তানোরে আমন ধান কাটার ধুম, পাশাপাশি চলছে আলু চাষেরও প্রস্তুতি

কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি
image_154436.rajshahi  tanore  dan kata alu lagano photo 23.11.2014রাজশাহীর তানোর উপজেলার বিস্তীর্ণ আমনের ফসল ঘরে তোলার আপেক্ষার পাশাপাশি আলু চাষাবাদে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন এঅঞ্চলের কৃষকরা। বিগত কয়েক বছর ধরে চাষিরা আলু চাষে সাফল্য আর্জন করায় এবারও স্বল্প খরচে অধিক ফলনের আশা নিয়ে কৃষকরা আলু চাষে সকল প্রকার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। তবে বীজের দাম বেশি হওয়ায় হতাশায় ভুগছেন চাষিরা।
ইতোমধ্যেই উপজেলার বিভিন্ন উঁচু জমিতে আগাম জাতের ধান কাটা শুরু হওয়ায় ওইসব জমিতে আলু চাষের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন চাষিরা। অনেকে আলু রোপণের মাঠ পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এঅঞ্চলের মাটি আলু চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় কৃষকরা তুলনামূলক অধিক জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের বিভিন্ন আলু চাষ করে থাকেন। আলু চাষের জন্য কৃষকরা ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। অন্যান্য রবি ফসলের চেয়ে আলু লাভজনক ফসল হওয়ায় বিগত কয়েক বছর ধরে এই অঞ্চলের কৃষকরা আলু চাল করে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি রবি মৌসুমে গত বারের তুলনায় এবারও ৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে অধিক জমিতে আলু চাষাবাদ করা হবে বলে স্থানীয় কৃষি বিভাগ ধারণা করছেন। কৃষকরা তাদের সংরক্ষিত বীজ এবং বিএডিসি’র বীজ সংগ্রহ করা নিয়ে বিভিন্ন কোল্ড ষ্টোরেজ ও বিএডিসি অফিসে ভীড় জমাচ্ছেন। বর্তমানে যেসব জাতের আলুর বীজ সংগ্রহ নিয়ে কৃষক ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন এরমধ্যে রয়েছে, ডায়মন্ড, কার্ডিনাল, দেশীয় জাতের লাল পাকড়ী, পাহাড়ী পাকড়ী, ফাটা পাকড়ী ও গ্যানোলা বীজ উল্লেখযোগ্য। বেশি ফলনের আশায় কৃষকরা এবার এসব বীজ সংগ্রহ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
এছাড়াও আলু থেকে অন্যান্য খাদ্য তৈরির জন্য দেশে শিল্প কারখানাতে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। যার কারণে আলুর মূল্য ও চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। ফলে দেশে আলুর চাহিদা কিছুটা পূরণসহ অর্থনৈতিকভাবে আরো স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য ইতোমধ্যে কৃষকরা আলুর জমিতে আগাম জাতের আমন ধান রোপণ করে কাটা শুরু করেছেন। এসব ধান ঘরে তোলে আলু রোপণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৃষক। অনেকে আলু চাষের জন্য জৈব ও রাসায়নিক সার বাজার থেকে ক্রয় করে মজুদ রেখেছেন।
এনিয়ে কৃষ্ণপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক ও আমশো গ্রামের মামুন মোল্ল্া জানান, তারা প্রতিবছর প্রায় ৫০ থেকে ৬০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করে থাকেন। চালু চাষ করে অনেক অর্থ বৃত্তের মালিক হয়েছেন। রবি মৌসুমের অন্যান্য ফসলের চেয়ে আলুর আবাদ করে তেমন দূর্ভোগ পোহাতে হয় না। কারণ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আলু ব্যবসায়ীরা এই অঞ্চলে এসে কৃষকদের উৎপাদিত আলু জমি থেকেই কিনে নিয়ে যান। যার ফলে কৃষকরা আলু চাষের প্রতি বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এঅঞ্চলে এক সময়ে যেসব কৃষক চরম আর্থিক সংকটে জীবন-যাবন করতেন তারাই আলু চাষ করে তাদের পরিবারে এনেছে সচ্ছলতা।
এনিয়ে তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. হাসানুল কবীর কামালী জানান, আলু চাষের জন্য কার্তিক মাসের ১০ থেকে অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম সপ্তা পর্যন্ত উপযুক্ত সময়। এই সময়ের মধ্যে আলু চাষের জন্য কৃষকরা ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। লক্ষ্যমাত্রার অধিক জমিতে আলু চাষাবাদের প্রস্তুতি নেয়া হলেও বীজের কোন সমস্যা নেই। পর্যাপ্ত পরিমানে বীজ রয়েছে। তবে, তুলনামূলক বীজের দাম বেশি হওয়ায় কৃষকরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *