এম এ কাহার বকুল:
লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ,
লালমনিরহাটসহ সারা দেশে
গত কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে ভেসে আসা বানভাসি মানুষের কান্না আর আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠেছে তিস্তা পাড়। ঘর-বাড়ি হারিয়ে পরিবার নিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে তারা। গত কয়েক বছরের চেয়ে এবার স্মরণকালের ভয়াবহ তিস্তা নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছে দুই লক্ষাধিক পরিবার। গৃহহারা হয়ে আশ্রয় নিয়েছেন পাউবো গাইডবাঁধ, হ্যালি প্যাডে। কেউবা সব হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে কুঁড়ে ঘর করে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ভারতের উজানের ঢলে ও এক সপ্তাহে প্রবল বৃষ্টির ফলে তিস্তা নদী ফুঁসে উঠেছে।
লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান, ঠাংঝাড়া, পাসশেখ সুন্দর, নিজ শেখ সুন্দর, গড্ডিমারী, চর গড্ডিমারী, নিজ গড্ডিমারী, সিঙ্গিমারী, ধুবনী, চর সিন্দুনা, হলদীবাড়ী, পাটিকাপাড়াও ডাউয়াবাড়ী, বিছন দই, পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ও নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার চর খড়িবাড়ী, টাপুর চর,পূর্ব খড়িবাড়ী এলাকার প্রায় লক্ষাধিক পরিবার গৃহহারা হয়ে বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন। লালমনিহাটে ৫ উপজেলায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় দুই লক্ষ পরিবার।
লালমনিরহাটের নদ-নদীগুলোতে পানি কমে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। তবে বন্যার্ত লোকজনের চরম দুর্ভোগ বেড়ে গেছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলা ও উদ্ধার তৎপরতা চালাতে সেনাবাহিনী মোতায়ন করা হয়েছে।হাতীবান্ধায় রেলপথ ভেঙে যাওয়ায় সারাদেশের সাথে লালমনিরহাটের রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বন্যা কবলিত এলাকাগুলোর রাস্তা-ঘাট ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে দুই শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। গোটা জেলার লক্ষ লক্ষ একর জমির আমন ধানখেত পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অসংখ্য মৎস্য খামারের মাছ ভেসে গেছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মাঝে যে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। বন্যার্ত নিন্ম আয়ের লোকজনের মাঝে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র গুলোতেও লোকজন চরম মানবেতর জীবন যাপন করছে।
এ দিকে দুই দিন ধরে সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহেমদ ও মোতাহার হোসেন এমপি বন্যার্ত এলাকা পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রেখেছেন।এছাড়া সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও বিভিন্ন সমাজের প্রতিনিধিরা বন্যার্তদের মাঝে ত্রান বিতরন করছেন।
এদিকে কর্নেল মর্তুজার নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর তিনটি টিম জেলা সদর, আদিতমারী ও হাতীবান্ধা উপজেলায় বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ, উদ্ধার ও সংস্কারমূলক কাজ শুরু করেছেন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে বন্যার্ত লোকজনের সাথে কথা বললে তার বলেন: এবার স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় আমাদের মানবেতর জীবনযাপন করছি। শুকনা খাবার খেয়ে দিন-রাত পাড় করছি। পানি টুকু খাবো তাও অনেক কষ্ট করে পানি খেতে হচ্ছে। আনেক আবাদি জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। কেমন করে বাঁচবো ছেলে মেয়েদের নিয়ে।
বন্যার পানি নেমে গেলেও এখন আমাদের দুর্ভোগ বেড়ে যাচ্ছে। ধানখেত পচে যাচ্ছে, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লে. তানজিম হাসান রাহাত বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় লালমনিরহাটের আদিতমারী ও হাতীবান্ধায় সেনাবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। আমরা বন্যার্ত লোকজনের পাশে আমরা আছি।
লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার নাজমুল ইসলাম বলেন, বন্যায় লালমনিরহাট-বুড়িমারী স্থলবন্দর রেলওয়ে রুটের ৭৮ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে তিনটি স্থানে ভেঙে গেছে। ফলে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ বলেন,বন্যা পরিস্থিতি অনেকটা উন্নতি হয়েছে। এসব পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণের কাজ চলছে। বন্যার্ত পরিবারের মাঝে তাদের কোনো প্রকার সমস্যা হলে তা সমাধান করার চেষ্টা করবো।