বুধবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ শহরের হাজী মঞ্জিলে অবস্থিত তৌহিদ টিউটোরিয়াল টেরিটরি কোচিং সেন্টার থেকে ক্লাস শেষে বাড়ি ফেরার পথে এ ঘটনা ঘটে।
কোচিং সেন্টারের শিক্ষক প্রাপ্তির আপন মামা তৌহিদুল ইসলাম জানান, তার ভাগ্নি প্রাপ্তি শহরের নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের বিপরীতে তার কোচিং সেন্টারে পড়ে। সে শহরের এবিসি স্কুলের ও লেভেলের শিক্ষার্থী।
বুধবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে কোচিং সেন্টার থেকে রাস্তায় যাওয়ার পর এক ব্যক্তি এসে তার গতিরোধ করে তাকে একটি রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়ে বলে, “আমরা তোমার বাবার খুব ভালো বন্ধু, কাল(মঙ্গলবার) তোমার বাবা একটি ভালো কাজ করেছেন। এ খুশীতে আমরা তোমাকে মিষ্টি খাওয়াতে চাই”।
মিষ্টি খেতে রাজী না হওয়ায় ওই ব্যক্তির সাথে থাকা আরো দুই জন জোর করে প্রাপ্তির মুখে কোন একটি খাবার পুড়ে দিয়ে পানি পান করায়। পরে প্রাপ্তি দৌড় দিলে তারা একটি মাইক্রোবাসে উঠে চলে যায়। ” প্রাপ্তি পেছনে তাকিয়ে ফের দেখে তাকে ওই দূর্বত্তরা ফলো করছে কিনা। ওই সময় দূর্বত্তদের ব্যবহ্নত গাড়ীর তিনটি নম্বর প্রাপ্তি মুখস্থ করে নেয়।
এক পর্যায়ে প্রাপ্তি রাস্তায় দৌড়াতে দৌড়াতে তার বাবা পিপি ওয়াজেদ আলী খোকনকে ফোন দিয়ে জানায় কেউ তাকে জোরপূর্বক কিছু খাইয়ে দিয়েছে। তার পাকস্থলী খুব জ্বালাপোড়া করছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাপ্তির বাবা খোকন তাকে নিয়ে বাসায় ফিরে এলে সে বমি শুরু করে। পরে প্রাপ্তিকে নারায়ণগঞ্জ তিনশ শয্যা হাসাপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানকার চিকিৎসক অবস্থা গুরুতর বলে কয়েকটি ইনজেকশ ও প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে প্রাপ্তিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে প্রেরণ করেন।
এদিকে রাত ৯ টায় তিনি মুঠোফোনে আরো জানান, প্রাপ্তির পেট ওয়াশ করা হয়েছে। এখন ঢামেকের আইসিউতে রয়েছে।
প্রাপ্তির বরাত দিয়ে তিনি আরো জানান, দূর্বত্তরা খুব দূর্গন্ধযুক্ত খাবার মুখে ঢেলে দেয়। তা বিষাক্ত ছিল বলে চিকিৎসকরা তা নিশ্চিত করেছেন। এ বিষয়ে পিপি প্রাপ্তির বাবা নারায়ণগঞ্জ আদালতের পিপি ওয়াজেদ আলী খোকন জানান, দুর্বৃত্তরা সাত খুনের প্রসঙ্গ তুলেছে। রেস্তোরাঁয় যাওয়ার প্রস্তাবের সময় তারা বলেছিল- ‘তোমার বাবা কাল খুব ভালো কাজ করেছে, চল তোমাকে খাওয়াই’। ” সাত খুন মামলা রায় মঙ্গলবার হয়েছিল।
এদিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে রাত ৮ টায় নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: শরফুদ্দিন, নারায়ণগগঞ্জ ডিবির ওসি মাহাবুবুর রহমান, সদর মডেল থানার ওসি শাহীন পারভেজসহ জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল শহরের হাজী মঞ্জিল কোচিং সেন্টার ও আশপাশ এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: শরফুদ্দিন ওই সময় সাংবাদিকদের জানান, ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। খুব গুরুত্বের সাথে জেলা পুলিশ বিষয়টিকে নিয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, পিপির মেয়ে প্রাপ্তির দুর্বৃত্তদের পালিয়ে যাওয়া গাড়ীর শেষ অক্ষরের তিনটি নম্বর বলতে পেরেছে।