এস. এম. মনিরুজ্জামান মিলন, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের অবিতরণকৃত অব্যবহারযোগ্য পাঠ্যপুস্তক বিক্রি করা হয়েছে। নিলামের কার্যাদেশ ভঙ্গ করে ওজন ছাড়া ও ২০১৭ সালের এসব পাঠ্যপুস্তক বিক্রি হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উপজেলা শিক্ষা অফিসের নিলাম কার্যাদেশ সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় কক্ষে সংরক্ষিত ২০১৩ সাল হতে ২০১৫ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত অবিতরণকৃত, অব্যবহারযোগ্য পাঠ্যপুস্তক ৩ হাজার কেজি প্রকাশ্যে নিলামে বিক্রির জন্য গত ৮ আগষ্ট নিলামে ডাকের দিন ধার্য করা হয়। এই নিলামে ৬টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। উক্ত নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতা মৌসুমী এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটর জিল্লুর রহমানকে প্রতিকেজি ১০ টাকা ৮০ পয়সা দরে দেওয়া হয়।
নিলামের ৫ দিনের মধ্যে রক্ষিত অবিতরণকৃত পাঠ্যপুস্তক সংগ্রহের জন্য নির্দেশ দেয় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস।
এছাড়া গুদামে ওজন করে পাঠ্যপুস্তক সংগ্রহ করার সময় ওজন যত কেজি বেশি হবে তত কেজির মূল্য পরিশোধ করতে হবে বলে উল্লেখ্য করা হয়েছে নিলাম কার্যাদেশে।
বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) বিকেলে মৌসুমী এন্টারপ্রাইজের লোকজন দুটি ট্রাক নিয়ে ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে নিলামকৃত পাঠ্যপুস্তক সংগ্রহের জন্য আসে।
এ সময় নিলামের কার্যাদেশ অমান্য করে উপজেলা শিক্ষা অফিসের যোগসাজশে গুদামে প্রায় ৪০ টন অবিতরণকৃত পাঠ্যপুস্তক ও ২০১৭ সালের পাঠ্যবইসহ ট্রাকে কোনোপ্রকার ওজন ছাড়া লোড করতে শুধু করে ওই প্রতিষ্ঠান।
এরপর একটি পাঠ্যপুস্তক লোডকৃত ট্রাক ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বের হয়। বিষয়টি ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের আশপাশের স্থানীয় লোকজন জানতে পেলে ঠাকুরগাঁও শহরের পুরাতন বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় ট্রাকটি আটক করে জনগণ।
এরপরেও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে আর একটি ট্রাকে উপজেলা শিক্ষা অফিসের লোক উপস্থিত থেকে গুদামে থাকা ২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ সালের পাঠ্যপুস্তক লোড করতে দেখা গেছে।
তাৎক্ষনিকভাবে জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়ালকে পাঠ্যপুস্তকের বিষয়ে অবহিত করলে তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুহুল আমিনকে পাঠ্যপুস্তকের গুদামে যাওয়া নির্দেশ দেন।
এ বিষয়ে আটককৃত ট্রাকের চালক মোঃ জাহাঙ্গীর জানান, এই ট্রাকে লোডকৃত বই ওজন করা হয়নি। এই ট্রাকে প্রায় ১৮ হাজার কেজির বেশি বই লোড করা হয়েছে।
মৌসুমী এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটর জিল্লুর রহমানের কাছে ওজন ছাড়া ও ২০১৭ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যপুস্তক ট্রাকে কেন উত্তোলন করা হয়েছে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিলামের নিয়ম অনুযায়ী অবিতরণকৃত বই সংগ্রহ করা হয়েছে।
গুদামে অন্ধকারের কারণে ভুল করে শ্রমিকরা ২০১৭ সালের পাঠ্যবই ট্রাকে উত্তোলন করেছেন। এছাড়া ৩ হাজার কেজির বেশি হলে তার মূল্য পরিশোধ করা হবে বলে জানান মৌসুমী এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটর জিল্লুর রহমান।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোশারফ হোসেন বলেন, নিলামে কার্যাদেশ মেনেই অবিতরণকৃত বই বিক্রি করা হয়েছে। ২০১৭ সালের কোন বই গুদামে ছিল না। নির্ধারিত ওজনের বেশি হলে তার মূল্য পরিশোধ করবে ওই প্রতিষ্ঠান।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুহুল আমিন জানান, খবর পেয়ে আমি তাৎক্ষনিকভাবে ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তক গুদাম পরিদর্শন করি। নিলামের কার্যাদেশের নিয়ম ভঙ্গ করে ওজন ও ২০১৭ সালের পাঠ্যবই ট্রাকে উত্তোলন করায় বই সংগ্রহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুহুল আমিন।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল জানান, নিলামের নিয়ম অমান্য করে উপজেলা শিক্ষা অফিসার বা নিলামে পাওয়া প্রতিষ্ঠানের কোন দূনীর্তি পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এস. এম. মনিরুজ্জামান মিলন