাঁকি প্রতিরোধ কার্যক্রমে সমন্বয় আসবে বলে জানান এনবিআর চেয়ারম্যান ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. নজিবুর রহমান। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নকাজে অর্থ সরবরাহের জন্য রাজস্ব আহরণ এনবিআরের মূল উদ্দেশ্য। এজন্য শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত এনবিআরের কার্যক্রম বিস্তৃত হয়েছে। রাজস্ব ফাঁকি রোধ ও আহরণ বাড়াতে টাস্কফোর্স গঠন করা হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার ও নতুন নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করবে এনবিআর।
টাস্কফোর্সের কার্যক্রম নিয়ে এনবিআর বলছে, মূসক নিরীক্ষা ও গোয়েন্দাদের বাইরে নতুন এ টাস্কফোর্স মূলত রাজস্ব আহরণের নতুন ক্ষেত্র খুঁজে বের করবে। সারা দেশে ভ্যাট না দেয়া প্রতিষ্ঠান বাছাই করে রাজস্ব ফাঁকি রোধে কাজ করবে তারা। সিটি করপোরেশন, পৌরসভাসহ দেশের বড় শহর ও স্থানভিত্তিক পাইলট আকারে জরিপ করে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাটের আওতায় আনবে টাস্কফোর্স কমিটি। মাঠপর্যায়ে কমিশনারেটভিত্তিক টাস্কফোর্স কমিটি তাদের অধিক্ষেত্রের ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠান বাছাই করে তার তালিকা কেন্দ্রে পাঠাবে। কেন্দ্র থেকে জরুরি ভিত্তিতে রিজার্ভ ফোর্সের মাধ্যমে অনুসন্ধান করে ফাঁকি দেয়া ভ্যাট আদায় করা হবে। এর বাইরে ভ্যাট আহরণ নিশ্চিত করতে করদাতাদের সঙ্গে এনবিআরের সুসম্পর্ক স্থাপনে খাতভিত্তিক সচেতনতামূলক কার্যক্রমও পরিচালনা করবে এ টাস্কফোর্স।
চলতি অর্থবছর শুধু ভ্যাট থেকেই ৯১ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকার রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে এনবিআর। গত বছরের তুলনায় এ লক্ষ্যমাত্রা ৩২ দশমিক ৯৩ শতাংশ বেশি। নতুন আইন অনুযায়ী অনলাইন ব্যবস্থা চালু হলে ফাঁকি কমে যাবে উল্লেখ করে আয়কর খাতেও প্রায় ৩৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে সংস্থাটি। তবে নতুন ভ্যাট আইন স্থগিত হওয়ায় এ পরিকল্পনায় বাধার মুখে পড়ে এনবিআর। এ অবস্থায় মাঠপর্যায়ে নিরীক্ষা কার্যক্রম জোরদারের পাশাপাশি নানা উপায় খুঁজছে সংস্থাটি।