চলতি আমন মৌসুমে দেশের যেসব অঞ্চলে বন্যা হয়েছে, সেখানে বন্যা-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) উদ্ভাবিত পাঁচটি ধানের জাত আবাদের পরামর্শ দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ব্রি উদ্ভাবিত আলোক সংবেদনশীল উফশী জাত বিআর৫, বিআর২২, বিআর২৩, ব্রিধান-৩৪, ব্রিধান-৪৬, ব্রিধান-৫৪ এবং নাইজারশাইল জাতগুলো রোপণ করতে হবে। এছাড়া ব্রি উদ্ভাবিত স্বল্প জীবনকালসম্পন্ন জাত ব্রিধান-৫৭ ও ব্রিধান-৬২ রোপণ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত বীজতলা করা যাবে। গতকাল কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, উল্লিখিত জাতগুলো নাবীতে রোপণের ক্ষেত্রে প্রতি গোছায় চারার সংখ্যা চার-পাঁচটি এবং রোপণ দূরত্ব ২০দ্ধ১৫ সে.মি রাখতে হবে। বিলম্বে রোপণের ফলে দ্রুত কুশি উত্পাদনের জন্য সুপারিশকৃত টিএসপি, জিপসাম ও জিংকসহ ২/৩ (দুই-তৃতীয়াংশ) ইউরিয়া জমি তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে। অবশিষ্ট ইউরিয়া রোপণের ২৫-৩০ দিনের মধ্যে প্রয়োগ করতে হবে। আর যেসব এলাকা পুনরায় বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম (উঁচু ও মধ্যম উঁচু) সেখানকার জমিতে অঙ্কুরিত বীজ সরাসরি জমিতে ছিটিয়ে বপন করা যায়। সেক্ষেত্রে রোপণ পদ্ধতির চেয়ে পাঁচ-সাতদিন আগাম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা বিবেকানন্দ রায় স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বন্যার ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া ধান গাছের যাবতীয় পরিচর্যা যেমন— আগাছা দমন, পোকা-মাকড় ও রোগাক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা, সুষম পরিমাণে সার প্রয়োগ এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সম্পূরক সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। বন্যার পানিতে ভেসে আসা কচুরিপানা, পলি, বালি ও আবর্জনা যত দ্রুত সম্ভব পরিষ্কার করতে হবে। বন্যার পানি সরে যাওয়ার পর পাঁচ-সাতদিন কাদাযুক্ত ধান গাছ পরিষ্কার পানি দিয়ে প্রয়োজনে স্প্রে মেশিন দিয়ে ধৌত করে দিতে হবে। পাশাপাশি বিস্তারিত জানতে নিকটস্থ উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বা উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর পরই সার প্রয়োগ করা ঠিক নয়, এতে ধান গাছ পচে যেতে পারে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার ১০ দিন পর ধানের চারায় নতুন পাতা গজানো শুরু হলে বিঘাপ্রতি আট কেজি ইউরিয়া ও আট কেজি পটাশ সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। উঁচু জমিতে যেখানে বন্যার পানি ওঠেনি, সেখানে রোপণকৃত বাড়ন্ত আমন ধানের গাছ (রোপণের ৩০-৪০ দিন পর) থেকে দু-তিনটি কুশি রেখে বাকি কুশি সযত্নে শিকড়সহ তুলে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে অন্য ক্ষেতে রোপণ করা যেতে পারে। যেসব এলাকায় বন্যায় উঁচু জমি তলিয়ে যাওয়ার কারণে বীজতলা করা সম্ভব নয়, সেক্ষেত্রে ভাসমান বীজতলা তৈরি করে চারা উত্পাদন করা যেতে পারে। সরকার এক্ষেত্রে সহায়তা করছে।