বন্যার পানি বাড়তে থাকায় বিপর্যয় দেখা দিয়েছে উত্তরবঙ্গে রেল যোগাযোগে। তিস্তা ও ধরলার পানিতে বুড়িমারী স্থলবন্দর-লালমনিরহাট রেললাইনের তিনটি স্থানে ভাঙন দেখা দেয়ায় গতকাল সকালে ওই লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ভাঙনের কারণে বুড়িমারী স্থলবন্দরে একটি লোকাল ট্রেন আটকে পড়ার ঘটনাও ঘটে।
বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নবনির্মিত পঞ্চগড়-ঠাকুরগাঁও ব্রড গেজ রেললাইনও। রেললাইনের ওপর দিয়ে পানিপ্রবাহের কারণে নয়নিবুরুজ থেকে কিসমত স্টেশন পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার রেলপথের বিভিন্ন জায়গায় স্লিপারের নিচে পাথর ও মাটি সরে গেছে।
জানা যায়, শনিবার রাতে বুড়িমারী-পাটগ্রাম রেললাইনের পাটগ্রাম ব্র্যাক অফিস এলাকায় একটি রেলব্রিজের পাশে সড়ক ভেঙে পড়ে। একই রুটের হাতীবান্ধা রেলওয়ে স্টেশন থেকে হাতীবান্ধা আলিমুদ্দিন ডিগ্রি কলেজের মাঝামাঝি স্থানের রেললাইনও ভেঙে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এ রুটের পারুলিয়া-ভোটমারী রেললাইনের মাঝামাঝি স্থানও। এতে রুটটিতে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত রুটটিতে ট্রেন পরিচালনা করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগীয় সদর দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম।
বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ভয়াবহ বন্যায় লালমনিরহাট-বুড়িমারী স্থলবন্দর রেলওয়ে রুটের ৭৮ কিলোমিটারের তিনটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। একটি লোকাল ট্রেন বুড়িমারী স্থলবন্দরে আটকা পড়েছে। অন্য সব ট্রেনের শিডিউল বাতিল করা হয়েছে। পানি নেমে যাওয়ার পর এ রুটের ভাঙা স্থানগুলো সংস্কার করে ট্রেন চালানো হবে। তবে কবে নাগাদ ট্রেন চালানো সম্ভব হবে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি তিনি।
বন্যায় বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে পঞ্চগড় রেললাইনেরও। ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন ট্রেন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় শনিবার সকাল থেকে পঞ্চগড়-ঠাকুরগাঁওয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে সারা দেশের সঙ্গে পঞ্চগড়ের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তবে বালির বস্তা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানগুলো সংস্কারের চেষ্টা করছে রেল বিভাগ। রেললাইনের ওপর দিয়ে পানির স্রোত বইতে থাকায় সে কাজও বিঘ্নিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।
পঞ্চগড় রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার বজলুর রহমান বলেন, অতিবর্ষণ ও পানির প্রবল স্রোতে কিছু জায়গায় রেললাইন (ওয়াশ আউট) ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এজন্য পঞ্চগড় থেকে ঢাকায় রেল চলাচল বন্ধ রয়েছে। ঢাকার যাত্রীদের ঠাকুরগাঁও থেকে যাতায়াতের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন দেখতে শনিবার সন্ধ্যায় রাজশাহী থেকে রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিয়ার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধ দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের লালমনিরহাট ডিভিশনের ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে রেললাইনের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। অনেক জায়গায় পাথর ও মাটি সরে গেছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত লাইন সংস্কারের চেষ্টা করছি। তবে পানি নেমে গেলেই পুরোপুরিভাবে সংস্কার করা হবে। ট্রেন চলাচলও তখন স্বাভাবিক হবে।
জেলায় বৃষ্টির তীব্রতা খানিকটা কমে এসেছে বলে জানিয়েছেন পঞ্চগড় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান। তিনি জানান, শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত পঞ্চগড়ে ২৯০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। আর শনিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৩২ মিলিমিটার।
দ্বিতীয় দফার বন্যায় ঠাকুরগাঁওয়ের সার্বিক পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে নতুন নতুন এলাকা। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিসের তথ্যমতে, জেলার পাঁচটি উপজেলায় ৪০টি ইউনিয়নের কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় যাচ্ছেন বন্যা উপদ্রুত লোকজন। কেউ কেউ গবাদিপশু নিয়ে খোলা আকাশের নিচেই অবস্থান করছেন।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা শফিকুর রহমান জানান, বন্যাকবলিতদের মধ্যে এ পর্যন্ত ৭০ টন চাল ও নগদ আড়াই লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। প্রতিদিনের চাহিদা প্রতিদিনই প্রেরণ করা হচ্ছে।