নিম্নশ্রেণীর কোচ সংকট চরমে

Slider জাতীয়

base_1503343560-25552

রেলের বহরে ২৭০টি নতুন কোচ যুক্ত হওয়ার পর আন্তঃনগর ট্রেনের সংকট কিছুটা কমেছে। তবে দীর্ঘদিন ধরে দ্বিতীয় শ্রেণীর কোচ আমদানি হয়নি। আন্তঃনগর ট্রেনের পুরনো কোচগুলো সংস্কার করে দ্বিতীয় শ্রেণীতে রূপান্তরও করা হয়নি। এ অবস্থায় নিম্নশ্রেণীর কোচ ঘাটতি নিয়েই যাত্রী পরিবহন করবে ঈদের বিশেষ ও নিয়মিত ট্রেনগুলো।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের শেষ দিকে ও চলতি বছরের শুরুতে রেলের বহরে ১৭০টি ব্রড গেজ ও ১০০টি মিটার গেজ কোচ সংযোজন হয়। ইন্দোনেশিয়া ও ভারত থেকে আমদানি করা এসব কোচ দিয়ে বেশ কয়েকটি নতুন ট্রেন সার্ভিস চালু করা হয়। এছাড়া কিছু কোচ দিয়ে পুরনো আন্তঃনগর ট্রেনের ঘাটতি মেটানো হয়। তবে গত এক দশকেও দ্বিতীয় শ্রেণীর কোনো কোচ আমদানি না হওয়ায় মেইল, এক্সপ্রেস ও লোকাল ট্রেনগুলোর সংকট এখনো কাটেনি। ফলে আসন্ন ঈদুল আজহায় স্ট্যান্ডার্ড কম্পোজিশনের (টাইমটেবিল অনুযায়ী কোচের সংখ্যা) চেয়ে কম কোচ নিয়েই যাত্রী পরিবহন করবে রেলওয়ে।

পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের ৪৩টি মেইল-এক্সপ্রেস ট্রেনের স্ট্যান্ডার্ড কম্পোজিশনে ২৫১টি কোচ থাকার কথা। কিন্তু ২০ আগস্টের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কোচ রয়েছে মাত্র ১৯০টি। অর্থাৎ ঈদের আগেই দ্বিতীয় শ্রেণীর ট্রেনগুলো ৬১টি কোচ ঘাটতি নিয়ে যাত্রী পরিবহন করছে। এর মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণীর কোচ ঘাটতি ছিল ৫৩টি। ওয়ার্কশপেও পর্যাপ্ত দ্বিতীয় শ্রেণীর কোচ মেরামতের অপেক্ষায় না থাকায় ঈদের সময়ে ঘাটতি পূরণের সম্ভাবনা নেই। এর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বিতীয় শ্রেণীর কোচ আমদানি না হওয়ায় বিভিন্ন ট্রেনে সংযোজিত কোচগুলোর অবস্থাও নাজুক বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিবহন বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

রেলওয়েসংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাধারণত আন্তঃনগর ট্রেনের আসন সংখ্যা নির্দিষ্ট। সেবার মান ধরে রাখতে নির্ধারিত আসনের চেয়ে বেশি যাত্রী পরিবহন নিরুত্সাহিত করা হয়। অন্যদিকে দ্বিতীয় শ্রেণীর মেইল-এক্সপ্রেস-লোকাল ট্রেনে নিম্নবিত্ত যাত্রীরা ভ্রমণ করায় কোচ সংখ্যা কম থাকলেও অতিরিক্ত টিকিট বিক্রি করা হয়। ফলে কম কোচেও তুলনামূলক রাজস্ব আয় বেশি হয় দ্বিতীয় শ্রেণীর ট্রেনগুলো থেকে। কিন্তু রেলওয়ে বড় বড় প্রকল্পের মাধ্যমে শুধু আন্তঃনগর ট্রেনের কোচ সংখ্যা বাড়ানোয় মনোযোগী হলেও মেইল-এক্সপ্রেসসেবা বাড়ানোর বিষয়ে উদাসীন। দেশের প্রায় সব দ্বিতীয় শ্রেণীর ট্রেনে কোচসংখ্যা কম থাকায় এবারের ঈদযাত্রায় স্বল্প দূরত্ব ও নিম্নশ্রেণীর যাত্রীরা ভোগান্তির মধ্যে পড়বে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে পরিচালিত ট্রেনগুলোর মধ্যে আন্তঃনগর ট্রেন ৯০টি, লোকাল ও শাটল ট্রেন ১০৮, মেইল ও এক্সপ্রেস ট্রেন ৫৪, কমিউটার ও ডেমু ৭৪, মিক্সড ও পিঅ্যান্ডভি ১২ ও আন্তর্জাতিক (মৈত্রী) চারটি। রেলের উভয় অঞ্চলের মোট ৩৪২টি ট্রেনের মধ্যে আন্তঃনগর ট্রেনের সংখ্যা ২৬ শতাংশ হলেও শুধু আন্তঃনগর ট্রেনের উন্নয়নেই বড় বড় প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে বরারবই অবহেলিত থাকছে নিম্নশ্রেণীর ট্রেন।

মেইল ও এক্সপ্রেস ট্রেনের কোচ সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. আবদুল হাই বণিক বার্তাকে বলেন, আমদানিকৃত কোচ সংযোজনের মাধ্যমে রেলের জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর সংকট অনেকাংশে কমানো গেছে। ঈদের আগে কারখানা থেকে অতিরিক্ত কোচ পাওয়ার ফলে আন্তঃনগর ট্রেনের কোচ সংকট নেই বললেই চলে। তবে দীর্ঘদিন ধরে মেইল-এক্সপ্রেস ট্রেনের কোচ আমদানি না হওয়ায় এসব ট্রেনে সংকট থাকবে। তবে রেলওয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীর কোচ আমদানির প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। সেই সঙ্গে পুরনো কোচ মেরামত করে দ্বিতীয় শ্রেণীর কোচে সংযোজনের চেষ্টাও চলছে। রেলসেবা বৃদ্ধির ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আগামীতে দ্বিতীয় শ্রেণীর কোচও স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

জানা গেছে, ঈদ উপলক্ষে রেলের উভয় অঞ্চলের মেরামত কারখানা থেকে মোট ১৩৫টি অতিরিক্ত কোচ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে পূর্বাঞ্চলে সরবরাহ করা হতে পারে ৭৫টি, যার মধ্যে ২০টি দ্বিতীয় শ্রেণীর কোচ থাকবে। ঈদের বিশেষ ট্রেনযাত্রাও প্রায় ৪০টি কোচ ঘাটতি রেখেই সাধারণ মানুষের জন্য চলাচলকারী মেইল-এক্সপ্রেস ট্রেন যাত্রী পরিবহন করবে। অন্যদিকে পশ্চিমাঞ্চলে চলাচলকারী আন্তঃনগর ট্রেনের স্ট্যান্ডার্ড কম্পোজিশনের চেয়ে ঘাটতি ৩৩টি কোচ সংযোজনের পর আরো ২৭টি কোচ অতিরিক্ত দেয়া হবে। ফলে পশ্চিমাঞ্চলে ব্রড গেজ মেইল ও আন্তঃনগর ট্রেনগুলোয় দ্বিতীয় শ্রেণীর কোচের ঘাটতি থাকবে না। তবে লালমনিরহাট ডিভিশনে চলাচলকারী মিটার গেজ ট্রেনে ২০টির মতো দ্বিতীয় শ্রেণীর কোচ ঘাটতি থাকবে।

রেলের উভয় অঞ্চলের পরিবহন বিভাগের দেয়া তথ্যানুসারে দেখা গেছে, পশ্চিমাঞ্চল রেলে আন্তঃনগর ও দ্বিতীয় শ্রেণীর কোচ মিলিয়ে ব্রড গেজে ৪০০ ও মিটার গেজে ১৫০টি কোচের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে গত রোববার ৩৩টি কোচ দিয়ে চলমান ট্রেনগুলোর ঘাটতি মেটানো হয় এবং ২৭টি কোচ দিয়ে ঢাকা-রাজশাহী ও পার্বতীপুর-ঢাকা রুটের ঈদের বিশেষ ট্রেনের রেক তৈরি করা হবে। অন্যদিকে পূর্বাঞ্চল রেলে গত রোববার পর্যন্ত আন্তঃনগর ট্রেনে দুটি ও দ্বিতীয় শ্রেণীর ট্রেনে ৬১টি কোচ ঘাটতি রয়েছে।

কোচ ঘাটতির বিষয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলের চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট মো. বেলাল উদ্দিন বলেন, পশ্চিমাঞ্চল রেলের কোচ ঘাটতির পরিমাণ তুলনামূলক কম। এর পরও ঈদ উপলক্ষে ৬০টি অতিরিক্ত কোচ মেরামত করা হচ্ছে। যাত্রী চাহিদা অনুযায়ী কোচ সরবরাহ ছাড়াও নতুন আন্তঃনগর কোচ আমদানির ফলে পুরনো কোচগুলোকে দ্বিতীয় শ্রেণীর কোচে রূপান্তর করা হচ্ছে। পুরনো ৩৫টি কোচ দ্বিতীয় শ্রেণীতে রূপান্তর শেষ হলে দ্বিতীয় শ্রেণীর কোচের ঘাটতিও কমে আসবে বলে জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *