বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি) ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) পদ বর্তমানে শূন্য। আগামী অক্টোবরে শূন্য হচ্ছে জনতা ও বেসিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদও। এ অবস্থায় রাষ্ট্রায়ত্ত এ চার ব্যাংকে নতুন এমডি নিয়োগের কথা ভাবছে সরকার। বিকেবি ও রাকাবের এমডি নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। অন্য দুটি ব্যাংকের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা নিশ্চিত করেছেন।
গত বৃহস্পতিবার অবসরে গেছেন বিকেবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মুহাম্মদ আউয়াল খান। এর আগে ১ আগস্ট রাকাবের এমডি কাজী সানাউল হককে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) এমডি হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। ফলে শূন্য রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংক দুটির শীর্ষ নির্বাহীর পদ।
জানা গেছে, বিকেবি ও রাকাবের এমডি পদে নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর নয়জন উপব্যবস্থাপনা পরিচালকের (ডিএমডি) তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে তৈরি করা ওই তালিকার প্রথম স্থানে রয়েছে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ডিএমডি মো. মুঈন উদ্দীনের নাম। তাকে রাকাবের এমডি পদে নিয়োগের বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত বলে জানা গেছে। মো. মুঈন উদ্দীন ব্যাংকটির কর্মকর্তা হিসেবেই চাকরিজীবন শুরু করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে অগ্রণী ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেনের নাম, যিনি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) কর্মকর্তা হিসেবে চাকরিজীবন শুরু করেছিলেন। তাকে বিকেবির এমডি পদে নিয়োগ দেয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো তালিকায় স্থান পাওয়া অন্যরা হলেন— জনতা ব্যাংকের মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, অগ্রণী ব্যাংকের মো. রফিকুল আলম, মো. মশিউর আলী, সোনালী ব্যাংকের আমিন উদ্দিন আহমেদ ও তারিকুল ইসলাম চৌধুরী, কৃষি ব্যাংকের মাহতাব জাবিন ও অগ্রণী ব্যাংকের মো. আলী হোসেন প্রধানিয়া।
জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. ইউনুসুর রহমান বলেন, বিশেষায়িত দুটি ব্যাংকের এমডি নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। তবে কবে নাগাদ এমডি নিয়োগ দেয়া হবে, সে বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি তিনি।
এদিকে আগামী ১ অক্টোবর শেষ হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের এমডি খোন্দকার মো. ইকবালের মেয়াদ। ২০১০ সাল-পরবর্তী চার বছর নজিরবিহীন লুটপাটের শিকার হওয়া বেসিক ব্যাংকে ২০১৪ সালের ১ অক্টোবর এমডি পদে খোন্দকার মো. ইকবালকে নিয়োগ দেয় সরকার। ডুবন্ত বেসিক ব্যাংককে টেনে তুলতেই গত তিন বছর পার করেছেন তিনি। রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের এমডি হিসেবে মো. আবদুস সালামের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২৮ অক্টোবর। বিসমিল্লাহ গ্রুপের ঋণ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে নাজুক পরিস্থিতিতে পড়া জনতা ব্যাংকের এমডি হিসেবে ২০১৪ সালের ২৮ অক্টোবর নিয়োগ পান তিনি।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রমতে, রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক, অগ্রণী, রূপালীসহ বিভিন্ন ব্যাংকে বেশি অনিয়ম হয়েছে এমডিদের দ্বিতীয় মেয়াদে। অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরোধিতা সত্ত্বেও একাধিক ব্যাংকে গত আট বছরে দ্বিতীয় মেয়াদে এমডি নিয়োগ দিয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। কিন্তু ফলাফল ভালো না হওয়ায় এ নীতি থেকে সরে এসেছে সরকার। তিন বছরের জন্য এক মেয়াদে এমডির দায়িত্ব পালন করা কাউকেই দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়োগ দেয়া হবে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, অক্টোবরে শূন্য হতে যাওয়া জনতা ও বেসিক ব্যাংকের এমডি নিয়োগের জন্য এখনই কার্যক্রম শুরু করেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এ দুটি ব্যাংকে নিয়োগের ক্ষেত্রে অন্য ব্যাংকের বিদ্যমান এমডিদের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যাওয়া ডিএমডিদের তালিকার নামগুলোও বিবেচনা করা হচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের এমডি পদে রূপালী ব্যাংকের বর্তমান এমডি মো. আতাউর রহমান প্রধানকে নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি এরই মধ্যে আলোচনায় এসেছে।