এস. এম. মনিরুজ্জামান মিলন, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ প্রতি বছরই বর্ষার সময় ঠাকুরগাঁওয়ের নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। কিন্তু ‘৮৮ এর বর্ষার এরকম প্রলয়ঙ্করী রূপ দেখেনি কেউই।
টানা ৩ দিন অনবরত বৃষ্টি। আর উপরি হিসেবে মিত্রদেশ ভারত বন্যার শংকায় ২১ টি বাঁধ খুলে দিয়েছে। টাঙনের পানি বিপদসীমার ৩৮ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রতিমুহূর্তে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।
পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ৫ হাজার পরিবার। প্রিয় ভিটেমাটি আর পোষা পশুপাখির মায়া ছেড়ে জীবন বাঁচাতে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয়গ্রহণ করেছে অসংখ্য মানুষ। বাড়ছে লাশের মিছিল। নিখোঁজদের তালিকাও খুব একটা ছোট নয়।
সবাই যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘বন্যাসেলফি’, ‘মানবতার ডাকে এগিয়ে আসুন’ শীর্ষক স্ট্যাটাস দিতে ব্যস্ত, এরকম সময়ে অনেকেই নিজের কাজকর্ম, হাজারও ব্যস্ততা রেখে বন্যার্তদের উদ্ধারকাজে এবং সাহায্যার্থে এগিয়ে আসছেন।
শুরুটা জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়ালকে দিয়ে। ‘টাঙনের পানি বাড়ছে’ এমন খবর পান তিনি। পরক্ষণেই গামছা মাথায় প্রচণ্ড বৃষ্টি উপেক্ষা করে হাজির হন টাঙন পাড়ের মানুষের খোঁজখবর নিতে।
জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়ালের পাশেই ছিলেন আর একজন। তিনি ঠাকুরগাঁও পৌরপিতা মির্জা ফয়সল আমিন। গতবছর বিভিন্ন এলাকায় যিনি কোমরসমান পানি পেরিয়ে খোঁজখবর নিয়ে বেড়িয়েছিলেন।
অনেকেই বলছেন, অর্পিত দায়িত্বভারেই কারণেই তারা এগিয়ে এসেছেন। কিন্তু অর্পিত দায়িত্ব থাকা সত্ত্বেও ক’জন এগিয়ে এসেছেন তাদের মতো?
প্রতিমুহূর্তে বন্যা পরিস্থিতি বেরিয়ে যাচ্ছে হাতের নাগাল থেকে। সরঞ্জামগত সীমাবদ্ধতার কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানই উদ্ধার অভিযান থেকে নিজেদের গুটিয়ে রেখেছে।
অনেক সাধারণ মানুষকে দেখা গেছে নিজের জীবন বিপন্ন করে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে ডুবতে থাকা প্রাণটিকে রক্ষা করতে। তাদের গল্পগুলো লিখতে গেলে হয়তো একটি উপন্যাস রচনা হয়ে যাবে। মনুষ্যত্বপূর্ণ এসব উপন্যাস হয়তো পরবর্তীতে অনেক মানুষকেও উদ্বুদ্ধ করবে।
ইএসডিও’র রেসকিউ টীম স্পীড বোটের মাধ্যমে প্লাবিত বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল হতে তিন শতাধিক মানুষকে পানিবন্দী অবস্থা হতে উদ্ধার করেছে। উদ্ধার অভিযানে অংশ নেন ইএসডিও’র সৈয়দ মাহবুবুল আলম মানিক, সুলতান আলী ও মোঃ সোহেল রানা। ছুটিতে বেড়াতে আসা বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর সদস্য স্টিভ ববি মুন্সি। তাৎক্ষণিক এই উদ্ধার অভিযানে স্পীড বোটটি চালিয়ে পানিবন্দী মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্র নিয়ে আসার কাজটি করে চলেছেন ব্যবসাসফল প্রতিষ্ঠান শামীম অটোসের স্বত্তাধীকারী মোঃ জীবন।
একে একে বন্যা দুর্গত মানুষদের পাশে দাঁড়াতে শুরু করেছে অনেক সেচ্ছাসেবী ও রাজনৈতিক সংগঠন। বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছে ঠাকুরগাঁও জেলা ছাত্রদল, উত্তরের অভিযাত্রিক। ত্রাণ বিতরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে আরও অনেকেই।
ব্যক্তিগত উদ্যোগেও অনেকে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছেন, করছেন। অনেকে নিজেকে প্রস্তুত করছেন বন্যা দুর্গতদের পাশে দাঁড়াবেন বলে।
এরকম পরিস্থিতিতে খুব কম মানুষই নিজের জীবন বাজি রেখে এগিয়ে আসে পরের কল্যাণকর্মে। তাদের মতো আরও অনেকেই এগিয়ে আসবে, এটাই আশা করছি। মানবতার ডাকে সাড়া দেওয়া এসব মানুষকে জানাই সেলাম।
এস. এম. মনিরুজ্জামান মিলন