১৬ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

Slider জাতীয়

78738_f1

টানা বর্ষণ ও ভারতের পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলে তলিয়ে গেছে উত্তরাঞ্চল। ১৬ জেলায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। পানিতে ডুবে মারা গেছে অন্তত ২৬ জন। এর মধ্যে দিনাজপুরে ১৪, কুড়িগ্রামে ৬, লালমানিরহাটে একই পরিবারে ৪ জনসহ ৫ ও ঠাকুরগাঁয়ে ১ জন রয়েছে। গত দুই দিনে পানিতে তলিয়ে অন্তত ১৫০২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানা বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ রাখা হয়েছে ওই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি পরীক্ষা। লালমনিরহাটে রেল লাইনের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা। একই সঙ্গে বেশ কিছু এলাকায় সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাও বন্ধ হয়ে গেছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে তিস্তা ব্যারাজ এলাকায়। অন্যদিকে ক্রমাগত বৃষ্টির কারণে বেড়েই চলেছে নদ-নদীর পানি। বিভিন্ন নদ-নদীর অন্তত ২৫টি স্টেশনে পানি বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। নদ-নদীর ৯০টি পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে ৭৭টি স্টেশনে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে ফের বন্যায় ঘরবাড়ি ছেড়ে উঁচু রাস্তা কিংবা বাঁধে অবস্থান নিয়েছে বানভাসি অসংখ্য পরিবার।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী আগামী কয়েকদিন পানি আরো বাড়তে পারে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর বাংলাদেশ অংশ ও মেঘনা নদীর অববাহিকায় পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও তা বিপদসীমার সামান্য নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া,  তিস্তা-ধরলা-দুধকুমার অববাহিকার ভারতীয় অংশে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে এই তিন নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে তিস্তা বেসিনে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। আঞ্চলিক পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, আগামী কয়েকদিনে পানি আরো বাড়তে পারে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন মানবজমিনকে বলেন, একই সময়ে গত ৩/৪ দিন ধরে ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা অববাহিকায় পানি বৃদ্ধির ফলে উত্তরের এবং উত্তর-পূর্বের নিম্নাঞ্চলের বন্যা মধ্যাঞ্চল ও দক্ষিণ-মধ্যাঞ্চলে বিস্তৃতি লাভ করতে পারে।
বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. একেএম সাইফুল ইসলাম বলেন, ভারতের আসাম প্রদেশের ব্রহ্মপুত্র নদী এলাকায় বন্যা হওয়ায় সেখান থেকে পানি নেমে বাংলাদেশের ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি পানি বৃদ্ধি পেয়েছে যমুনা নদীর বাহাদুরাবাদ, সারিয়াকান্দি ও সিরাজগঞ্জ স্টেশনে। যমুনা এবং মেঘনা নদীর পানি অব্যাহতভাবে বাড়ছে। একই সঙ্গে এর শাখা নদী সুরমা, কুশিয়ারা, ভোগাই কংস নদীতেও পানি বাড়ছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে জানা যায়
লালমনিরহাটের ৫ উপজেলার তিস্তা, ধরলা, সানিয়াজান, সিঙ্গীমারী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ২ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। রেললাইনের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় ঢাকা-লালমনিরহাট রুটে রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে। সদর উপজেলার তিস্তা রেলস্টেশন সংলগ্ন ও জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার কয়েক জায়গায় রেললাইনে উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় লাইনের নিচে বিশাল আকার গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এতে বর্তমানে লালমনিরহাট-বুড়িমারী রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের পারুলিয়া নামক স্থানে পাকা রাস্তার উপর দিয়ে তিস্তার পানি প্রবেশ করায় হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের সঙ্গে খানের বাড়ি যাওয়ার একমাত্র পাকা রাস্তা ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন পয়ে পড়েছে।  রোববার সকালে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যারাজের সব ৪৪টি গেট খুলে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় জারি করা হয়েছে রেড অ্যালার্ট।
কুড়িগ্রামের ধলাই ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়াই ঢাকার সঙ্গে কুড়িগ্রামের সকল প্রকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ধরলা নদীতে ৩ টি লাশ ভেসে এসেছে। রোববার সকালে ধলাই নদীর পানি বিপদসীমার ১১২ সেন্টিমিটার ও চিলমারি পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এতে এলাকার ৫০টি ইউনিয়নের ২ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এদিকে রাজারহাট উপজেলার ১৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠায় প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আরো ২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যাকবলিত মানুষ আশ্রয় নেয়ায় ওইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে জেলায় বন্ধ হয়ে গেছে ৪৪৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
জামালপুরে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি বেড়ে বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপদসীমার ৬৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এতে ইসলামপুর উপজেলার উলিয়া, পার্থশী, চিনাডুলী, কুলকান্দি, সাপধরী, চুকাইবাড়ি, নোয়ারপাড়া, দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ, চিকাজানী এবং মেলান্দহের মাহমুদপুর ইউনিয়নের অন্তত ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ১১টি বিদ্যালয়।
গাইবান্ধার ফুলছড়ি পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি রোববার সকাল ৬টায় বিপদসীমার ২৯ সেন্টিমিটার ও ঘাঘট নদীর পানি শহররক্ষা বাঁধ পয়েন্টে বিপদসীমার ৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এছাড়া তিস্তা ও করতোয়া নদীর পানি ব্যাপক বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি বৃদ্ধির ফলে নদ-নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
সিরজাগঞ্জের যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এতে সিরাজগঞ্জের করতোয়া, গুমানী, হুরাসাগর, ফুলজোড় নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন করে আবারও বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
ঠাকুরগাঁওয়ের টঙ্গন, সেনুয়া ও শুক নদীসহ আঞ্চলিক নদীগুলোতে রোববার সকাল থেকে পানি বিপদসীমার ৪০ মিলিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এতে জেলার প্রায় ১ হাজার গ্রামের প্রায় ৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর গ্রামে বন্যার পানির আতঙ্কে রেহেনা পারভীন নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার টাঙ্গন নদীর তীরে অবস্থিত ডিসি বস্তিতে প্রবল স্রোতের মুখে আটকা পরা বেশ কয়েকজনকে উদ্ধার করেছে রংপুর ডিভিশন সেনাবাহিনী। তবে এখনো রিয়াদ (২০) নামে একজন নিখোঁজ রয়েছে। জেলার ৬৫টি আশ্রয় কেন্দ্রে ১২ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
পঞ্চগড়-ঠাকুরগাঁওয়ের রেলপথের নয়ন ব্রিজ এলাকায় ২ কিলোমিটার রেলপথ ডুবে যাওয়ায়  ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় থেকে ট্রেন চলাচল দুই দিন থেকে বন্ধ রয়েছে।
রংপুরে তিস্তা ও ঘাঘটসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার গঙ্গাচড়া, পীরগাছা, কাউনিয়া ও বদরগঞ্জ উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে বিভিন্ন এলাকায় রোপণকৃত আমনখেতসহ বিভিন্ন ফসল। গঙ্গাচড়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। পীরগাছায় ৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
ব্রহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরে পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলে পণ্য আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম একদিন বন্ধ থাকার পর পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় আবার শুরু হয়েছে। এর আগে আখাউড়া স্থলবন্দরসহ সীমান্তবর্তী অন্তত ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে আখাউড়া ইমিগ্রেশন, স্থল শুল্ক স্টেশনে হাঁটুপানি জমে এবং আখাউড়া-আগরতলা আন্তর্জাতিক সড়কের বেশ কিছু অংশ পানিতে তলিয়ে যায়।
জয়পুরহাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় জেলার পাঁচবিবি, ক্ষেতলাল, আক্কেলপুর ও সদর উপজেলার কমপক্ষে ১০টি ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
দিনাজপুরে পানির তোড়ে ভেঙে গেছে শহররক্ষা বাঁধ। দিনাজপুর জেলায় পানিতে ডুবে, দেয়াল চাপায় ও সাপের কামড়ে অত্যন্ত ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম। তিনি জানান, নিহতদের মধ্যে সদরে ৫ জন, বিরল উপজেলায় ৫ জন, কাহারুলে ৫ জন ও ঘোড়াঘাটে ১ জন। রোববার ভোরে মাহুতপাড়া তুত বাগানের কাছে শহররক্ষা বাঁধ ভেঙে যায়। অন্যদিকে প্রবল বর্ষণে দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার পল্লীতে দেয়াল চাপা পড়ে আরোদা রানী দাস (৫০) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে।
ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন সম্পূর্ণ প্লাবিত হয়ে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। শনিবার সকালে দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের নেতাই নদীর বাঁধ ভেঙে নয়াপাড়া, দিঘলভাগ, কড়ইগড়া, কাশিপুর, বল্লভপুর, সোহাগীপাড়া, খাগগড়া, ১৪টি গ্রামের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করে। এতে দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের অন্তত ২০ হাজার মানুুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে যাদুকাটা, পাঠলাই, বৌলাই, সুরমাসহ নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে উপজেলার অর্ধশতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ১০২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে।
মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার কাউয়াদীঘি হাওরসহ মনু ও কুশিয়ারা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে বন্যা আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এছাড়াও কাউয়াদীঘি হাওরের পানি বৃদ্ধির কারণে আমন চাষ ব্যাহত হচ্ছে। উপজেলার ১৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এতে বিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতি একেবারেই কমে গেছে। গত ৩ মাস ধরে মৌলভীবাজার-রাজনগর-বালাগঞ্জ সড়কে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
নড়াইলের কালিয়া থানার নবগঙ্গা নদীতে ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে কালিয়া পৌরসভার বড়কালিয়া-নাওরা ঝুকিপূর্ণ ওয়াপদা বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের প্রায় ২৫ হাজার পরিবার ও ৫ হাজার ৭০০ হেক্টর ফসলি জমিসহ প্রায় ১ হাজার মাছের ঘের ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।
এদিকে দেশের বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব ধরনের ছুটি বাতিল করেছে সরকার। রোববার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত এক আদেশ জারি করা হয়। পুনরায় আদেশ না দেয়া পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং এর আওতাধীন অধিদপ্তর ও সংস্থার সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সার্বক্ষণিক দায়িত্বে নিয়োজিত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে বন্যা পরিস্থিতির অবনতির কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২০১৫ সালের ডিগ্রি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। রোববার পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
লালমনিরহাটে পানিবন্দি ৫ লাখ মানুষ, নিহত ৪, নিখোঁজ ২২
লামনিরহাট প্রতিনিধি জানান, বন্যায় ভাসছে লালমনিরহাট জেলার প্রায় ৫ লাখ মানুষ। তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ১৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়ার রেকর্ড করেছে। শুধু লালমনিরহাট জেলায় তিস্তা নয়, রেকর্ড ছাড়িয়েছে ধরলা নদীর পানিও। পানির প্রবল স্রোতে তিস্তা ব্যারেজ হুমকির মুখে পড়ায় ব্যারেজের ফ্ল্যাট বাইপাস ভেঙে দেওয়ায় হাতিবান্ধা উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা ৩ ফিট পানিতে তলিয়ে যায়। এছাড়া লালমনিরহাট জেলায় তিস্তা-ধরলা নদীর পানির বন্যায় জেলার ৪৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪৩ ইউনিয়নের তিন শতাধিক গ্রাম তলিয়ে গেছে। লালমনিরহাট সদর উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা পানির নিচে চলে গেছে। লালমনিরহাট সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকার পানিবন্দি হাজার হাজার পরিবার বাড়ি ছেড়ে দলে দলে নিরাপদ স্থানের সন্ধানে ছুটছে। বন্যা-দুর্গত পরিবারগুলো বিভিন্ন স্থানে পানিতে আটকা পড়ে আছে। তাদের নৌকা ও ট্রাকে করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে মাইকিং। সরকারিভাবে বন্যা-দুর্গত পরিবারের মাঝে এখনো ত্রাণ-সামগ্রী না পৌঁছার কারণে পরিবারগুলো অনাহারে রয়েছে। এছাড়া সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের বডুয়া গ্রামে একই পরিবারের ৪ জন নিহত ও ১২ জন নিখোঁজ রয়েছে। বন্যার পানিতে রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় মারা যায় বলে পরিবারের লোকজন জানান এবং কুলাঘাট ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেন। হাতিবান্ধা এলাকায় রেললাইন ভেঙে যাওয়ায় লালমনিরহাট-বুড়িমারী রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। মহাসড়ক তিন ফুট পানির নিচে থাকার কারণে বন্ধ রয়েছে লালমনিরহাট-পাটগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল। এছাড়া বড়বাড়ী এলাকায় বন্যায় ভেসে গেছে আরো ১২ জন। তবে নিখোঁজ ও নিহত সম্পর্কে জেলা প্রশাসন কোনো তথ্য দেয়নি। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন নিজস্ব কার্যালয়ে বন্যা মোকাবিলায় জরুরি সভা করেছে। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. শফিউল আরিফ জানান, বন্যা মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি চলছে, ত্রাণের কোনো সমস্যা নেই।
সুরমার পানি বৃদ্ধি
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জে সকল নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হয়েছে। জেলার সবকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। গতকাল সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৮২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বন্যার কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ। এদিকে পৌর শহরে নিম্নাঞ্চলে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন পৌর এলাকার বাসিন্দারা।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ দাবি করেন তার উপজেলার নিম্নাঞ্চলের কমপক্ষে  অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইদ্রিছ আলী বীরপ্রতীক বললেন, উপজেলার সব কয়টি ইউনিয়নের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দোয়ারা-ছাতক সড়কের ৩টি স্থানে পানি উঠেছে। দোয়ারাবাজার- বাংলাবাজার এবং দোয়ারাবাজার- বোগলা সড়কে পানি ওঠায় উপজেলা সদরের সঙ্গে সব কয়টি ইউনিয়নের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পানি বাড়তে থাকলে মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়বে। সুরমা নদীর পানি কূল উপচে সুনামগঞ্জ-ধারারগাঁও সড়ক ডুবিয়ে দেয়ায় কোরবাননগর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। এই সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী সুরমার উত্তর পাড়ের ৩ ইউনিয়নসহ কোরবাননগর ইউনিয়নের মানুষ যাতায়াতে ভোগান্তিতে পড়েছেন। সুনামগঞ্জ-ধারারগাঁও-হালুয়ারঘাট সড়কের ৩ স্থানে পানির তোড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এলজিইডি ও কোরবাননগর ইউনিয়নের উদ্যোগে বালির বস্তা ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *