বরিশালের মুলাদী কলেজের দুই প্রভাষককে লাঞ্চিত এবং একজনকে পিটিয়ে আহত করেছে ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীরা। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বহিরাগতদের নিয়ে কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক ১ম বর্ষের ছাত্র শাওন এ হামলা চালায় বলে জানা গেছে।
এদিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত দুই প্রভাষকের মধ্যে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রভাষক আব্দুল আলিমকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। অপরজন বাংলা বিভাগের প্রভাষক হাফিজ আহম্মেদকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় কলেজ অধ্যক্ষ মো. দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
ছাত্রলীগ কর্মী পরিচয়ধারী শাওন মুলাদী পৌর শহরের লঞ্চঘাট এলাকার মো. দেলোয়ার হোসেনের ছেলে।
কলেজ শিক্ষক পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক সহকারী অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন জানান, কলেজ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ক্যাম্পাসে এইচএসসি লেভেলের শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত পোষাক এবং স্নাতক সম্মান ও ডিগ্রি (পাশ) কোর্সের শিক্ষার্থীদের পরিচয়পত্র গলায় ঝোলানো বাধ্যতামূলক করা হয়। ক্লাশ শুরুর আগে কলেজের আইন শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য শিক্ষকরা বিষয়টি প্রতিনিয়ত তদারকী করেন। মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে নির্দিস্ট পোষাক কিংবা পরিচয়পত্র ছাড়া এক যুবক এইচএসসি ভবনের দোতালায় উঠে যায়। এ সময় কমিটির সদস্য প্রভাষক আব্দুল হালিম এবং প্রভাষক হাফিজ আহম্মেদ তাকে চ্যালেঞ্চ করলে সে তাদের সাধে দুর্ব্যবহার করে এবং ধাক্কা দিয়ে আব্দুল আলিমকে মেঝেতে ফেলে দেয়।
এই দৃশ্য দেখে কলেজের শিক্ষার্থীরা জড়ো হলে কর্তৃপক্ষ শাওন নামে ওই ছাত্রকে শিক্ষক কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে ওই ঘটনার জন্য শাওন দুঃখ প্রকাশ করে এবং কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের রোষানল এড়াতে একজন পিওনের সহযোগীতায় তাকে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয়।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শাওন বহিরাগত ১০-১৫ জনকে সাথে নিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকে রড এবং বেঞ্চের পায়া ভেঙ্গে সরাসরি স্নাতক সম্মান ভবনের ২০২ নম্বর কক্ষে ডিগ্রি (পাশ) প্রথম বর্ষের ইসলামের ইতিহাস ক্লাশরত শিক্ষক আব্দুল আলীমের উপর চড়াও হয়। তারা ক্লাশরত অর্ধশত শিক্ষার্থীদের সামনে বেঞ্চের পায়া এবং রড দিয়ে তার মাথায় ও শরীরের একাধিক স্থানে আঘাত করে। এতে আব্দুল আলিম মেঝেতে লুটিয়ে পড়লে ছাত্রলীগ পরিচয়ধারীরা তাকে এলাপাথারী কিল-ঘুষি-লাথি দেয়। এ সময় ক্লাশের শিক্ষার্থীরা হতভম্ব হয়ে যায়। অন্যান্য শিক্ষকরা তাকে রক্ষা করতে গেলে তাদেরও লাঞ্চিত করা হয়। পরে তারা স্নাতক সন্মান ভবনের তৃতীয় তলায় ম্যানেজমেন্ট বিভাগ ভাঙচুর করে বীরদর্পে চলে যায় বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীদের অন্যতম প্রভাষক হাফিজ আহম্মেদ।
খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোতাহার মিয়া এবং থানার ওসি মতিয়ার রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও কাউকে আটক করতে পারেনি। পরে আহত আব্দুল আলিমকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি এবং হাফিজ আহম্মেদকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষকরা তাৎক্ষনিক ক্লাশ বর্জন করে। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি পৌর শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে ফের ক্যাম্পাসে গিয়ে শেষ হয়।
এ ঘটনায় কলেজ অধ্যক্ষ বাদী হয়ে মো. শাওনকে প্রধান অভিযুক্তসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা ৫/৭ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
কলেজ শিক্ষক পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক মো. জাকির হোসেন জানান, শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনার করে বিকেল ৩টার পর তারা ক্লাশ বর্জন কর্মসূচী প্রত্যাহার করেছেন। কিন্তু ওই ঘটনার প্রতিবাদে তারা এক সপ্তাহ কালোব্যাচ ধারনসহ অভিযুক্তদের গ্রেফতারে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা না হলে কঠোর আন্দোলনে যাবেন তারা।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্লা আজাদ হোসেন বলেন, হামলার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। কলেজ কর্তৃপক্ষের দেওয়া অভিযোগ মামলা হিসেবে রুজু করে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের সর্বাত্বক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।
জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি হেমায়েত উদ্দিন সুমন সেরনিয়াবাত বলেন, হামলাকারী শাওন ছাত্রলীগের কেউ নয়। মুলাদী কলেজ, পৌরসভা কিংবা উপজেলা ছাত্রলীগের কোথাও তার নাম নেই। ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করলেই কেউ ছাত্রলীগ হয়ে যায় না। শিক্ষকের উপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।
এদিকে ওই কলেজের একজন শিক্ষিকা বলেন, মুলাদী কলেজে অহরহ এরকম অনেক ঘটনা ঘটে। নেতারা কলেজে গিয়ে প্রায়ই দাঙ্গা হাঙ্গামা করে। পুলিশও নেতাদের ‘হুজর হুজুর’ করে। এসব কারণে ওই কলেজে আইন শৃঙ্খলা বলতে কিছু নেই বলে অভিযোগ করেন ওই শিক্ষিকা।