শরীয়তপুরে তরুণ তারকা প্রার্থীদের ছড়াছড়ি

Slider রাজনীতি

bd-pratidin-12-2017-08-01-02একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে শরীয়তপুর জেলার রাজনৈতিক অঙ্গন এখন মুখরিত। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তৃণমূলে দৌড়ঝাঁপের পাশাপাশি কেন্দ্রে বাড়ছে লবিং-তদবির। জেলার প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা ব্যানার-ফেস্টুন টাঙিয়েছেন। কোথাও কোথাও কোরবানি ঈদের আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্টার লাগানো হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও অনেক প্রার্থী প্রচারণায় সরব রয়েছেন। সবচেয়ে বেশি ঝড় তুলছেন অপেক্ষাকৃত তরুণ প্রার্থীরা। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে লড়াই হবে বলে মনে করেন সাধারণ মানুষ ও তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। তবে বিএনপি নেতাদের মাঠে প্রকাশ্যে তেমন দেখা না গেলেও ভিতরে ভিতরে তাদের তত্পরতা চলছে। অবশ্য দলটিতে দ্বিধাবিভক্তি থাকায় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ আছে। একই অবস্থা আওয়ামী লীগেও। আসন্ন ১৫ আগস্টকে ঘিরে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা শোডাউন-পাল্টা শোডাউন করছেন। মাঝে-মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে। এ জেলায় জাতীয় পার্টিসহ অন্য দলের তেমন কোনো তত্পরতা নেই বললেই চলে।

শরীয়তপুর-১ (পালং-জাজিরা-১) আসনটি বরাবরই আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে এ আসনে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে চলছে জটিল সমীকরণ। এ আসনের বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে গণসংযোগ করছেন। দলের ভিতরে-বাইরে নানামুখী চাপের মুখেও পালং-জাজিরায় রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দিরসহ ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। এ আসনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ইকবাল হোসেন অপুও দলের মনোনয়ন চাইবেন। দলের নেতা-কর্মীদের একটি অংশ তার পক্ষেও সভা-সমাবেশ করে যাচ্ছেন। এ ছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাবিদুর রহমান, জাজিরা উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোবারক আলী শিকদার, সাবেক মেয়র আবদুর রব মুন্সী, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল হাসেম তপাদার, শরীয়তপুর পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম কোতোয়াল, জাজিরা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোসারব হোসেন আকন্দও মনোনয়নপ্রত্যাশী। অন্যদিকে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সরদার নাসির উদ্দিন কালু। এ ছাড়া এ আসনে বিএনপি থেকে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা খান আমিনুল ইসলাম। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য তাহমিনা আওরঙ্গ, জেলা বিএনপির সদস্য মো. মিন্টু সওদাগর, যুবদলের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক আ. জব্বার খান, হেলাল উদ্দিন আকনও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। জাতীয় পার্টি থেকে জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মো. মাসুদুর রহমান তত্পরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।

শরীয়তপুর-২ (নড়িয়া-সখিপুর থানা) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদলের সম্ভাবনা আছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এ  কে এম এনামুল হক শামীম আগামীতে দলের একক প্রার্থী হতে পারেন। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি এলাকায় সাধারণ মানুষের পাশে রয়েছেন। সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে তার ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। পদ্মা ভাঙনকবলিতদের নিয়মিত খোঁজখবর রাখেন আওয়ামী লীগের এই নেতা। এ ছাড়া এমপি না হয়েও জেলায় উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত তিনি। এলাকার অনেকের চাকরি ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন তিনি। প্রয়াত আবদুর রাজ্জাক ও এ আসনের বর্তমান এমপি শওকত আলী যখন বাকশাল গঠন করেন তখন শরীয়তপুরে আওয়ামী লীগের ঝাণ্ডা উড়িয়েছেন তৎকালীন ছাত্রনেতা এনামুল হক শামীম।   এ আসনে আওয়ামী লীগ নেতা সুলতান মাহমুদ শিমন মোল্লাও মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে জানা গেছে। অন্যদিকে এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সভাপতি শফিকুর রহমান কিরণ। এ ছাড়া এ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য জামাল শরিফ হিরুও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি (অব.) কর্নেল ফয়সালও মনোনয়নপ্রত্যাশী।

শরীয়তপুর-৩ (ডামুড্যা-গোসাইরহাট ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার একাংশ) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে শক্ত অবস্থানে মাঠে রয়েছেন প্রয়াত জননেতা আবদুর রাজ্জাকের বড় ছেলে নাহিম রাজ্জাক এমপি। তিনি এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করছেন। তাই নেতা-কর্মীরা তার পাশে রয়েছেন। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের জন্যও তিনি প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বাহাদুর বেপারীও এ আসনে মনোনয়ন চাইবেন। তিনি গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও শরীয়তপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি অনল কুমার দে-ও মনোনয়নপ্রত্যাশী। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আফজাল হোসেন সবুজ। তিনি নেতা-কর্মীদেরও খোঁজখবর রাখছেন। তবে জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক টি আই এ মহিতুল গনি মিন্টু, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদ আহম্মেদ আসলামও মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে এম এ হান্নান মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *