চীনের ক্রমবর্ধমান উত্থানের মুখে আঞ্চলিক সংহতি জোরদার করার লক্ষ্য নিয়ে সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে যাচ্ছেন ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। চলতি সপ্তাহে নেপালে সম্মেলনটি হওয়ার কথা; কিন্তু পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের উত্তেজনা বহাল থাকায় মোদির লক্ষ্য কতটা সফল হবে, তা নিয়ে বিশ্লেষকদের সন্দেহ রয়েছে।
সার্ক শীর্ষ সম্মেলনটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন কিছুদিন আগেই কাশ্মীরে এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ আন্তঃসীমান্ত সংঘাতে জড়িয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। এদিকে চলতি বছরেই যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনী আফগানিস্তান ত্যাগ করতে যাচ্ছে। এতে দেশটিতে প্রভাব বিস্তার নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরও জোরালো হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ব্রুকিংস ইনস্টিটিউটের মতে, অতীতের বদনাম ঘুচিয়ে ভারত এবার সার্কের ভবিষ্যৎ বিষয়ে নতুন আশা জাগাতে দৃঢ় পদক্ষেপ নেবে। সাম্প্রতিক এক ব্রিফিংয়ে ব্রুকিংস জানায়, ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে সংঘাতের কারণে এই সম্মেলনে সার্ক নিয়ে অগ্রগতির আশা খুব কম। মোদি গত মে মাসে তার শপথ অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফসহ আঞ্চলিক নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে নতুন আশার সঞ্চার করেছিলেন; কিন্তু সে আশা ধূলিসাৎ হয়ে যায় যখন ভারত দুই দেশের মধ্যকার উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠক বাতিল করে দেয়। কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে দিলি্লতে নিযুক্ত পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত বৈঠক করায় ক্ষুব্ধ ভারত ওই সিদ্ধান্ত নেয়। তার পর থেকেই কাশ্মীরে দুই দেশের মধ্যে বারবার গোলাগুলির ঘটনা ঘটে চলেছে। এই প্রেক্ষাপটে ভারতের নতুন ডানপন্থি সরকার তার পূর্বসূরিদের চেয়ে পাকিস্তান ইস্যুতে আরও আগ্রাসী নীতি অবস্থান গ্রহণ করে। কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচন সামনে রেখে মোদি পাকিস্তান ইস্যুতে আরও কঠোর হবেন বলেও বিশ্লেষকদের ধারণা। দিলি্লভিত্তিক রাজনৈতিক গবেষক কেজি সুরেশ বলেন, ভারত ও পাকিস্তানের নেতাদের মধ্যে যা ঘটবে সার্ক সম্মেলন তাতে আড়াল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দুই নেতা মিলিত হওয়াটা সার্কের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।
পাকিস্তানের প্রতি এ নীতি গ্রহণের পাশাপাশি ভারত তার ছোট প্রতিবেশীদের আরও কাছাকাছি যাওয়ার নীতি গ্রহণ করে। মোদির আগের সরকারগুলো এই প্রতিবেশীদের অবহেলা করেছিল। যে কারণে এ অঞ্চলে ভারতের মূল প্রতিপক্ষ চীন ওই দেশগুলোতে সহজেই তার প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়। বিশ্লেষকরা একমত যে, ভারত ও পাকিস্তানে সহযোগিতার ওপরই আট দেশের জোট সার্কের সাফল্য নির্ভর করছে। ন্যাটো বাহিনীর আফগানিস্তান ত্যাগও ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বৈরিতাকে উস্কে দিতে পারে।
সার্কে কথা হতে পারে মোদি-নওয়াজের
নেপালে চলতি সপ্তাহের শেষে সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের মধ্যে বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারিভাবে এ দুই নেতার মধ্যে বৈঠকের কোনো ঘোষণা না থাকলেও পাকিস্তানের একজন সরকারি কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে দেশটির দৈনিক ‘দি এক্সপ্রেস ট্রিবিউন’ এ খবর দিয়েছে।